গত রোববার দিবাগত রাতে মৌলভীবাজার জেলা বারের তরুণ আইনজীবী এডভোকেট সুজন মিয়া (৩৫) দুর্বৃত্তদের উপর্যুপুরি ছুরিকাঘাতে খুন হন। প্রবাসী অধ্যুসিত শান্ত শহরে টার্গেট খুনের ঘটনাটি আতঙ্ক সৃষ্টি করছে নানা মহলে। ক্ষোভে ফুঁসছেন আইনজীবীরা। সুজন খুনের ঘটনার পরদিন সোমবার বারের আইনজীবীরা কর্মবিরতী, বিক্ষোভ মিছিল ও মানবন্ধন সহ বিভিন্ন প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করেন।
চাঞ্চল্যকর ঘটনার চারদিন পেরিয়ে গেলেও খুনিরা অধরা এখনো। আদৌ কী খুনিরা ধরা পড়বে না কী সময়ের ব্যবধানে এই খুনের ঘটনাটিও চাপা পড়বে তা নিয়ে রয়েছে নানা জনের নানা প্রশ্ন, সংশয়। শহরের প্রাণ কেন্দ্রে প্রকাশ্য খুনের এমন ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে সব মহলে। সুজন খুনের সাথে জড়িত খুনিরা ধরা না পড়ায় সব মহলের পাশাপাশি ব্যাপক নাড়া দিয়েছে জেলার আইনজীবীদেরও। তারা চান সুজন খুনের মাস্টারমাইন্ড সহ খুনিদের যেন দ্রæত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করে। এই দাবিতে মৌলভীবাজার বারের আইনজীবীরা কর্মসূচি সহ কর্মবিরতী পালন করছেন।
আজ (৯ এপ্রিল) দিনভর পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আইনজীবীরা সুজন খুনের আসামী গ্রেফতার সহ বিচারের দাবিতে ফের কর্মসূচিতে নামেন। চলে কর্মবিরতীও।
জেলা আইনজীবী সমিতির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও প্রশাসনিক দ্বায়িত্বে থাকা এডভোকেট বকসী জুবায়ের আহমদ (পিপি) বলেন,আমাদের আজ বুধবার পর্যন্ত কর্মবিরতি চলমান থাকবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে ব্রিফ করার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এর আগে ৬ এপ্রিল দিবাগত রাত ১১টার দিকে মৌলভীবাজার শহরের পৌরসভার উত্তর গেটের তামান্না ফুসকার দোকানের সামনে বসে তিন বন্ধুকে সাথে নিয়ে ফুসকা খাচ্ছিলেন সুজন। এমন সময় ৫ থেকে ৬ দুর্বৃত্ত সুজনের বুকবরাবর ছুরি দিয়ে উপুর্যুপুরি কুপিয়ে পালিয়ে যায়। সাথে থাকা বন্ধুরা সহ স্থানীয়রা দ্রæত সেখান থেকে সদর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত জরুরী বিভাগের চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার পরদিন ৭ এপ্রিল বিকাল ৫টায় শহরের শাহ মোস্তফা রহ: টাউন ঈদগাহে সুজনের জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিভিন্ন রাজনৈতি দলের নেতৃবৃন্দ, বারের আইনজীবী সহ বিভিন্ন মহলের শোকার্ত মানুষের ঢল নামে। নিহত সুজন মিয়া শহরতলীর মোস্তফাপুর ইউনিয়নের খিদুর গ্রামের বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম এর ছেলে।
জেলা আইনজীবী সূত্রে জানা যায়, সুজন মিয়া ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যপদ গ্রহণ করেন। সেই থেকে তরুণ আইনজীবী হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়।
ঘটনার দু‘দিন পর মঙ্গলবার ৮ এপ্রিল সুজন খুনের ঘটনায় তাঁর বড় ভাই এনামুল হক সুমন বাদী হয়ে কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামী করে মৌলভীবাজার মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন (পেনাল কোড ৩০২/৩৪ মামলা নং-১৫) । মামলার অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, গত ৬ এপ্রিল সন্ধ্যার পর তাঁর ভাই সুজন মিয়া তাঁর সিনিয়রের চেম্বারে কাজ করছিলেন। এমন সময় সুজনের তিন বন্ধু ফোনে তাদের সাথে
শহরের চৌমুহনা সংলগ্ন রাজমহলের সামনে দেখা করে। সেখানে তারা কিছুক্ষন অবস্থান করে পাশের কাশিনাথ স্কুল মাঠে শিল্প ও বানিজ্য মেলায় যান তারা। মেলায় কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে বন্ধুরা মিলে পৌরসভার পশ্চিম পাশের তামান্না ফুসকার দোকানে বসার কিছুক্ষন পর রাত ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে অজ্ঞাত কয়েকজন পাশে থাকা চেয়ারে প্রথমে লাথি মারে। এসময় সুজন ও তার বন্ধুরা ঘটনার আকষ্মিকতায় কিছু বুঝে উঠার আগেই দুর্বৃত্তরা সুজনকে উপর্যুপরি ছুড়ি মেরে গুরুতর রক্তাক্ত করে পালিয়ে যায়।
সুজনের মরদেহের ময়না তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা: আহমেদ ফয়সল জামান জানান, নিহতের শরীরের যেখানে হার্ট রয়েছে সেই হার্ট ছিদ্র হয়ে অনেক গভীরে কুপ লাগার কারণে ব্যাপক রক্তক্ষরণ হয়। এছাড়া বুকের হাড়ের উপরেও আঘাতের আলামত পাওয়া যায়। তিনি বলেন, গুরুতর আহত অবস্থায় যখন সুজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তখন থেকে প্রায় ৫মিনিট পর্যন্ত তাঁর দেহে শাসপ্রশাস ছিল। এর পর তাঁর মৃত্যু হয়।
এদিকে আইনজীবী সুজন খুনের ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে কাজ করছে মৌলভীবাজার থানা পুলিশ সহ পুলিশের একাধিক টিম। ঘটনাস্থল থেকে শুরু করে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষন সহ নানা তথ্য এবং আলামত সংগ্রহ করে কাজ করছে পুলিশ এমন তথ্য জানিয়েছেন পুলিশের এক কর্মকর্তা। তবে সব শেষ হত্যাকাÐ নিয়ে নানা কথা কানে ভাসলেও প্রকৃত রহস্য এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সুজন খুনের সর্বশেষ অগ্রগতি নিয়ে জানতে চাইলে মৌলভীবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মাহবুবুর রহমান জানান, ইতিমধ্যে এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। তদন্তের ক্ষেত্রেও সর্বেচ্চ চেষ্টা চলছে, অগ্রগতিও হচ্ছে।