অনৈতিক কাজের চুক্তির টাকা ছাড়াও চাঁদা দাবী এবং ব্ল্যাকমেইলিং থেকে বাচঁতে হত্যা করা হয় গাজী বকুলকে এমন স্বাীকারোক্তি ১৬৪ ধারায় আদালতে প্রদান করেছেন তরিকুল ইসলাম নামে এক আসামী।
বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় রংপুর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারকের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তিনি। আর এরই মাধ্যমে মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে একেবারে যোগসুত্রহীন ( ক্লুলেস) হত্যার ঘটনার রহস্য উদঘাটিত হয়।
আজ (৯ জানুয়ারী) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মেট্রোপলিটন কোতয়ালী থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই জিয়াউর রহমান জিয়া।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জিয়াউর রহমান জিয়া জানান, রংপুর নগরীর বাস টার্মিনাল এলাকার গাজী বকুল হত্যার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরমধ্যে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আসামি তরিকুল ইসলাম স্বীকার করেছেন। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, নগরীর বাস টার্মিনাল এলাকায় জিসান আহমেদ নামের এক ব্যক্তির বাড়ি ভাড়া নিয়ে তাতে গাজী বকুল নামে এক ব্যক্তি পতিতাবৃত্তি করাতেন।
ঘটনার দিন গত বছরের ২৮ অক্টোবর রাতে নীলফামারী থেকে তরিকুল ও সুজন নামের দুইজন ওই ভাড়া বাসার ফ্ল্যাটে আসেন এবং তারা টাকার বিনিময়ে সেখানে থাকা দুই নারীর সঙ্গে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন। একপর্যায়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সময় গাজী বকুল ও তার সহযোগীরা ওই নারীসহ তরিকুলের বিবস্ত্র ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন এবং তরিকুলের কাছে চুক্তির টাকা ছাড়াও তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেন।
তরিকুল ও সুজন চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে বকুল ধারণকৃত ভিডিও এবং ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। একপর্যায়ে তারা টাকা দেওয়ার কথা স্বীকার করলে একটি কক্ষে আটকে রেখে তাদের টাকা সংগ্রহ করার সুযোগ দেন। এরই মধ্যে রাত গভীর হলে ওই বাড়ি থেকে গাজী বকুলের সহযোগীরা চলে যান। আর এই সুযোগে তরিকুল ও সুজন কৌশলে রুম থেকে বের হয়ে বকুলের মুখ, হাত ও পা বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ওই বাড়ি থেকে পালিয়ে যান।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, মামলাটি গত বছরের ২৯ অক্টোবর তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর পুরোদমে কাজ শুরু করি। হত্যার ঘটনাটি ক্লুলেস ছিল। তথ্য প্রযুক্তির সুত্রের মাধ্যমে একটি ফোন নম্বর পাই। ওই ফোন নম্বরের সূত্র ধরেই এই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে প্রথমে সুজনকে গ্রেফতারে অভিযান চালানো হয়। বাড়িতে সুজনকে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তিতে প্রযুক্তি ব্যবহার করে তরিকুলকে বুধবার (৮ জানুয়ারি) সকালে গ্রেফতার করা হয়। তাকে গ্রেফতারের পর হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন হয়। তার দেওয়া তথ্যের আলোকে জড়িত থাকার অভিযোগে বাড়ির মূল মালিক জিসান আহমেদ ও জাবেদ নামের দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। তরিকুল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা আরও বলেন, তদন্তে উঠে এসেছে ওই বাসায় পেশাদার পতিতা ছাড়াও ছাত্রীদের দিয়ে অনৈতিক কাজ করা হতো। বাড়ির মূল মালিক এবং ভাড়াটিয়া খুন হওয়া বকুল দুইজনই সেখানে পতিতাবৃত্তি করাতেন। শুধু তাই নয়, নির্দিষ্ট চুক্তির বিনিময়ে খদ্দের সংগ্রহ ছাড়াও সুযোগ বুঝে খদ্দেরদের ভিডিও এবং ছবি তুলে তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হতো।
এ বিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী বলেন, নগরীর বিভিন্ন বাসা বাড়িতে এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের খবর পাওয়া গেছে। বিষয়গুলো গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অচিরেই অভিযান পরিচালনা করা হবে।