ছবিঃ সংগৃহীত।
চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রি কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদানে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে গভর্নিং বডির নীতিমালা বিরোধী সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে শিক্ষক, কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীরা। আজ (১২ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় কলেজ চত্বরে তারা মানববন্ধন করে। এ সময় তারা অধ্যক্ষের কক্ষে তালা দিয়ে ক্লাস বর্জন করেন। এরপর চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে আবারও তারা মানববন্ধন করেন। মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে নীতিমালা বহির্ভূত নিয়োগের অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার পর অধ্যক্ষের কক্ষ কোলাপসিবল গেটে তালা লাগিয়ে দেন শিক্ষক-কর্মচারীর। ওই সময় প্রকৃত দাবিদার চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজের বিএম শাখার সহকারী অধ্যাপক মোসা: নাজনীন আরা খাতুন সহ বেশ কিছু শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবি তোলেন। এ প্রতিবাদের অংশ হিসেবে বুধবার বেলা সাড়ে ১০টায় চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজ চত্বরে শিক্ষক-কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীরা মানববন্ধন করে। এরপর বেলা ১২টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আবারও কলেজের বিএম শাখার সহকারী অধ্যাপক মোসা: নাজনীন আরা খাতুনের নিয়োগের দাবি তোলেন।
মানববন্ধনে
কলেজের শিক্ষার্থী উজ্জ্বল হোসেন জানান, জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে বিএম শাখার সহকারী অধ্যাপক
মোসা: নাজনীন আরা খাতুনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ না দিয়ে নিয়ম বর্হিভুতভাবে
শামীমা সুলতানাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আমরা বৈষ্যমের কারণে ৩৬ জুলাই ৫ আগস্ট এতো রক্ত
দিলাম তার কোন মূল্য থাকছে না। আমরা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চাই। যে কারণে কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী
ও ছাত্র-ছাত্রীরা মানববন্ধন করতে বাধ্য হয়েছি। দেশের সকল স্থানে যখন বৈষম্যহীনভাবে
চলছে তখন আমাদের কলেজে কেন এই বৈষম্য? বৈষম্যহীন বাংলাদেশে নীতিমালায় যেভাবে ভারপ্রাপ্ত
অধ্যক্ষ নিয়োগ হওয়ার কথা সেভাবেই দিতে হবে। যিনি যোগ্য তাকেই এ দায়িত্ব দিতে হবে। কেন
যোগ্যকে বাদ রেখে আরেকজনকে দায়িত্ব দেয়া হবে?
একই কলেজের
আরেক শিক্ষার্থী বিথি খাতুন জানান, আমরা আর কোনো বৈষম্য চাই না। নিয়মের ভিত্তিতে যিনি
প্রথম নাজনীন ম্যাডাম, আমরা চাই উনাকেই আমাদের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেয়া
হোক। উনি আমাদের চোখে আদর্শ একজন শিক্ষক। উনি আমাদের যথেষ্ট পরিমাণে ভালোবাসেন। উনার
প্রতি আমাদের অনেক শ্রদ্ধা। যিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে বিদায় নিলেন আমরাই চাই
তার মতো আরেকজন দায়িত্ব নিক। যেই ভিত্তিতে নাজনীন ম্যাডাম বেস্ট। আমাদের একটাই দাবি
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নাজনীন ম্যাডামকে দায়িত্ব দিতে হবে। তা না হলে কলেজের প্রতিটি
শিক্ষার্থী কঠোর সিদ্ধান্তে যাবে। আমরা এর থেকে বড় অবরোধে যেতে বাধ্য হব।
কলেজের শিক্ষক
আব্দুল কুদ্দুস রতন জানান, আমি যতদূর জানি জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়মমাফিক ভারপ্রাপ্ত
প্রিন্সিপ্যাল নিয়োগ দেয়ার কথা। আমরা ইতোমধ্যে শুনেছি ডিসি স্যার জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে
প্রথম ব্যক্তিকে না দিয়ে দ্বিতীয় ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমরা এ জন্য মানববন্ধনের
