আমরা প্রায়ই বলি "শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ"। এ শিশুর ‘বর্তমান’কে অর্থবহ করতে আমরা আসলে কী করছি? যদি বলি, আমাদের দেশের পরিবেশটা পুরোপুরি শিশুবান্ধব না। শিশুর বিকাশের জন্য যে পরিবেশ, পারিবারিক ও সামাজিক আবহ দরকার তার যেমন অভাব, তেমনি শিশুর প্রতি নির্মমতাও সব শ্রেণির মধ্যেই দেখা যায়। বাংলাদেশে কর্মজীবী শিশু আছে, পথশিশু আছে, গৃহকর্মী শিশু আছে, ঝঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশু আছে এবং আছে অটিস্টিক শিশুও।
বেঁচে থাকার তাগিদে বহু দরিদ্র শিশু তাদের বিকাশের অধিকার, জীবনযাত্রার মান ভোগ, বিনোদনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমনকি পরকীয়ার শিকার হচ্ছে শিশু। শিশুদেকে ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য করা হচ্ছে। এক শ্রেণির মানবরূপী পশু শিশুদের বলৎকার বা ধর্ষণ করছে। সব মিলিয়ে ভালো নেই আমাদের শিশুরা। আমরা মানুষরাই তাদেরকে ভালো থাকতে দিচ্ছি না। শিশুদের এ অবস্থা থেকে রক্ষার আইন আছে কিন্তু বাস্তবায়ন হচ্ছে কম।
সাধারণত বিশ্ব শিশু দিবস ছাড়া শিশুদের অধিকারের কথা বলার দিন আর চোখে পড়ে না বললেই চলে। এভাবেই গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন ছুড়ে শিশুদের নিয়ে কথা বলছিল পটুয়াখালী লাল সবুজ সোসাইটি'র ভলান্টিয়ার এস.এম.সোহান।
বাংলাদেশের ইয়ুথ লিড অর্গানাইজেশন এর মধ্যে লাল সবুজ সোসাইটি বেশ পরিচিত। সাম্প্রতি লাল সবুজ সোসাইটি পটুয়াখালী টিম ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এর যৌথ উদ্যোগে "যুবদের সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে শিশুদের সুরক্ষা" (SAFEGUARDING CHILDREN BY ENGAGING YOUTH) প্রোজেক্টে ২ মাসেরও কম সময় ৩৬ টি কাজ করে বেশ সারা ফেলেছেন।
যার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য ছিলো বিভিন্ন স্কুলে শিশু সুরক্ষা মেলা,শিশু সুরক্ষা কমিটি ও পথ নাটক।
সরজমিনে খোঁজ খবর নিতে গেলে দেখা যায়, পটুয়াখালীর একদল তরুণ যুবক স্কুল মাঠে বিশাল কর্মযোগ্য করেছে। যে যার মতো কাজ করছে কাউকে কিছু বলে দিতে হচ্ছে না। কারো কোনো অভিযোগ ও নেই। এ যেন ভলান্টিয়ার এর বাস্তব অভিজ্ঞতার সাক্ষী হলাম। বলছিলাম বিদ্যালয়ের শিশু সুরক্ষা মেলার কথা।
শিক্ষার্থীদের দক্ষতা ও সচেতন করতে নাচ গান,কুইজ,খেলা, বিতর্ক সাথে শিশু সুরক্ষা স্টল। যেখানে উপস্থিত শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, অতিথি।
এ বিষয় শিক্ষক ও অভিভাবক এর মতামত যানতে চাইলে তারা জানান, খুবই সুন্দর উদ্যোগ। এমন আয়োজন এর মধ্যেমে সচেতনতার বার্তা তারা খুব ভালো ভাবে পৌঁছে দিচ্ছে। লাল সবুজ সোসাইটি ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন কে ধন্যবাদ এমন পদক্ষেপ নেয়ার জন্য।
অতিথি ইউনিয়ন সমাজকর্মী আইরিন সুলতানা জানান, ছোট থেকেই যদি শিশু তাদের অধিকার এর কথা ও অভিভাবকদের সচেতনতা সৃষ্টি করা যায় তবেই এদেশ সুন্দর হবে।
শিশুদের জন্য সরকার কতো কি করেছে তা সুফল সকল শিশুর ভোগ করা উচিত। ভলান্টিয়াররা যেভাবে হেল্পলাইন এর ব্যবহার ও সচেতনতা করছে তা আসলেই প্রশংসনীয়।
ইউনিয়ন ভলান্টিয়ার প্রশান্ত চন্দ্র দাস বলেন, আসলে কোনো শিশু জন্ম নেয়া মানেই একটা সম্ভাবনা, একটা স্বপ্ন। জন্ম নেওয়া সেই সম্ভাবনা, সেই স্বপ্নকে সফল করতে পারে রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার। কারণ শিশু হচ্ছে একটি বীজ, একটি চারাগাছ, কাদামাটি। অপার সম্ভাবনার অধিকারী। আজ যারা শিশু, কাল তারাই বিশ্বের নেতৃত্ব দেবে। আজ যারা বিখ্যাত ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তারাও একদিন শিশু ছিলেন।
শিশুদের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং তাদের অংশগ্রহণে বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও কর্মশালা আয়োজন করছি, যাতে তারা তাদের অধিকার এবং সুরক্ষার বিষয়ে জানে এবং বোঝে।
এ বিষয় প্রজেক্ট অফিসার মোঃ ইসরাফিল জানান, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এর উদ্যোগে আমরা প্রথমত তিন ইউনিয়নে কাজ শুরু করি। দু মাসে চার হাজার সুবিধাভোগীর কাছে আমারা পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের প্রশিক্ষিত ভলান্টিয়াররা বেশ ভালো কাজ করছে। সামনে আরো বড় পরিসরে কাজ করো আশা করি।
আসুন, আমরা একসঙ্গে এই ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়াই, যেখানে কোনো শিশু শোষিত হবে না, আর কোনো শিশু তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না। শুধুমাত্র একটি সমাজ নয়, বরং একটি পৃথিবী গড়ে তুলতে হবে, যেখানে প্রতিটি শিশুর ভবিষ্যৎ রঙিন, সুরক্ষিত এবং নিরাপদ হবে।