ফিলিস্তিনের গাজায় ইজরায়েলি বর্বরতম ধ্বংসযজ্ঞ ও ভয়াবহতম মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টির প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) প্রশাসন। গত সতেরো মাস যাবত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইজরায়েলি বর্বরতম হামলায় লক্ষাধিক মানুষ শহিদ হয়েছে যার মধ্যে অধিকাংশই শিশু ও নারী।
আজ (১০ এপ্রিল ২০২৫) বেলা ১১ টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শহিদ মিনারে প্রশাসনের আয়োজনে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় এতে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল ছাত্রছাত্রী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষক মহোদয় গণ অংশগ্রহণ করেন।
সমাবেশে উপস্থিত হয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. এনায়েতুল্লাহ পাটোয়ারী বলেন, ফিলিস্তিনের মানুষের উপর ইহুদিবাদী জায়োনবাদী ইজরায়েল ও তার দোসরদের যে নির্মম গণহত্যা চলছে তার প্রতিবাদ জানাতে এসেছি। আজ আমরা কয়েক হাজার মানুষ একত্রিত হয়েছি, ফিলিস্তিনে আজ মানবতা ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে, ইতিহাসের নির্মমতম হত্যাকাণ্ড চলছে, শিশুদের কাতর স্বরের সাহায্য ময় আকুতি "ইয়া আল্লাহ, ইয়া আল্লাহ" আমাদের কর্ণকুহরে ভেসে আসছে। সারা বিশ্বের মুসলমান, সারা বিশ্বের বিবেকবান মানুষ কি ইউরোপ, কি আমেরিকা, কি এশিয়া এই নির্মমতম হত্যাযজ্ঞ বন্ধের জন্য প্রতিবাদ জানাচ্ছে। আজ ওয়াইসি, আরব লীগ, জাতিসংঘ তাদের ভূমিকা পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। আমরা দাবি জানাচ্ছি, জাতিসংঘ, ওয়াইসি তাদের যথাযথ ভূমিকা পালন করে এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রশাসন অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন বলেন, আজ আমাদের কোনো এজেন্ডা নেই, আমাদের একটি-ই এজেন্ডা যারা মানবতাকে ভূলুণ্ঠিত করবে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো। আজ আমাদেরকে শুধু ইজরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালে হবে না, আমাদেরকে প্রতিবাদ জানাতে হবে নৃশংসতম হত্যাকারী জায়োনবাদ ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে। ফিলিস্তিনের শিশু, বৃদ্ধ ও নারীদের যেভাবে হত্যা করে জায়োনবাদীরা অট্টহাসি হাসে, আমরা জানতে চাই এই ছোট্ট শিশুর কী অপরাধ? একজন বৃদ্ধের কী অপরাধ। একজন নারীর কী অপরাধ? তাদেরকে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে কেন? সর্বশেষ আমি বলে দিতে চাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর যেখানেই মানবতা লঙ্ঘন হবে, মানুষের প্রতি জুলুম করা হবে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবে।
উপ-উপাচার্য একাডেমিক অধ্যাপক ড. মোঃ শামীম উদ্দিন খান বলেন, মানবসভ্যতার ইতিহাসে ফিলিস্তিনিদেরর মতো এতো নির্যাতন, নিষ্পেষণের স্বীকার কখনো কেউ হয়নি, মানবতার এমন কলঙ্কিত অধ্যায় অন্য কোনো জাতির নেই। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত ফিলিস্তিনের উপর যে নির্মম নির্যাতনের স্টিমরোলার চলেছে তা আর কারো উপরে চলেনি। আজ মুসলিম দেশের প্রধানরা ক্ষমতার জন্য আমেরিকার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায় না, আমি আরব রাষ্ট্র গুলোর প্রতি অনুরোধ জানাবো সম্মিলিতভাবে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তবেই কেবল এ সংকটের সমাধান হইতে পারে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ ইয়াহইয়া আখতার বলেন, আমাদেরকে শুধু দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানানোর মাধ্যমে কর্তব্য শেষ করলে হবে না, যে প্রযুক্তির মাধ্যমে তারা এ নির্মম নির্যাতনের স্টিমরোলার চালাচ্ছে তা বন্ধ করতে আমাদেরকেও গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন উদ্ভাবনী আবিষ্কার করতে হবে। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে আমরা যথাযথ গবেষণা পরিচালনা করতে পারি তবে তাদের সাথে আমরাও টেক্কা দিতে পারবো। আমি সবাইকে অনুরোধ জানাই, শুধু এখানে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ নয় আসুন আমরা সব ধরনের ইজরায়েলি পণ্য বয়কট করে গাজার মানুষের পাশে দাঁড়াই।
উপচার্যের বক্তব্যের শেষে ফিলিস্তিনের মুসলমান ও বিশ্ববাসীর শান্তি কামনায় দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও তথ্য ও ফটোগ্রাফি শাখার প্রশাসক ড. মোঃ শহিদুল হক।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ সতেরো মাস পর্যন্ত ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফা শহরে ইজরায়েলের হামলায় লক্ষাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। রাফা শহর প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে সেখানে মানুষের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া ভার। বিস্ফোরণের সাথে মানুষ শূন্যে উড়ার মত মানবিক বিপর্যয় জনক দৃশ্য দেখা গেছে।