কতিপয় দুষ্কৃতিকারী ছেলেকে আঘাত করে হত্যা করে এবং হত্যাকান্ডটি ফাঁস হিসাবে চালিয়ে দিয়ে প্রকৃত ঘটনা অন্য দিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা করার অভিযোগ এনে ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এক হতভাগী মা মোছাঃ মোর্শেদা বেগম আখি। এসময় মামলা নিতে পুলিশের গড়িমসিরও অভিযোগও করেন তিনি।
আজ (২৬ এপ্রিল) দুপুরে রংপুর নগরীর সিটি প্রেসক্লাব রংপুরের মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তাঁর পক্ষে বড় ছেলে মোস্তাফিজার রহমান।
লিখিত বক্তব্যে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার হয়বতপুর এলাকার মৃত মোসলেম উদ্দিনের স্ত্রী মোর্শেদা বেগম আখি বলেন, ১৯৯৮ সাল থেকে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে আমার দেবর ও শশুর শাশুড়ি এবং প্রতিবেশি চাচা শশুর এর পরিবারের সদস্যদের সাথে বিরোধ চলে আসছে। এরই মধ্যে আমার স্বামী মোসলেম উদ্দিন ১২ বছর আগে মারা যান। স্বামী মারা যাওয়ার পর অনেক কষ্ট করে দুই ছেলেকে বড় করেন। এরমধ্যে বড় ছেলে মোস্তাফিজার (৩০)সহ বড় ছেলের স্ত্রী এবং ছোট ছেলের ঘরের নাতি আবির মিয়া (৮) কে নিয়ে কর্মের জন্য ঢাকায় যান। আর ছোট ছেলে মুছা মিয়া স্ত্রীকে নিয়ে মিঠাপুকুরের হয়বতপুর এলাকায় বসবাসকালীন তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। পরবর্তিতে ছোট ছেলে মুছা তার দাদা দাদীর আশ্রয়ে থাকা শুরু করেন। মা মোর্শেদা বেগম আখির সাথে নিয়মিত কথা হতো। ছোট ছেলে জমির ধানের উপর কয়েকজনকে টাকা ধার দিয়েছেন, সেই ধার নেওয়া টাকা ফিরত দিতে গরিমসি করছেন বলে জানান তার মা।
এরই মধ্যে গত ১৩ মার্চ ফোনে জানতে পারেন মুছাকে কে বা কাহারা মেরে ঘরে ঝুলিয়ে রেখেছে। এ খবর পেয়ে তিনি রংপুরে চলে আসেন। আসার পর ছেলের মুখটা দেখতে চাইলে দেবররা দেখাতে অস্বীকৃতি জানায়। তারপরও জোরপূর্বক তিনি ও বড় ছেলে মুছার মুখ দেখেন। এসময় ছেলের দুই হাতের কজির উপরের রক্তাক্ত কাটার দাগ দেখা যায়। পরে ময়না তদন্ত ছাড়া লাশ দাফনের জন্য বাধা দিলে দেবরেরা হুমকি ধামকি দিয়ে লাশ দাফন করে।
ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে রংপুর মিঠাপুকুর থানা ও বৈরাতিগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িতে একাধিকবার অভিযোগ দিতে গেলে সেখানে কর্মরত পুলিশ মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। বৈরাতি পুলিশ ফাঁড়ির এস আই রবিউল ইসলাম বলেন এ বিষয়ে একটি মামলা হয়েছে। সেই সাথে তিনি একটা মামলা নম্বরও দেন। পরে ঐ মামলা বিষয়ে যাচাই বাছাই করে কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
নিহতের মা মোর্শেদা বেগম আখি বলেন, আমার ধারনা কতিপয় দুষ্কৃতিকারীরা আমার ছেলেকে আঘাত করে হত্যা করে এবং হত্যাকান্ডটি ফাঁস হিসাবে চালিয়ে দিয়ে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা করছেন। এসময় তিনি ছেলে হত্যার প্রকৃত তথ্য উদঘাটনের স্বার্থে মামলা নিয়ে প্রকৃত হত্যাকারীকে গ্রেফতার করে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান তিনি।
এ বিষয়ে বৈরাতিগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির এস আই রবিউল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি জানারপর ঘটনাস্থলে গিয়ে সবার সাথে কথা বলা হয়। পরিবারের অন্যান্য সদসদের অনুমতি সাপেক্ষে কবর দেয়ার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। তাছাড়া সেই ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে এবং রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। মামলা নিতে গড়িমসি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিহতের মা তো তখনই মামলা করতে পারতো। এতদিন পর কেন। তাছাড়া স্পষ্টই তো এটা ফাঁসি দেয়া ঘটনা।
অন্যদিকে মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ঘটনা বিষয়ে আমি তেমন কিছু জানি না। আর মামলা করতে কেউ আসলে আমরা কেন মামলা নিবো না। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।