আয়োজন করেছি। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত
কঠোর আন্দোলন
চালিয়ে যাবো। আমাদের ক্লাস বর্জন থাকবে। এছাড়া যেখানে যেখানে চিঠি দেয়ার কথা সেখানে
দেয়া হবে। ডিসি স্যারের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হবে। আমরা চাই বর্তমান প্রিন্সিপ্যাল
আবু রাশেদ
স্যার আজ
অবসরে যাবেন। নিয়ম অনুযায়ী আজকে উনি একজনকে দায়িত্ব দিয়ে যাবেন। শুনেছি ডিসি স্যার
একক সিদ্ধান্তে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে যিনি দ্বিতীয় আছেন তাকেই দায়িত্ব দিতে চাচ্ছেন।
আমরা এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমরা চাই সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নিয়মমাফিক কলেজটি
চলুক। যিনি ওই চেয়ারের দাবিদার তিনি যেনো চেয়ারে বসতে পারেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও
মাউশির নিয়ম অনুযায়ী নাজনীন ম্যাডাম প্রথমে আছেন আমরা চাই তাকেই দায়িত্ব দেয়া হোক।
আমরা ৫জনের নাম ডিসি স্যারের কাছে জমা দিয়েছে। সেক্ষত্রে সিনিয়র হিসেবে নাজনীন ম্যাডাম
দাবিদার। প্রথম দাবিদারকে বাদ দিয়ে দ্বিতীয়জনকে দায়িত্ব কীভাবে দিলেন এটা আমরা বোধগম্য
নয়। আমি আশা করি ডিসি স্যার অভিজ্ঞ মানুষ তিনি ন্যায় বিচারের দায়িত্ব পালন করবেন। আমরা
এ ঘটনার সুবিচার চাই। আমরা চাই যোগ্য প্রিন্সিপ্যালের নেতৃত্বে কলেজ আরও সুনাম অর্জন
করুক।
আরেক শিক্ষক
কুতুব উদ্দীন জানান, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়ম হওয়ায় প্রশাসনিক ভবনে
তালা দেয়া হয়েছে এবং ক্লাস বর্জন করা হয়েছে। যতদিন আমাদের দাবি না মানা হবে ততদিন তালা
বন্ধ থাকবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী বলা হয়েছে অত্র প্রতিষ্ঠানে কর্মরত,
সেখানে কোথায় শাখার উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু আমাদের বলা হচ্ছে নাজনীন ম্যাডাম বিএম
শাখার, বিএম শাখায় তো কোনো প্রিন্সিপ্যাল নেই। তিনি তো এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। জাতীয়
বিশ্ববিদ্যালয় ও মাউশির নীতিমালা অনুযায়ী নাজনীন ম্যাডামই যোগ্য।
বর্তমান অধ্যক্ষ
মো. আবু রাশেদ জানান, গতকাল (১১ ফেব্রুয়ারি) গভনিং বডির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কলেজের সিনিয়র
লেকচারার শামীমা ম্যাডামকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। গভনিং বডি
যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেনকলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে আমি সেটি কার্যকর করবো। আজ এই কলেজে আমার
শেষ কর্মদিবস। কাল হয়তো এই কলেজে আমি আর আসবো না। গভনিং বডি যে সিদ্ধান্ত নেয় প্রিন্সিপাল
হিসেবে আমার দায়িত্ব সেটি কার্যকর করা। আমাদের নিয়ম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক।
সেখানে বলা হয়েছে যে সমস্ত সাবজেক্টগুলো অ্যাবিলেশনপ্রাপ্ত সেটির মধ্যে যিনি সিনিয়র
তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করবেন। সেক্ষেত্রে দাবিদার কলেজের শিক্ষক শাপলা
খাতুন এবং দ্বিতীয় হলেন তৌহিদুজ্জামান টিপু। আমাদের যে নিয়ম এখানে কিছু কন্টিডেকশন
আছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এক ধরণের ব্যাখ্যা দিচ্ছে অপরদিকে মাউশি এক ধরণের ব্যাখ্যা
দিচ্ছে।
মাউশি বলছে,
ইন্টারমিডিয়েট কলেজের ক্ষেত্রে যিনি সিনিয়র তিনিই অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করবেন। সেক্ষেত্রে
শামীমাকে যদি দেয়া হয় তাহলে আইনের কোনো ব্যতয় ঘটেনি। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের
ভিত্তিতে এখানে আইনের ব্যতয় ঘটেছে। তাহলে কী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অবৈধ?
