মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সূর্যমুখী ফুল চাষে লাভের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। স্বল্প খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ বেড়েছে উপজেলায়।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর ইউনিয়নের পশ্চিম লইয়ারকুল এবং কালাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম মাজদিহি গ্রামে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সুর্যমুখী চাষ করা ক্ষেতে এখন ফুলের সমারোহ। সহস্রাধিক সূর্যমুখী ফুল পূর্ণতা নিয়ে বাতাসে দোলা খাচ্ছে। সবুজ পাতার আড়ালে মুখ উচুঁ করে আছে সূর্যমুখী। সূর্যমুখীর হাঁসিতে হাসছে মাঠ। চারিদিকে সবুজের মাঝে হলুদের সমারোহ। আর এই হলুদ প্রকৃতিকে করেছে আরোও লাবন্যময়। সূর্য যেদিকে ফুলের মুখও সেদিকে। তাই এটাকে সূর্যমুখী বলে। নয়নজুড়ানো এ দৃশ্য মোহিত করছে সবাইকে। প্রতিদিন আশপাশ এলাকা থেকে সৌন্দর্য পিয়াসুরা দল বেঁধে আসেন সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে।
উপজেলার ভূনবীর ইউনিয়নের পশ্চিম লইয়ারকুল এলাকার মৃত আব্দুর রাজ্জাক এর ছেলে মো. খলিল মিয়া (৫০) তার নিজ জমিতে এবার সূর্যমুখী চাষ করছেন। আলাপকালে তিনি বলেন, গত বছরও আমি সূর্যমুখী চাষ করেছিলাম, কিন্তু ঝড়-তুফানে ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় লোকসানের শিকার হই। তাই এবার ৭ শতক জমিতে আমি সূর্যমুখী চাষ করি। গত ডিসেম্বর মাসে আমি চাষ শুরু করি। কৃষি অফিস থেকে আমাকে বীজ ও সার দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত আমি ক্ষেতে প্রায় আড়াই হাজার টাকা খরচ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। তবে প্রতিদিন ভোরে টিয়া পাখি এসে বীজ খেয়ে ফেলে। এরপরও আমি আশাবাদি এই ক্ষেত থেকে দুই-তিন মন বীজ সংংগ্রহ করে বিক্রি করতে পারবো। বাজারে বীজের দাম বাড়তি থাকলে লাভবান হওয়ার আশা করছেন তিনি।
মো. খলিল মিয়া পেশায় একজন কৃষক। ৫ মেয়ে এবং ১ ছেলের জনক তিনি। পশ্চিম লইয়ারকুল গাউছিয়া জামে মসজিদে দীর্ঘদিন থেকে তিনি মুয়াজ্জিনের দায়িত্বও পালন করছেন বলেও জানান। মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এবার ২২ শতক জমিতে গম ও ৭ শতক জমিতে সূর্যমূখী চাষ করে লাভের স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
কালাপুর ইউনিয়নের পূর্ব মাজদিহি গ্রামের তাজ মিয়ার ছেলে সূর্যমুখী চাষি জালাল আহমেদ (৩৫) বলেন, এবার আমি ২০শতক জমিতে সূর্যমূখী চাষ করেছি। ডিসেম্বর মাসে সূর্যমখীর বীজ রোপণ করেছিলাম, এখন বিজ সংগ্রহের সময় হয়েছে। এ পর্যন্ত মাত্র-১৫শ থেকে ২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আলহামদুল্লিাহ,ভালো ফলন হয়েছে। তবে এলাকার গরু-ছাগলে কিছিুটা ক্ষতি করে ফেলেছে। এরপরও আশা করি ১০-১২ মন বীজ সংগ্রহ করতে পারবো। দাম ভালো থাকলে অল্প খরচে অধিক লাভবান হতে পারবো এবং আগামী বছর আরও পরিসরে চাষ করার পরিকল্পনা আছে। তবে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর থেকে আমাকে বীজ ও সার দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে। সূর্যমুখী চাষিরা জানান, সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে তেল ও খৈল হয়। ফুলের ক্ষেতে মৌচাক বসিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মধুও সংগ্রহ করা যায়। এছাড়া শুকিয়ে যাওয়া গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। সূর্যমুখী বীজ বপনের ৯০ থেকে ১০৫ দিনের মধ্যেই ফুল থেকে বীজ ঘরে তুলতে পারেন। চাষিদের মতেকম খরচে ও অতি অল্প সময়ে সুর্যমুখী ফুল চাষ করে অধিক লাভবান হওয়া যায়। এ ফসল চাষে কম খরচে বেশি লাভবান হওয়ায় অন্যান্য চাষিরাও সুর্যমুখী চাষে আগ্রী হচ্ছেন। আগামীতে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় সুর্যমুখী চাষ আরও বাড়বে বলে চাষিরা বলছেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, অল্প সময়ে কম পরিশ্রমে ফসল উৎপাদন ও ভালো দাম পাওয়া যায় বলে কৃষকরা এখন সূর্যমুখী চাষ করছেন। প্রতি বিঘা জমিতে ১ কেজি বীজ দিতে হয়। দেড় ফুট অন্তরর অন্তর একটি করে বীজ বপন করতে হয়। একটি সারি থেকে আরেকটি সারির দূরত্ব রাখতে হয় দেড় ফুট। মাত্র ৮৫ দিয়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ হয়। যা অন্য কোনো ফসলের চেয়ে কম পরিশ্রমে ভালো আয়। এছাড়া সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে উৎপাদিত তেল কোলেস্টেরল মুক্ত ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় বাজারে এ তেলের চাহিদাও বেশি।
শ্রীমঙ্গলের কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আলাউদ্দিন জানান, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে ছয় থেকে সাড়ে ছয় মন সূর্যমুখী ফুলের বীজ পাওয়া যাবে। কৃষকদের স্বাবলম্বী করতেই সূর্যমুখী ফুল চাষে উৎসাহিত করা হয়েছে। আগামীতে সূর্যমুখীর চাষ অনেক বাড়বে বলেও জানান তিনি।