কক্সবাজার টেকনাফে হ্নীলা বাজারের ইজারা নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পণ্য সরবরাহের কাজে নিয়োজিত ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনের উপর আরোপ করা হচ্ছে অযৌক্তিক টোল, সরকার নির্ধারিত কোনো নিয়ম না মেনেই আদায় চলছে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মানবিক কাজে নিয়োজিত এসব যানবাহন থেকে চাঁদা আদায়ে জনমনে ও ব্যবসায়ীদের মাঝে দেখা দিয়েছে তীব্র ক্ষোভ, প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা।
সীমান্তবর্তী উপজেলা টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের হ্নীলা বাজারের ইজারা নিয়ে নেওয়া হচ্ছে গাড়ির টোল। ঐ বাজারের খালাসকৃত সব ধরনের গাড়ী থেকেই আদায় করা হচ্ছে টোলের নামে অধিক চাঁদা।
সূত্র জানা যায়, 'গত বছর এই বাজারের ডাক ছিলো দুই কোটি পঞ্চাশ লাখ টাকা। তখন প্রতি গাড়ী থেকে টোল আদায় হতো এক হাজার টাকা করে, আর বড় ট্রাক হলে নেওয়া হতো এক হাজার পাঁচশত টাকা করে।
এই বছর সেই একই বাজারের সরকারি ডাক হয়েছে মাত্র এক কোটি আট লক্ষ টাকায়। অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছর সরকারি ডাক কম হওয়া সত্বেও যে গাড়ির নিয়মিত টোল এক হাজার নেওয়া হতো সেই গাড়ীর টোল নেওয়া হচ্ছে দুই হাজার টাকা। আর যেসব গাড়ীর এক হাজার পাঁচশত টাকা টোল নেওয়া হতো, সেসব গাড়ীর টোল নেওয়া হচ্ছে তিন হাজার টাকা। যা আগের তুলনায় সম্পূর্ণ দ্বিগুণ!
অথচ একই বাজারের আগের তুলনায় ডাক কম হওয়া সত্বেও গাড়ী প্রতি দ্বিগুণ টোল আদায় করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে ব্যবসায়ী'রা বলেন, 'আমরা দীর্ঘ বছর ধরে এই বাজারে বাঁশ সরবরাহ করে আসছি। আমাদের এই বাঁশ গুলো যায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন কাজে। আগে আমাদের থেকে গাড়ী প্রতি টোল নিতো ছোটো গাড়ী এক হাজার আর বড় গাড়ী এক হাজার পাঁচশত।
গত কিছুদিন আগে এই বাজারটি নতুনভাবে ডাক হয় কিন্তু নতুন ডাক হওয়ার পরেই একই বাজারে একই গাড়ী প্রতি টোল আদায় করা হচ্ছে আগের চেয়ে দ্বিগুন। যা আমাদের সাথে সম্পূর্ণ অন্যায় করা হচ্ছে। ডাককারী কত টাকা দিয়ে ডাক নিলো, না নিলো এটা আমাদের বিষয় না। কিন্তু হঠাৎ করে এসে দাম দ্বিগুণ করে দেওয়াটা তো আমাদের সাথে জুলুমের সমতুল্য।
আমরা শুনেছি এই বাজারের ডাক আগের তুলনায় এক কোটি বিয়াল্লিশ লাখ টাকা কম টাকায় নেয়া হয়েছে। তা সত্বেও আমরা ব্যবসায়ীরাতো বাঁশের গাড়ী প্রতি টোল আদায় কমানোর জন্য কিছু বলি নাই। উচিৎ ছিলো যেহেতু আগের তুলনায় কম টাকায় ডাক নিয়েছে, সেহেতু আমাদের থেকেও কম টাকা নেয়া কিন্তু তা না করে উনারা উল্টো আমাদের থেকে দ্বিগুণ টাকা আদায় করছে। আর তারা আমাদের টোকেন দেয় ২০০ টাকার। কিন্তু টোল আদায় করে ২ হাজার ৩ হাজার টাকা করে। আমরা এটা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করি। যাতে আমরা এই বাজারে স্বস্তিতে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারি।'
এই বিষয়ে বাঁশ সরবরাহকারী এক ড্রাইভার জানায়, 'তারা টোল দ্বিগুন করায় আমরা সেই টোল দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা গত ১৫ এপ্রিল বাঁশ আনলোড করার পর ১০টি গাড়ি গাড়ী হ্নীলা বাজার থেকে বের হতে দেয়নি। এ নিয়ে এই বাজারে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। পরে স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহার আশ্বাস দিলে আমরা ওখান থেকে বের হতে পারি। প্রায় ২৪ ঘন্টা পর আমাদের তারা ঐ বাজার থেকে বের হতে দেয়। এভাবে চলতে থাকলে এই বাজারে আমাদের ঢুকাটাই মুশকিল হয়ে যাবে' বিষয়টি নিয়ে উক্ত বাজারের অলিখিত উপ ইজারাদার দাবী করা আলী আহমদ (পান্ডু) নামের এক বিএনপির নেতা বলেন, 'বিগত দশ বছর আমরা এই বাজারে হাত দিতে পারি নাই। আমি বারোটা মামলার আসামী, বিএনপির এখানকার সভাপতি। এবার নতুনভাবে ইজারা হওয়ার পর আমি বারো লক্ষ টাকা দিয়ে উপ ইজারা নিয়েছি। বারো লক্ষ টাকা দিয়ে যেহেতু নিয়েছি সেহেতু আমাদের সাথে ঐ বাজারে পণ সরবরাহকারীদের বসতে হবে না। তাদের বলেছি তোমরা আমাদের সাথে কথা বলো।
গাড়ী আটকিয়ে রেখে চাঁদা আদায়ের বিষয়টা নিয়ে জানতে চাইলে উক্ত বাজারের মূল ইজারাদার আবু বক্কর আল মাসুদ বলেন, 'আসলে আমরা কাউকে ওভাবে আটকে রাখি নাই, আমি ঐ বাঁশের সেক্টরটা অন্য এক প্রতিনিধিকে দায়িত্ব দিয়েছি। বাঁশের সেক্টরটা গত বছর ছয় লক্ষ টাকা দিয়ে নিয়েছিলো কিন্তু এখন তা বারো লক্ষ টাকায় দেয়া হয়েছে। তাই ঐ প্রতিনিধির সাথে ওখানকার ব্যবসায়ীদের একটা সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
আইনগত ভাবে একই বাজারে প্রতিনিধি বা উপ ইজারা দেওয়া যায় কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে জবাবে মাসুদ বলেন, 'আমি আসলে উপ ইজারা দিই নাই, প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়েছি। উপ ইজারা দেয়াটা আইন বহির্ভূত কাজ। আলি আহমদ যদি নিজেকে উপ ইজারাদার দাবী করে থাকে, তাহলে ওটা উনার মন গড়া বক্তব্য।
ইজারার নামে চাঁদাবাজি ও ২৪ ঘন্টা গাড়ী আটকিয়ে রেখে জোরপূর্বক টোল আদায়ের বিষয়টির ব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহেসান উদ্দিন বলেন, 'অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছর অনেক টাকা কম মূল্যে সরকারি ভাবে হ্নীলা বাজারের ডাক দেয়া হয়েছে। কেউ যদি ইজারার নামে চাঁদাবাজি করে থাকে, তার বিরুদ্ধে আমরা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আর বাঁশের সেক্টরটাতে আগে কত টাকা নিতো, আর এখন কত টাকা নেওয়া হচ্ছে সেই বিষয়টিও আমরা খতিয়ে দেখবো।'