সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চলন্ত বাসে আবারও সংঘবদ্ধ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এবার ডাকাতির শিকার হয়েছে ‘ইতিহাস পরিবহন’ নামের একটি যাত্রীবাহী বাস। গত শুক্রবার (৪ এপ্রিল) বিকেলে ব্যাংক টাউন ব্রিজ এলাকায় (বাস নম্বর: ঢাকা মেট্রো-ব ১৫-৬৮৭৩) এ ঘটনা ঘটে।
ডাকাতরা যাত্রীবেশে বাসে উঠে দেশীয় অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের জিম্মি করে স্বর্ণালঙ্কার, নগদ অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নেয়। ঘটনার শিকার যাত্রী টুনি সাভার মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
স্থানীয়রা সন্দেহভাজন হিসেবে বাসের চালক ও সহকারীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। আটককৃতরা হলেন- বাসের চালক রজব আলী (৩০) ও সহকারী এমদাদুল হক (৪০)। এ ছাড়া ডাকাতির ঘটনা ঘটা ইতিহাস পরিবহনের বাসটিও আটক করা হয়েছে।
বাসটিতে থাকা রিপন সরকার নামে ভুক্তভোগী এক যাত্রী জানান, চন্দ্রা থেকে ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে দুপুর দুইটার দিকে বাসটিতে ওঠেন তিনি। পথে তিনজন ব্যক্তি বাসটিতে ওঠেন। পরে ওই তিনজন ব্যক্তি ছুরি বের করে বাস যাত্রীদের জিম্মি করে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে ফুলবাড়িয়া এলাকায় বাস থেকে নেমে যায়।
তিনি বলেন, “ছিনতাইকারীরা ছুরি ধরে আমার পকেটে থাকা ৩৫ হাজার টাকাও নিয়ে গেছে। ছিনতাই শেষে ছিনতাইকারীরা বাসের চালককে বাস থামাতে বলার পর চালক বাস থামালে তারা নেমে যায়। কিছুদূর যাওয়ার পর চালক, হেলপারও বাস থামিয়ে পালিয়ে যায়।”
বাসে থাকা আরেক নারী যাত্রী বলেন, “বাসটি ব্যাংক টাউন ব্রিজের কাছে এলে তিনজন বাসে ওঠেন। পরে দেখি তাদের হাতে ছুরি। তারা ছুরি ধরে আমাকে বলে সবকিছু খুলে দিতে। আমি প্রথমে দিতে না চাইলে তারা ছুরিকাঘাতের হুমকি দেয়। পরে আমি নিজ থেকেই আমার কানের দুল খুলে দেই। এ সময় তারা বাসের অন্যান্য যাত্রীদের কাছ থেকেও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে যার সঙ্গে যা ছিল, স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা, মোবাইল, ছিনিয়ে নিয়ে ফুলবাড়িয়া এলাকায় বাস থেকে নেমে যায়।”
ইতিহাস পরিবহনের পরিচালক আব্দুল মান্নান বলেন, “ঘটনাটি জানার পর ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। যাত্রীরা জানিয়েছেন তিনজন লোক অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের কাছ থেকে নগদ টাকাসহ অন্যান্য মালামাল লুট করেছে। বাসে ৪০ জনের বেশি যাত্রী ছিল, যদিও কেউ বাধা দেয়নি। এ ঘটনায় সাভার মডেল থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
থানায় লিখিত অভিযোগ দায়েরকারী বাসযাত্রী টুনি জানায়, বিকেলে মিরপুর যাওয়ার উদ্দেশ্যে চন্দ্রা থেকে ইতিহাস পরিবহন লিমিটেড গাড়িতে উঠে সাভারের কর্নপাড়া ব্রিজের সামনে আসলে গাড়ির চালকসহ আরো্ ৪ জন চলন্ত গাড়িতে আমার গলায় সুইস গিয়ার ঠেকিয়ে গলায় থাকা চার আনা স্বর্ণের একটি চেইন ও গাড়ির অন্যান্য যাত্রীদেরকে ভয়ভীতি ও দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণসহ আরো মূল্যবান জিনিসপত্র জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডে বাস থামিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত পালিয়ে চলে যায়।
তবে আটক বাসচালক রজব আলী বলেন, বাসে ওঠা কয়েকজন ব্যক্তি হঠাৎ অস্ত্র বের করে যাত্রীদের জিম্মি করে মালামাল লুট করে। পরে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা বাসে ভাঙচুর চালায়। এসময় আমি ও সহকারী এমদাদুল হক সড়কের পাশে লুকিয়ে পড়ি।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহীনুর কবির জানান, ‘বাসে ডাকাতির ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাসচালক ও সহকারীকে আটক করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই দোষীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।’
প্রসঙ্গত, এর আগেও একই স্থানে এবং একই স্টাইলে আরো ৭ বার চলন্ত বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এর কয়েকটি ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও পুলিশ ডাকাতির ঘটনায় জড়িত কাউকে আটক কিংবা ডাকাতি করা মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি।
পূর্বের কিছু ঘটনা
২০২৫ সালের ২৪ মার্চ: সাভারের রেডিও কলোনি এলাকায় 'শুভযাত্রা পরিবহন'-এ ডাকাতি।
২০২৫ সালের ২ মার্চ: রাজধানী পরিবহনের চলন্ত বাসে ছিনতাই।
২০২৪ সালের ২০ ডিসেম্বর: বিপিএটিসি’র সামনে ওয়েলকাম পরিবহনের বাসে একই কায়দায় ডাকাতি।