এ প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, না জাতীয় বিশ্ববিদ্যলয়ের নীতিমালা অবৈধ না কিন্তু আমি
তো গভনিং বডির চাকরি করি। উনারা যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটিই আমি কার্যকর করবো।
পদবঞ্চিত সহকারী
অধ্যাপক (বাংলা) মোসা: নাজনীন আরা খাতুন বলেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী আমি যোগদানে
জ্যৈষ্ঠ, জন্ম তারিখ অনুযায়ী জ্যেষ্ঠ ও অভিজ্ঞতার দিক সহ সকল বিষয়ে জ্যেষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও
আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। তিনি আরো বলেন, বেসরকারি
শিক্ষা ব্যবস্থাপনা নীতিমালার ১১.২৫ অনুচ্ছেদে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, এমপিও ভুক্ত উচ্চ
মাধ্যমিক বিদ্যালয়/ উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ এর প্রধান শিক্ষক/ অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে
মাদ্রাসা /কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রভাষক (সাধারণ) জ্যৈষ্ঠ প্রভাষক (সাধারণ)
সহকারি অধ্যাপক (সাধারণ) এর পূর্বের এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা বিধি
মোতাবেক গণনা যোগ্য হবে।
এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম জানান, নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের জন্য যেটি সঠিক হবে আমরা সেটিই করবো। কে তালা দিলো, কে আন্দোলন করলো, কী দাবি-দাওয়া এটি আমরা শুনেছি। নীতিমালা পর্যালোচনা ইতোমধ্যে একবার করা হয়েছে। যেহেতু তারা দাবি-দাওয়া তুলেছে প্রয়োজন হলে আবার বসে যথাযথ সময়ে প্রতিষ্ঠানের জন্য যেটা মঙ্গলজনক হবে সেটিই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এদিকে, গণপ্রজাতন্ত্রী
বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ বেসরকারি মাধ্যমিক-৩ শাখা
সচিবালয় ঢাকার সর্বশেষ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪-এর পরিপত্রের 'গ' ধারা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি
উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ হলে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সরকারি শিক্ষক/ জ্যৈষ্ঠ প্রভাষক/ সহকারী
অধ্যাপকদের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠতম সহকারী শিক্ষক/ জ্যেষ্ঠতম জৈষ্ঠ প্রভাষক/জ্যৈষ্ঠ সহকারী
অধ্যাপককে দায়িত্ব প্রদান করতে হবে।একই পরিপত্রের ‘ঘ' ধারায় বর্ণিত
আছে, জ্যেষ্ঠতম সহকারী শিক্ষক/জ্যেষ্ঠতম জ্যেষ্ঠ প্রভাষক/জ্যেষ্ঠতম সহকারী অধ্যাপক
নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রথম এমপিওভুক্তির তারিখ, একই তারিখে এমপিওভুক্ত হলে যোগদানের
তারিখ এবং যোগদানের তারিখ একই হলে বয়সের দিক থেকে বয়োজ্যেষ্ঠ শিক্ষককে জ্যেষ্ঠতম গণ্য
করতে হবে। একইভাবে একই বয়সের দুই জন হলে উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষককে
জ্যেষ্ঠতম গণ্য করতে হবে।
উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজ সূত্রে জানা গেছে, কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ মো. আবু রাশেদ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ (বুধবার) অবসরে যাবেন। অবসর জনিত অধ্যক্ষের শূন্যতা পুরণে কলেজ পরিচালনা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে অপেক্ষাকৃত জুনিয়র শামীমা সুলতানাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh