× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা জামায়াত বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

রাবির ভর্তি পরীক্ষা

ভুতুড়ে আসনবিন্যাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

রাজশাহী ব্যুরো।

০৬ মার্চ ২০২৫, ১৬:৩০ পিএম

ছবিঃ সংগৃহীত।

ভর্তি পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও চট্টগ্রাম—এই পাঁচ বিভাগীয় শহরে নেওয়ার উদ্যোগ নেয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে পরীক্ষার্থীদের সীমাহীন ভোগান্তিতে ফেলে এক ‘ভুতুড়ে’ আসনবিন্যাস প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

আসনবিন্যাসে দেখা গেছে, কেন্দ্র পছন্দক্রমের প্রথমে থাকা সত্ত্বেও রংপুর অঞ্চলের অনেক পরীক্ষার্থীর আসন পড়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। একইভাবে চট্টগ্রাম অঞ্চলের অনেক পরীক্ষার্থীর আসন পড়েছে ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। এমনকি রাজশাহীর পরীক্ষার্থীর আসনও পড়েছে ঢাকায়।

এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, তাদের বাড়ি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায়। অথচ তার মেয়ের আসন পড়েছে ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এমন ভুতুড়ে আসনবিন্যাস প্রকাশিত হওয়ার পর ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলছেন, কেন্দ্র পছন্দের তালিকায় প্রথমে থাকা সত্ত্বেও সেই কেন্দ্র বাদ দিয়ে অন্যান্য কেন্দ্রে তাঁদের পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এতে তাঁদের ভোগান্তি কমার চেয়ে উল্টো বেড়েছে। ভুতুড়ে এই আসনবিন্যাস বাতিল করে নতুন আসনবিন্যাস প্রকাশের দাবি করছেন তাঁরা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, শিক্ষার্থীদের কেন্দ্র পছন্দের তালিকা অনুযায়ী কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পছন্দ তালিকার প্রথম কেন্দ্রে আসন পূরণ হওয়ার পর পরবর্তী কেন্দ্রে তাঁর সিট পড়েছে। সিটপ্ল্যান পরিবর্তন করতে হলে পুরো ভর্তিপ্রক্রিয়াকে পুনরায় সাজাতে হবে। সে ক্ষেত্রে হয়তো পরীক্ষার তারিখও পরিবর্তন করতে হতে পারে। তাই সিটপ্ল্যান পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টা থেকে ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র ডাউনলোড করার সুযোগ দেওয়া হয়। প্রবেশপত্র ডাউনলোডের পর আসনবিন্যাসের বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে সমালোচনা শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষাকেন্দ্র’ নামক একটি গ্রুপে অভিযোগ করে ভর্তি-ইচ্ছুক পরীক্ষার্থীরা লেখেন—‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিটপ্ল্যান বাতিল চাই, শিক্ষার্থীদের সুবিধা অনুযায়ী নতুন করে সিটপ্ল্যান দিতে হবে।’

ওই ফেসবুক গ্রুপে জিকরা নিহা নামের এক পরীক্ষার্থী লিখেছেন, ‘আমার বাসা ঝিনাইদহে। একজন মেয়ে হয়ে আমার পক্ষে ঝিনাইদহ থেকে চট্টগ্রাম গিয়ে পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে না। এত টাকা দিয়ে আবেদন করার পর আবার অত দূর অনেক টাকা দিয়ে জার্নি করাটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি বেশি দূরে জার্নি করতে পারি না, অসুস্থ বোধ করি। এ ছাড়া এত টাইম জার্নি করার পর পরীক্ষার হলে বসে পরীক্ষা দেওয়াটা কারোও পক্ষে সম্ভব নয়। এটা আমাদের জন্য অনেক হয়রানি। তাই সব দিক বিবেচনা করে আমাদের প্রত্যেক স্টুডেন্টের মতামত অনুযায়ী পছন্দের বিভাগে সিট দেওয়া উচিত।’

রওনক জাহান রোজি নামের এক পরীক্ষার্থী লিখেছেন, ‘আমার বাড়ি বগুড়া হলেও পরীক্ষার সিট পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখান থেকে রাজশাহীতে যেতে ৩ ঘণ্টা লাগে, কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনেক বেশি দূরে হয়ে যায় এবং থাকার জায়গা নিয়েও চিন্তায় পড়ে গেছি। অঞ্চলভেদে সিটপ্ল্যান করা উচিত ছিল। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে এই সিটপ্ল্যান নতুন করে প্রণয়ন করা উচিত।’

শিমুল ইসলাম নামের এক পরীক্ষার্থী লিখেছেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ছাত্রদের ভোগান্তি কমাতে গিয়ে উল্টো অনেকের ভোগান্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। এটাই বাস্তব।’

‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ’ নামক এক ফেসবুক গ্রুপে কাওসার আহমেদ নামের এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘রাজশাহীর শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেবে খুলনা বিভাগে। প্রশাসনের এটা কী ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত? শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে পরীক্ষার সুযোগ দেওয়ার মূল উদ্দেশ্য কী? এতে করে প্রশাসন কী অর্জন করল জানতে চাই? শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি বৃদ্ধি কি তাদের উদ্দেশ্য?’

এমন ভুতুড়ে আসনবিন্যাসের সমালোচনা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার লিখেছেন, ‘যে খুলনা কেন্দ্র চয়েজ দিয়েছে, তার এক ইউনিটে পড়েছে রাজশাহী, এক ইউনিটে ঢাকা, অন্য ইউনিটে চট্টগ্রাম! মানে সিরিয়াসলি? এটা কী হযবরল করেছে রাবির আইসিটি সেন্টার! এ তো নতুন ভোগান্তি চালু করা হচ্ছে। যেখানে ভর্তি পরীক্ষার ডিসেন্ট্রালাইজেশনের মূল উদ্দেশ্যই শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমানো। এ সমস্যার সমাধান বিশ্ববিদ্যালয়কে সময় নিয়ে হলেও করতে হবে। ভর্তি পরীক্ষার এখনো অনেক সময় বাকি। শিক্ষার্থীদের সাথে এটা নতুন প্রহসন।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারের পরিচালক ড. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘অনেকেই পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রথমে রেখেছে, কিন্তু আমাদের আসনসংখ্যা সীমিত। এ কারণে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সিট পূর্ণ হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের এইচএসসির ফলাফল সাপেক্ষে সিটপ্ল্যান করা হয়েছে।’

এই সিটপ্ল্যান পরিবর্তন বা সংস্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষা পুরো একটা প্রসেসের মাধ্যমে হয়। সিটপ্ল্যান পরিবর্তন করতে হলে পুরো প্রসেস আবার সাজাতে হবে। সে ক্ষেত্রে হয়তো পরীক্ষার তারিখও পরিবর্তন করতে হতে পারে। এদিকে শিগগির ক্যাম্পাস ছুটি হয়ে যাবে, তাই সময়ও কম। তবে এ বিষয়ে ভর্তি পরীক্ষাবিষয়ক কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে।’

এ বিষয়ে সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সিটের সংখ্যা কম থাকায় শিক্ষার্থীদের এই ভোগান্তি হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের কেন্দ্র পছন্দের তালিকা অনুযায়ী কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পছন্দের তালিকার প্রথম কেন্দ্রে আসন পূরণ হওয়ার পর পরবর্তী কেন্দ্রে তার সিট পড়েছে। এটা অবশ্যই শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কারণ। এই সিটপ্ল্যান আর পরিবর্তন করার সুযোগ দেখছি না।’

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.