× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা জামায়াত বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ কক্সবাজারে ২২ দিনে ১৩ হত্যাকাণ্ড

অন্তর দে বিশাল, (কক্সবাজার)

২৫ মার্চ ২০২৫, ১৫:০০ পিএম

ছবিঃ সংগৃহীত।

চলমান মাহে রমজান মাসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ জেলাজুড়ে গত ২২ দিনে ১৩ টি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও মাদকপাচার, চুরি,ছিনতাই, ডাকাতি, জায়গা জমি দখল,চাঁদাবাজিসহ অসংখ্য ঘটনায় জেলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্ধিগ্ন জেলার সাধারণ মানুষ।এসব ঘটনায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ছিলো চোখে পড়ার মত। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে তড়িৎ কাজ করছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।এতেও স্বস্তি পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। 

সচেতন মহলের দাবি অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না করায় অপরাধ প্রবনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গেল বছর ৫ আগষ্ট পতিত স্বৈরাচার সরকার পালিয়ে যাওয়ার পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় শক্ত ভূমিকা রাখতে পারছে না প্রশাসনসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। 


তারা এখনো কোমর সোজা করে কাজ করতে পারছে না। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে অপরাধ বৃদ্ধির শঙ্কায় রয়েছে জেলাবাসী। পুলিশ বলছে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জানা যায়, গেল ২ মার্চ রমজান শুরুর পর থেকে ২৪ রমজান পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ জেলায় ১৩ জন হত্যার শিকার হয়েছে।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়,গত ৩ মার্চ টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উলুবনিয়া রাস্তার মাথা নামক এলাকায় পাওনা টাকা নিয়ে দুই ব্যক্তির মধ্যে মারামারিতে একজনের মৃত্যু হয়।নিহত ব্যক্তির নাম দিলদারুল আহমদ (প্রকাশ মুন্সি দিলদার) (৫০)। সে একই উপজেলার হোয়াইক্যং ১ নং ওয়ার্ডের উলুবনিয়া রাস্তার মাথা এলাকার বাসিন্দা মরহুম আব্দুস সোবহান এর ছেলে। তিনি পেশায় একজন দলিল লেখক।


দ্বিতীয়ত জেলার পেকুয়ায় গত ৪ মার্চ সকালে উপজেলার মোরার পাড়া বাগুজারা মাতামুহুরী নদী থেকে মো:মুজিব (১৯) নামে এক অটোরিকশা চালককে অপহরণ করে হাত পা বেঁধে নদীতে ফেলে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত কিশোর মুজিব চকরিয়ার পূর্ব বড় ভেওলা সিকদার পাড়া ৩নং ওয়ার্ড এলাকার মোঃ আলীর ছেলে। ৫ মার্চ উখিয়ার ২০ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হেড মাঝি মোহাম্মদ নুর কে হত্যা করেছে  দুর্বৃত্তরা।


একই দিন উখিয়ার ইনানীর মেরিন ড্রাইভ সড়কের নিদানিয়া এলাকায় পরিত্যক্ত বৈশালী হ্যাচারী থেকে এক যুবককে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয়রা। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ওই যুবককে মৃত ঘোষণা করে ডাক্তার।নিহত যুবক উপজেলার উত্তর নিদানিয়া এলাকার মৃত ইলিয়াছের ছেলে আরফাত। পরিবারের দাবি নিহত আরফাতকে পরিকল্পিত হত্যা করা হয়েছে। 


৮ মার্চ উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার’কে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় এক রোহিঙ্গা নিহত হয়।ওই দিন রাত সাড়ে ৯ টার দিকে ৮ ইস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি ৬১ ব্লকে এ ঘটনা ঘটে। এতে এক রোহিঙ্গা প্রতিবন্ধী গুলিবিদ্ধ হয়।পরে তাকে রোহিঙ্গাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করে চিকিৎসকেরা। নিহত বুদ্ধি প্রতিবন্ধী যুবক মোহাম্মদ রফিক (৩৩) ঐ ক্যাম্পের শামসুল আলমের পুত্র।


