জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার ভাটারা ইউনিয়নের ৬১নং মইশাবাদুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাফিয়া খাতুন(মিতু) শ্বশুরকে পিতা বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নেওয়ার ঘটনায় সত্যতা পেয়ে বিভাগীয় মামলা দায়ের করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ আলী আহসান । এ ছাড়াও জেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার হারুন অর রশিদকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ঠ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সরিষাবাড়ী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে ২য় বারের মতো তদন্ত শুরু হবে । বুধবার (৯ এপ্রিল) সকাল ১১ টায় জেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার হারুন অর রশিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়, বিদ্যালয় ও সরোজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ভাটারা ইউনিয়নের জুলারখুপি গ্রামের মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান এর মেয়ে রহিমা আক্তার ও ছেলে শফিকুল ইসলাম(খোরশেদ) এবং ছেলে খায়রুল ইসলাম ওরফে খোকন মিয়া। তার ছোট ছেলে খায়রুল ইসলাম ওরফে খোকন মিয়া মাদারগঞ্জ উপজেলার সরদাবাড়ী গ্রামের হাসান আলীর মেয়ে মাফিয়া খাতুন মিতুর সাথে প্রায় ১৫ বছর পুর্বে বিবাহ হয় ।
বিবাহের পুর্বে মিতুর আপন পিতা মো. হাসান আলী মাতা মালেকা বেগম পরিচয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হলেও নবম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন ফরমে (নং- ৬৫১৮৯৯) তাহার পিতার নাম (হাসান আলীর) পরিবর্তে মুক্তিযোদ্ধা শ্বশুরকে (আব্দুর রহমান) ও শাশুড়ী শরিফা বেগমের নাম লিপিবদ্ধ করেন । ২০১২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সার্টিফিকেট অনুযায়ী সে জন্মদাতা পিতা হাসান আলীর পরিবর্তে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান ও মাতা
শরিফা বেগম এদের জন্মদাতা মেয়ে হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হয়ে মাফিয়া খাতুন নিজের জাতীয় পরিচয় পত্রেও তাহার পিতা মাতার নামের পরিবর্তে শ্বশুর শাশুড়ির নাম ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয় পত্র (নং-৮২২২০৯৫৬১৭) নিবন্ধন করেন । এই সুযোগে মাফিয়া খাতুন (মিতু) মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা সনদ ব্যবহার করে প্রাথমিক বিদ্যালয় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ২০১৬ সালের ১৭ জানুয়ারী সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন ।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় একাধিক সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে ২০২৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সরিষাবাড়ী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাহিদা আক্তার একটি তদন্ত প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। এর পর ৩ ডিসেম্বর জেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার সহ ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত সদস্য সরোজমিনে তদন্ত করে ৯ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা পরিচালক বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করেন । এরপর একাধিকবার সংবাদ প্রকাশ হলে এবং প্রতিবেদনে ৬১ নং মহিষাবাদুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জনাব মাফিয়া খাতুন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ২০১৪-এ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় জরুরীভিত্তিতে চাকরি বিধি মোতাবেক তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ও অধিদপ্তরকে অবহিত করার জন্য গত ৩ ফেব্রুয়ারী প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অনুমোদনে পলিসি ও অপারেশন বিভাগ (অতিরিক্ত দায়িত্ব) পরিচালক ও যুগ্ম সচিব ড. মোঃ আতাউল গণি আদেশ জারী করেন।
পরে জামালপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারমোহাম্মদ আলী আহসান বাদী হয়ে সরকারী শৃঙ্খলা আপীল বিধি মালা ২০১৮ সালের ৩ এর (খ) ধারায় ১৩ ফেব্রুয়ারী বিভাগীয় মামলা দায়ের করে। অন্যদিকে গত ১০ মার্চ সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ হারুন-অর-রশিদ,বকশিগঞ্জ উপজেলা টিও, মেলান্দহ এটিও কে আবারো তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার
মোহাম্মদ আলী আহসান।
স্থানীয়রা জানান, খায়রুল ইসলাম ওরফে খোকন মিয়া ও মাফিয়া খাতুন মিতু কাগজপত্রের সেই সূত্রে ইসলামিক ভাবে আপন ভাইয়ের সাথে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে দাম্পত্য জীবন যাপন করছেন তারা । তাদের ঘরে দুটি সন্তানের জন্ম হয়। শ্বশুরকে জন্মদাতা পিতা বানিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে যে শিক্ষক মহৎ পেশায় নিয়োজিত আছে তার কাছ থেকে কোমলমতি শিশুরা কি শিখতে পারে? আর কতদিন পার হলে ব্যবস্থা নিবে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে মাফিয়া খাতুন মিতুর ভাসুর মো. শফিকুল ইসলাম খোরশেদ মুঠোফোনে বলেন, মাফিয়া খাতুন মিতু আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী । এলাকায় নানা আলোচনা সমালোচনা হয়। বিষয়টি আমি যেদিন থেকে জানতে পেরেছি সেদিন থেকে নিজেই নিজের বাড়ীতে লজ্জায় যায় না । জাতীয় পরিচয়পত্রে একই নাম ব্যবহার হয়েছে বিষয়টি নিয়ে আপনি কি দৃষ্টিতে দেখছেন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার বাবাকে পিতা বানিয়ে কেন জাতীয়পত্র করবে। জাতীয় পরিচয় পত্র প্রদানের পুর্বে যাচাই বাচাই করা দরকার ছিল। আমি ছুটিতে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার সাথে কথা বলব।
তবে মাফিয়া খাতুন মিতুকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে নাম্বারটি বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে মইশাবাদুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জেসমিন আক্তার জানান, এই বিষয়ে আগেও তদন্ত হয়েছে । আমার লিখিত জবাব নিয়েছেন । নতুন করে বলার আর কিছু নেই । শুনেছি বৃহস্পতিবার আবারো তদন্ত হবে। আমাকে জানালে আমি আবারো জবাব দিব।
জামালপুর জেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার হারুন অর রশিদ জানান, গত ৩ ডিসেম্বর আমি সহ ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত করেছি। তবে প্রকৃত পক্ষে পিতার জায়গা শ্বশুরের নাম ব্যবহারের সত্যতা মিলেছে। আমি প্রয়োজনীয় তথ্য প্রমাণ উদ্ধার এবং সাথে বিয়ের কাবিন নামাও উদ্ধার করে ৯ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা পরিচালক বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করার পর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ এসেছে। বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আবারো তদন্ত করা হবে। ইনশাআল্লাহ দ্রুতই বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে।