জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) সাইকেল চুরির ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। গত দুই মাসে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে অন্তত ৮টি সাইকেল চুরি হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশেষ করে শহীদ সাজিদ ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং এলাকা এখন সাইকেল চুরির হটস্পটে পরিণত হয়েছে।
সর্বশেষ গত শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের পাশে পার্কিং জোন থেকে সাইকেল চুরি করতে গিয়ে এক যুবক হাতেনাতে ধরা পড়েন। পূর্বের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে শিক্ষার্থীরা ধারণা করছেন, চুরির পেছনে একটি সংঘবদ্ধ চক্র কাজ করছে। তবে এসব ঘটনায় প্রশাসনের নীরব ভূমিকাকে দায়ী করছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এতসব ঘটনার পরেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নীরব ভূমিকা তাদের হতাশ করছে। চুরির ঘটনা একাধিকবার ঘটলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত চোরচক্রকে চিহ্নিত করতে বা নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনো দৃশ্যমান পরিবর্তন আনা হয়নি। অনেকেই বলছেন, প্রশাসনের এই উদাসীনতা শিক্ষার্থীদের জানমালের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
সাইকেল চুরির ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে রয়েছেন আইন বিভাগের মেহেদী ও শান্ত, ইতিহাস বিভাগের মোমিন, ফিন্যান্স বিভাগের তাইজুল, দর্শন বিভাগের হৃদয়, মার্কেটিং বিভাগের সবুজ, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের সাদ্দাম, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের মিলন এবং বাংলা বিভাগের সাব্বির আহমেদসহ আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী ১৬তম ব্যাচের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী তাইজুল ইসলাম বলেন, "মাস দুয়েক আগে শহীদ সাজিদ ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে আমার সাইকেলটি চুরি হয়। পরবর্তীতে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি। কিন্তু আশানুরূপ কোনো ফলাফল পাই নি।" তিনি আরও বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উচিত শিক্ষার্থীদের জানমালের কথা বিবেচনা করে নিরাপত্তা আরো জোরদার করা। বিশেষ করে, পার্কিং জোনে টোকেন সিস্টেম চালু করা। এতে একজনের সাইকেল আরেকজন নিয়ে যেতে পারবে না।"
বাংলা বিভাগের ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ জানান, "বেশ কিছুদিন আগে আমার সাইকেলটিও ক্যাম্পাস থেকে চুরি হয়ে যায়। সেসময় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় চাইলেও কাউকে কিছু বলতে পারি নি। এখন আমাকে ৪০ মিনিট পায়ে হেঁটে গিয়ে টিউশন করাতে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উচিত, ভবিষ্যতে যেন কেউ এরকম আমার মতন ভুক্তভোগী না হয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা।"
দর্শন বিভাগের ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হৃদয় ইসলাম বলেন, “সম্প্রতি আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে সাইকেল চুরির হারটা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমার সাইকেলটাও ঠিক একই রকমভাবে চুরি হয়। কিন্তু এ ব্যাপারে প্রশাসন থেকে তেমন কোনো সহযোগিতা আমরা পাই নি। আশা করব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিষয়টি খুব গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে।"
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল ইসলাম বলেন, "এ পর্যন্ত কতগুলো সাইকেল চুরি হয়েছে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য আমাদের কাছে নেই। আন্ডারগ্রাউন্ডে সাইকেল রাখতে নিষেধ করে রেজিস্ট্রার একাধিকবার চিঠি দিয়েছেন। সেখানে নিরাপত্তা প্রহরীর অভাব রয়েছে। শিক্ষার্থীদের সচেতন হওয়া উচিত।”
পার্কিং জোনে টোকেন সিস্টেম চালুর ব্যাপারে তিনি বলেন, "প্রতিদিন একটি দুটি করে সাইকেল চুরি হচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে, নিরাপত্তা জোরদারে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে।”