হাসিনা সরকারের ফরমায়েশী রায় বিগত ৫ বছর ধরে ফাঁসি, যাবজ্জীবন ও দশ বছর কারাদন্ডের আদেশে কারাবন্দি থাকা পাবনার ঈশ্বরদী বিএনপির ৪৭ নেতাকর্মীর খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন উচ্চ আদালত। এই কারণে প্রিয় নেতাদের মুক্তির ঘটনায় ঈশ্বরদীতে আনন্দ মিছিল, পথসভা ও মিষ্টি বিতরণ করেছেন সমর্থকরা।
আজ (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পাবনার ঈশ্বরদীতে উপজেলা, পৌর বিএনপিসহ সহযোগি সংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থকরা এই আনন্দ মিছিলে অংশ নেন ও মিষ্টি বিতরণ করেন।
আনন্দ মিছিল শেষে পথ সভায় বিএনপি নেতারা বলেন, আজ সত্যের বিজয় হয়েছে। ঈশ্বরদীতে বিএনপির নেতৃত্বকে ধ্বংস করতে খুনি শেখ হাসিনাকে সন্তুষ্টু করতে বিচারক রুস্তম আলী ফরমায়েশী রায় দিয়েছিল। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর আজ আমরা ন্যায় বিচার পেয়েছি। আমাদের প্রিয় নেতৃবৃন্দ মিথ্যা মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন।
আনন্দ মিছিল শেষে পথ সভায় বক্তব্য দেন ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এসএম ফজলুর রহমান, বিএনপি নেতা জাহিদুর রহমান পাতা, বিষ্টু সরকার, সাহাবুদ্দিন সেন্টু, আক্তার হোসেন নিফাসহ প্রমুখ।
মামলা সুত্রে জানা যায়, বিগত তিন দশক আগে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে কথিত হামলা ও গুলিবর্ষনের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় গত ২০১৯ সালের ৩ জুলাই চাঞ্চল্যকর ও বহুল আলোচিত সরকারের ফরমায়েশী রায় দেন পাবনার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-১-এর বিচারক রুস্তম আলী।
এই ফরমায়েশী রায়ে স্থানীয় বিএনপির মোট ৫২ জন নেতাকর্মীর মধ্যে ৯ জনকে ফাঁসি, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ১৩ জনকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়। মামলায় মৃত্যুদন্ড আদেশপ্রাপ্তরা হলেন-তৎকালীন ছাত্রদল নেতা বর্তমানে ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঈশ্বরদী পৌরসভার সাবেক মেয়র মকলেছুর রহমান বাবলু, পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাবেক প্যানেল মেয়র শামসুল আলম, পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি এ.কে.এম আখতারুজ্জামান, বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান পলাশ, ঈশ্বরদী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম ভিপি শাহিন, বিএনপি নেতা শহিদুল ইসলাম অটল, উপজেলা যুবদলের সভাপতি আজিজুর রহমান শাহিন, ছাত্রনেতা মোস্তফা নুরে আলম শ্যামল।
যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ২৫ জন হলেন-আমিনুল ইসলাম আমিন, আজাদ হোসেন খোকন, ইসমাইল হোসেন, আলাউদ্দিন বিশ্বাস, শামসুর রহমান শিমুয়া, আনিছুর রহমান ওরফে সেকম, নুরুল ইসলাম আক্কেল, মো. রবি, এনাম, আবুল কাশেম, কালা বাবু, মামুন, মমিন ওরফে মামুন, সেলিম আহমেদ, কল্লোল, তুহিন, শাহ আলম লিটন, আবদুল্লাহ আল মামুন, তাহাজুল ইসলাম লাইজু, আবদুল জব্বার, পলাশ, আবদুল হাকিম টেনু, আলমগীর, আবুল কালাম আজাদ ও এ.কে.এম ফিরোজুল ইসলাম পায়েল।
১০ বছর করে সশ্রম কারাদন্ডপ্রাপ্ত ১৩ জন হলেন-ইউপি চেয়ারম্যান নেফাউর রহমান ভিপি রাজু, আজমল হোসেন ডাবলু, আনোয়ার হোসেন জনি, রনো, বরকত আলী, চাঁদ আলী, এনামুল কবীর, মোক্তার, হাফিজুর রহমান মুকুল, হুমায়ুন কবীর দুলাল, জামরুল, তুহিন বিন সিদ্দীক ও ফজলুর রহমান প্রামাণিক। বিচার চলাকালীন মারা যাওয়া আসামিরা হলেন এহতেশাম, আলমগীর হোসেন, ওসিয়া, জাবেদ করিম খাকন ও আলমগীর হোসেন।
আর রায়ের পর কারাগারে মারা যান কমিশনার আব্দুল হাকিম টেনু ও ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ। জামিনে এসে মারা যান উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক তাহাজুল ইসলাম লাইজু ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নেফাউর রহমান রাজু।
এর আড়ে গত ২৭ আগষ্ট/২৪ দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্টের আপিল বিভাগের বিজয়-৭১ এর ১১ আদালতের যৌথ বেঞ্চের বিচারক এএসএম আব্দুল মবিন ও বিচারক মো. মাহমুদ হাসান তালুকদার শুনানি শেষে এই মামলার ঈশ্বরদী বিএনপির ৩৭ নেতাকর্মীকে জামিনে জামিন দেন।