পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুরে ইউনিয়নে পুর্ব বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ছররা গুলির অভিযোগ, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। ছররা গুলিতে ৪ জন গুরুতর আহতাবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) রাতে চরতারাপুরের কোলচরি এলাকায় গুলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে পুলিশ এখনো কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
আহতরা হলেন- চরতারাপুরের কোলচরী গ্রামের মৃত রহমান প্রামানিকের ছেলে কৃষক মোস্তফা প্রামাণিক( ৪৫), হালিম শেখের ছেলে রিয়াজ শেখ( ২২), তুয়াজ মৃধার ছেলে মিরাজ মৃধা (৩০), সোনাই মন্ডলের ছেলে নঈমুল মন্ডল (২৬)।
অভিযুক্তরা হলো- কোলচরী গ্রামের বাবু প্রামানিকের ছেলে সৈকত হাসান ফিরোজ, বিল্লাল প্রামানিকের ছেলে পারভেজ হোসেন, মৃত উসমান প্রামানিকের ছেলে বাকি বিল্লাহ।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার দুপুরের দিকে কোলচরী জামে মসজিদের বার্ষিক ইসলামী জালসার চাউল উত্তোলন নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরই জের ধরে পরদিন রাত ৮ টার দিকে এলাকার সৈকত হাসান ফিরোজ, পারভেজ ও বাকি বিল্লাহর নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী বাহিনী এলাকার লোকের মধ্যে অতর্কিত হামলা ও গুলি করে। এসময় রনি মন্ডল, মুক্তার মন্ডল, বাবু মন্ডলসহ বেশ কয়েকজনের বাড়িঘর ভাঙচুর করে। তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে নগদ অর্থ লুটপাট করে এসব সন্ত্রাসীরা। এগিয়ে আসলে মোস্তফাকে রড দিয়ে বেধড়ক মারপিট করে মাথায় গুরুতর জখম করে। এরপর ছররা গুলিতে রিয়াজ, মিরাজ নাইমুল গুরুতর আহত হয়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার কয়েকদিন গেলেও পুলিশের পক্ষ থেকে এখনো কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। কয়েকদিন আগেও বন্দুক ঠেকিয়ে একজনকে অপহরণ করে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছিল। এ ঘটনায় আরেকজনের মাথায় এখনো গুলি রয়েছে। তারপরও ওই বন্দুক উদ্ধার ও অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
আহত মোস্তফা প্রামাণিক বলেন, আমি সারাদিন মাঠে কাজ করে এসে সন্ধার পর বাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এসময় ফিরোজের নেতৃত্বে কয়েকজন এসে আমাকে রড দিয়ে মারপিট করে। এরপর গোলাগুলি শুরু হয়। স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে এনে ১৪ টি সেলাই করে। আমিতো কারও কাছে কোন অপরাধ করিনি তাহলে আমাকে মারধর করা হলো কেন। এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
রিয়াজ শেখ বলেন, সন্ত্রাসীরা অতর্কিত গুলি করেছে। ছররা গুলি আমাদের পায়ে লেগে ক্ষত হয়ে আছে। বিকাশের দোকান থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকাসহ মালামাল লুট করেছে। এসব ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
চরতারাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মো: রহমত আলী বলেন, তাদের মধ্যে সংঘর্ষ হলে তাদের মাঝখানে গিয়ে থামানো হয়। এ ধরনের সংঘর্ষ কোনভাবেই কাম্য নয়। তবে সেখানে কোন গুলির ঘটনা ঘটেনি। শুধু মারামারি হয়েছে। এ ঘটনা নিয়ে সবাইকে বসে ঠিক করে দেওয়া হবে।
সুজানগর পৌর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব জসিম বিশ্বাস বলেন, আসলে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের মত ঘটনা ঘটেছে। একটি মহল এলাকাকে অস্থিতিশীল করার জন্য পায়ঁতারা করতেছে। দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছি।
অভিযুক্ত সৈকত হাসান ফিরোজের বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোন রিসিভ করেননি। এজন্য বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সুজানগর উপজেলা স্বাস্থকম্প্রেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ওয়াসিম খান বলেন, রোগী আমাদের এখানে ভর্তি হয়ে আছে। একজনের মাথায় ১৪ টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। মুটামুটি এখন কিছুটা সুস্থ আছেন। তারপরও যদি অবস্থার অবনতি দেখি তাহলে রাজশাহী রেফার্ড করা হবে।
পাবনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম বলেন, ঘটনায় এখনো কোনপক্ষ লিখিত অভিযোগ দিছে কিনা জানা নাই। লিখিত অভিযোগ হাতে পেলে ব্যবস্থা নেওয়া যেত। তবে এলাকা শান্ত রয়েছে। গুলির কোন ঘটনা ঘটেনি। তবে ককটেল ও ফটকা বোম ফুটানোর ঘটনা ঘটেছে। কয়েকজন সাংবাদিক ছাড়া কেউ গুলির ঘটনা বলতে পারেনি। এলাকা শহর থেকে ৩০ কিলো দুরে হওয়াতে জনবল সংকটে অনেক সময় কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে।