কক্সবাজারের টেকনাফে জমি ঘটনাকে কেন্দ্রে করে অপহরণের নাটক সাজিয়ে সাংবাদিকসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার অভিযোগ উঠেছে। গত ১৭ মার্চ রাতে টেকনাফ পৌরসভার ডেইল পাড়ার বাসিন্দা মো. জয়নাল বাদি হয়ে থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
এই মিথ্যা মামলার দুই নম্বর আসামি করা হয় দৈনিক কক্সবাজার প্রতিদিন পত্রিকার প্রতিনিধি মো. ফারুক বাবুলকে। তিনি ঐ পত্রিকার টেকনাফ প্রতিনিধি হিসেবে দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে থানায় একটি সাধারণ অভিযোগ পর্যন্ত নেই। এই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা হাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র নিন্দার ঝড় উঠেছে।
মামলার বাদি জয়নাল টেকনাফ পৌরসভার ডেইল পাড়ার বাসিন্দা মৃত মোহাম্মদ আলী প্রকাশ কালা মোহাম্মদ আলির ছেলে। বিরোধী জমির মালিকানা দাবিকারী টেকনাফের শীর্ষ ইয়াবা ডন আত্মসমর্পণকারী নুরুল আমিন। এছাড়া বাদীর আরেক ভাই আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা ডন আবদুল আমিন। এদিকে আলোচিত টেকনাফের মাদক-হুন্ডির ডন মো. আমিনের ছোট ভাই জমির মালিক নুরুল আমিন। গেল বছরের (২০ মে) আবদুল আমিন সাত লাখ ইয়াবাসহ র্যাবের হাতে আটক হন।
র্যাব জানিয়েছে, আটকদের মধ্যে আব্দুল আমিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদককারবারি। তিনি গত ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে প্রথম দফায় আত্মসমর্পণ করেছিলেন। পরে সাজাভোগ শেষে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তিনি ইয়াবার বড় একটি চক্র নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন। তার বিরুদ্ধে টেকনাফসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ১১টি মামলা রয়েছে।
অপহরণ মামলাটির এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, জমিতে প্রবেশ করে মালিকের কাছ থেকে চাঁদা দাবি, ভিকটিমদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন , বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার ভয়ভীতি ও হুমকি ধমকি প্রদান করছে এমন কথা উল্লেখ থাকলেও এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করেন উক্ত মামলার আসামি মৌলভি আলমগীর।
তিনি জানান,প্রকৃত পক্ষে জমির মালিক আনোয়ারা বেগম গং এর সাথে আমাদের লিখিত চুক্তি ও জমির দখল বুঝিয়ে দেন। উক্ত জমিতে কাউকে কোনো প্রকার নির্যাতন ও হুমকি করা হয়নি। উক্ত ভিকটিমরা নিজেদের ইচ্ছায় বাড়ি থেকে অন্য জায়গায় চলে যাওয়ার ভিডিও ফুটেজ প্রমাণ রয়েছে।তারা পৌরসভার আলিয়াবাদ এলাকার কবির বিল্লাহ নামক ভাড়া বাসায় গোপন অবস্থান নেয় । পরবর্তীতে অপহরণ হয়েছে বলে পুলিশের কাছে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে।
পুলিশ তাদের মিথ্যা নাটক বুঝতে না পেরে মামলা রেকর্ড করেন। মামলার এজাহারে যাঁদের ভিকটিম বানানো হয়েছে তারা প্রকৃত আলিয়া বাদের বাসিন্দা নন। তারা রোহিঙ্গা বলে জানা গেছে, তদন্ত করলে তাদের প্রকৃত ঠিকানা বেরিয়ে আসবে। জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে ফায়দা হাসিল করার জন্য রোহিঙ্গাদের ভিকটিম বানিয়ে অপরণ মামলার নাটক সাজাই ইয়াবা কিংবা।
প্রত্যক্ষদর্শী মো. নাসির উদ্দিন জানান,গত ১৬ মার্চ বিকালে কয়েকজন মহিলা ও পুরুষ নিয়ে সিএনজি যোগে চলে যাচ্ছে দেখলাম।পরে তারা পৌরসভার আলিয়াবাদ কবির বিল্লাহ নামক ভাড়া বাসায় উঠে পরে জানতে পারি তারা নাকি অপহরণ হয়েছে। সেটি নিয়ে কৌশলে অপহরণের মামলা করে বলে শুনেছি। জমি জমা নিয়ে পূর্ব বিরোধ থাকার জের ধরে এ অপহরণ মামলার নাটক সাজিয়েছে বলে জানলাম। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে তাদের অপহরণ করা হয়নি।
এ বিষয়ে সিনিয়র সাংবাদিক মো. শহিদুল উল্লাহ বলেন,টেকনাফের আলোচিত আত্মসমর্পণকারী ও হুন্ডি ব্যবসায়ী মো. আমিন গং জমি সংক্রান্ত বিষয়ে একজন সাংবাদিককে জড়িয়ে অপহরণ মামলা করা হয়েছে। তা প্রকাশ করেছেন গণমাধ্যম কর্মীদের স্বাধীনতা আজ বাঁধার মুখে। আমরা মনে করেছি তাদের ইয়াবা বাণিজ্য ও জায়গায় জমি দখল সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসহ প্রশাসন ওই ইয়াবা ও হুন্ডি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে, কিন্তু আজ উল্টো সাংবাদিকের বিরুদ্ধেই মামলা করে ইয়াবা কারবারি পরিবার। আমরা এ মিথ্যা মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি চেয়ে তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
এ নিয়ে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) গিয়াস উদ্দিন বলেন, এজাহার পেয়ে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে । কেউ নির্দোষ হলে তদন্ত করে দেখব। বিষয়টি নাটক হলে তাদের বিরুদ্ধে ও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান ওসি।