১১ মার্চ উখিয়ায় ইয়াছমিন নামে এক রোহিঙ্গা কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। 


১৪ মার্চ বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে উখিয়ার পালংখালী হাকিম পাড়ার ১৪ নং ক্যাম্পের ই-৩ ব্লকের ও ১৫ নং ক্যাম্পের সীমানায় এক রোহিঙ্গা আরএসও সদস্যকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। নিহত রোহিঙ্গার নাম হাবিজুল রহমান প্রকাশ চিকন আলী।


একই দিন মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের পূর্ব জামাল পাড়ায় সুমাইয়া নামে এক গৃহবধূকে ওড়না প্যাঁচিয়ে করেছে তার স্বামী। নিহত সুমাইয়া একই ইউনিয়নের পানেরছড়া এলাকার হারুন রশিদের মেয়ে। 


সেদিন বিকালে ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামাবাদের পাঁহাশিয়াখালী সিকদার পাড়ায় গুলি করে হাবিবুল হুদা নামে এক বৃদ্ধাকে হত্যা করা হয়।


১৬ মার্চ সন্ধ্যায় শহরের ৭ নং ওয়ার্ড পাহাড়তলী হালিমাপাড়ায় ইজি বাইক চুরিকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাত করে মুজিব নামে এক যুবককে খুন করে সন্ত্রাসীরা। 


২০ মার্চ মহেশখালীতে কোস্ট গার্ডের ধাওয়া খেয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছে এক লবন চাষি। নিহত যুবক ওই উপজেলার চিকনিয়া পাড়া এলাকার মৃত নজির আহমদের পুত্র। 


২১ মার্চ উখিয়ার জালিয়া পালং ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মনখালী পাহাড়ের ঝিরিতে এক অজ্ঞাত যুবকের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।


সর্বশেষ ২১ মার্চ রাত ১২ টার দিকে পিএমখালীর চেরাংঘরের পূর্ব পাশে শুক্কুর সওদাগরের ইটভাটা সংলগ্ন গোলার পাড়া রাস্তার মাথা নির্জন এলাকায় সিরাজুল মোস্তফা নামে এক অটোরিকশা চালককে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। এসময় তার অটোরিকশাটি নিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। নিহত সিরাজুল মোস্তফা রামু উপজেলার চাকমারকুল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড়ের বাসিন্দা মৃত জাফর আলমের ছেলে।


এসব হত্যা ও খুন ছাড়া অসংখ্য ছুরি ছিনতাই,ডাকাতি,জমি দখল,হামলাসহ নানা ঘটনায় উদ্ধিগ্ন জেলার সাধারণ মানুষ।


এসব নিহতের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের আইনোর আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন নিহতের স্বজনরা।


জেলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে একাধিক লোকের সাথে আলাপ হয় এ প্রতিবেদকের। তার মধ্যে জেলা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট আবদুর রশিদ বলেন, জুলাই আন্দোলনের ফসল ৫ আগষ্ট পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কোমর সোজা করে ঘুরে দাঁড়াতে সময় লেগেছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে অপরাধীরা।ধিরে ধিরে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে, আগের মত পুলিশি তৎপরতা বৃদ্ধি পাবে প্রত্যাশা করছি। পাশাপাশি দেশ ও জনগণের জানমাল রক্ষায় অতীত ভূলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোরভাবে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করার আহবান জানাচ্ছি।আশা করি দ্রুত সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসবে।


জেলায় অপরাধ বেড়ে যাওয়া ও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে জেলা পুলিশের প্রস্তুতি কেমন জানতে চাইলে জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) জসিম উদ্দীন চৌধুরী পিপিএম বলেন,অপরাধীদের ধরতে মাঠে রয়েছে পুলিশ।নিয়মিত পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। নির্বিঘ্নে ঈদ উৎযাপন করতে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।আশা করছি আর কোন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হবে না৷

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.