রাজশাহীতে ট্রাক মালিক সমিতির সদ্য সাবেক সভাপতি আবুল কালামের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবার পাশাপাশি অন্যপক্ষ মুক্তির দাবিতে রাজশাহী জেলা প্রশাসককে দিয়েছে স্মারক লিপি। ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার উপর হামলা ও ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে অর্থের যোগানদাতা অভিযোগে গুলিতে আহত এক ছাত্রের করা মামলায় গত ১৫ মার্চ গ্রেফতার হন আবুল কালাম আজাদ। ঘটনা আর ত্রিমূখী উত্তেজনার সূত্রপাত ঘটে সেদিন থেকেই। অভিযুক্ত আবুল কালাম বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন রাজশাহী জেলার শাখার সভাপতির দায়িত্বেও আছেন।
আজ (২০মার্চ) মহানগরীর রেলগেট চত্ত্বরে গ্রেফতার হওয়া আবুল কালামের বিচারের দােিবত মানববন্ধন করে রাজশাহী জেলা ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির একাংশ। মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন ট্রাক মালিক সমিতির আহ্বায়ক ও প্রস্তাবিত সভাপতি আল আমিন সরকার টিটু।
মানববন্ধনের আগেরদিন ১৯ মার্চ আবুল কালামের পক্ষের লোকজন তার মুক্তির দাবিতে রাজশাহী জেলা প্রশাসককে একটি স্মারকলিপি দেন। এর আগে গত ১৫ মার্চ নগরীর বোয়ালিয়া থানায় উভয়পক্ষের হট্টগোল আর হাতাহাতির ঘটনায় মহানগর বিএনপির কার্যালয় থেকে দলের পদধারী পাঁচ নেতাকে শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
দুপক্ষের এমন পাল্টাপাল্টি আয়োজন ও দাবিতে ত্রিমূখী উত্তেজনায় নাজেহাল নগর বিএনপি-ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন ও রাজশাহী জেলা ট্রাক মালিক সমিতির নেতা সদস্যরা বলে মন্তব্য করেন উভয়পক্ষের লোকজন।
২০ মার্চের মানববন্ধন থেকে দাবি জানানো হয়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার উপর হামলাকারী, ফ্যাসিবাদের দোসর ও অর্থের যোগানদাতা ট্রাক মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি আবুল কালামের বিচারের দাবিতে বোয়ালিয়া থানায় গেলে বিএনপির একটি পক্ষ আবুল কালামকে ছাড়াতে গেলে ট্রাক মালিক সমিতির বর্তমানের আহ্বায়ক আল আমিন সরকার টিটুর উপর হামলা চালায় এবং হুমকি ধামকি দেয় আবুল কালামের পক্ষের নেতাকর্মীরা। ১৫ মার্চ সেটি নিয়ে বিএনপি ও ট্রাক মালিক সমিতির একপক্ষ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আবুল কালামের বিচার দাবি করেন। ঠিক তার পরেরদিন ১৬ মার্চ আবুল কালামের পক্ষে বিএনপির অন্য একটি পক্ষ ট্রাক মালিক সমিতির সদস্য ও ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশনের সদস্যদের নিয়ে তার মুক্তির দাবিতে আরো একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। তারপর থেকেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে ত্রিমূখী।
টিটুর পক্ষের লোকজন বলেন, আমরা থানায় গিয়ে এর তীব্র প্রতিবাদ জানালে কালামসহ তার লোকজন আমাদের উপর হামলা চালায় ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। নতুন করে আবুল কালাম এখন বিএনপি নেতা সাজতে চাইছে। সে কোনদিন বিএনপির রাজনীতি করেনি। ট্রাক মালিক সমিতির পদ নিয়েও সে বছরের পর বছর অনেক নাটক করেছে। বিগত আওয়ামী সরকারের ক্ষমতাধর নেতাদের আশির্বাদপুষ্ট হয়ে বছরের পর বছর কোন প্রকার নির্বাচন ছাড়াই কালাম নিজের পদ ও মনগড়া পকেট কমিটি নিজ হস্তগত করে রেখেছিলেন। ২০১৩ সাল থেকে ২০২৫ পর্যন্ত তিনি একছত্রভাবে ক্ষমতা আকড়ে ধরে ছিলেন। সমিতি থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা তিনি লুটপাট করেছেন। আর সেই টাকা থেকেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ব্যয় করেছেন নেতিবাচক পন্থায় বলে দাবি টিটু ও তার অনুসারিদের। তারই ধারাবাহিকতায় আবুল কালামের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন তারা। সে বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের স্বার্থ হাসিল করেছেন, ট্রাক শিল্প ধ্বংস করেছে বলেও দাবি তাদের। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হেলাল হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সবুর, যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল মান্নান প্রমুখ।
এদিকে, কালামের শাস্তির দাবিতে আয়োজিত মানবন্ধনের আগেরদিন ১৯ মার্চ রাজশাহী জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশন রাজশাহী জেলা ইউনিটের সভাপতি আবুল কালামের মুক্তির দাবীতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন তার অনুসারিরা। বুধবার (১৯ মার্চ) দুপুরে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার’র হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন ট্রাক মালিক সমিতি রাজশাহী জেলা, ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশন রাজশাহী জেলা ইউনিট ও বিএডিসি ডিলার এসোসিয়েশন রাজশাহী জেলার নেতৃবৃন্দ।
এর আগে গত ১৬ মার্চ ব্যবসায়ী কালামকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে ৪ টি ব্যবসায়ী সংগঠন ও বিএনপির কিছু নেতা সংবাদ সম্মেলন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, ট্রাক মালিক সমিতি রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক মো: জিল্লুর রহমান, বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশন রাজশাহী জেলা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক মো: রবিউল ইসলাম, বিএডিসি ডিলার এসোসিয়েশন রাজশাহীর সভাপতি মাহফুজুল হাসনাইন হিকোল ও সাধারণ সম্পাদক শরিফ উদ্দিন মুনশী সহ অন্যান্য শীর্ষ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট মোঃ এরশাদ আলী ঈশা ও সদস্য সচিব মামুন-অর-রশিদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গত ১৫ মার্চ বোয়ালিয়া থানায় উভয়পক্ষের মধ্যে যে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে সেটির জন্য দলের নিয়মশৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়েছে। মোট পাঁচজন নেতাকে (সাবেক ও বর্তমান) কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছিল। গত ১৯ মার্চ তারা প্রত্যেকেই লিখিত আকারে জবাব দিয়েছেন। এবিষয়ে আমরা পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেবো।