পেঁয়াজের রাজধানী খ্যাত ফরিদপুরে উঠতে শুরু করেছেন নতুন পেঁয়াজ। গেল বছর পেঁয়াজের দাম ভালো পাওয়ায় চলতি বছরে বেশি লাভের আশায় অধিক পরিমাণ পেঁয়াজের চাষাবাদ করেছে চাষিরা। ফরিদপুরে মুড়িকাটা পেঁয়াজেের আবাদ আশানুরূপ ভালো হয়েছে কিন্ত আশানুরূপ দাম না পেয়ে হতাশ কৃষক। পেঁয়াজের দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে চাষিরা। পেঁয়াজ উৎপাদনের খরচে তুলনা বাজারের পেঁয়াজের দাম কম।
দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের দ্বিতীয় জেলা ফরিদপুর। এই জেলার নয়টি উপজেলায় প্রায় সব উপজেলায়'ই পেঁয়াজের চাষাবাদ হয়। তার মধ্যে ভাঙ্গা, নগরকান্দা, সালথা উপজেলায় বেশি পেঁয়াজের আবাদ হয়।
ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ইউনিয়নের কৃষক তৈয়াব মুন্সি (৫০) বলেন, গেল বছরের তুলনায় চলতি বছরের পেঁয়াজের চাষাবাদ ও ফলন ভালো হয়েছে কিন্তু সে তুলনায় দাম কম। পেঁয়াজ চাষের যে কীটনাশক, সার ও শ্রমিকের মজুরি দিয়ে খরচ হয়েছে তা থেকে প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। কারন মুঠিকাটা পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে রাখার কোন ব্যবস্থা নেই কয়েক দিন গেলে পচে যাবে তাই বাধ্য হয়ে লোকসান হলেও বিক্রি করতে হচ্ছে।
ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ভাঙ্গা বাজারে পেঁয়াজের হাটে সরজমিনে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পেঁয়াজ কিনতে ব্যবসায়ীরা হাটে এসেছে। হাটে বিক্রয়ের জন্য প্রচুর পরিমাণ মুড়িকাটা পেঁয়াজের উঠেছে। সপ্তাহে দুই দিন শুক্র ও সোমবার ভাঙ্গা বাজারে পেঁয়াজের হাট বসে। ভাঙ্গা বাজারে পেঁয়াজ হাটের ইজারাদার মো. আক্তার মুন্সী (৪৩) বলেন, আমি বেশ কয়েক বছর ধরে পেঁয়াজ হাটের সাথে আছি। এবছর প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ হাটে এসেছে। প্রকার ভেদে মুড়িকাটা পেঁয়াজের মন ৫০০-৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তুলনামূলক দাম অনেকটাই কম তবে দিন যত যাবে পেঁয়াজের দামও তত বৃদ্ধি পাবে।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছরে এ জেলায় ৩৬১৪০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছিল। লক্ষ্যমাত্র বিপরীতে অর্জিত হয়েছে প্রায় ৪১০০০ হেক্টর অর্থাৎ প্রায় ৫০০০ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে বেশি পেঁয়াজের চাষাবাদ হয়েছে।
ভাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল-মামুন দৈনিক 'সংবাদ সারাবেলা'কে বলেন, চলতি বছরে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২৯১৫ হেক্টর জমিতে তার বিপরীতে ইতিমধ্যে ৫১৮ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৪৭৫ হেক্টর জমিতে দানা বা বীজ পিয়াজ এবং ২১৪০ হেক্টর জমিতে হালি পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে।
এ বছর মোট ৩১৩৩ হেক্টর জমিতে পেয়াজের আবাদ হয়েছে। অর্থাৎ পেয়াজের আবাদ এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। আমরা ২৬০ জন কৃষককে ১ কেজি করে পেয়াজের বীজ, ১০ কেজি ডিএপি এবং ১০ কেজি এমওপি সার দিয়েছি।
আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পেয়াজ চাষের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করছি আবহাওয়া এবং পরিবেশ অনুকূলে থাকলে চলতি বছরে পেঁয়াজের ফলন রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে এবং আমাদের কৃষক ভাইয়েরা আর্থিকভাবে লাভবান হবে।