রাজশাহীর উপকন্ঠ মতিহার থানাধীন বামনশিকড় পশ্চিমপাড়া গ্রামে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে একশটির অধিক লাউগাছ কর্তনের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী বাগান মালিক আবু বাক্কার একটি এনজিও থেকে অর্থ লগ্নি করে অন্যান্য মৌসুমের মতো এবারও দশ কাঠা জমিতে লাগিয়েছিলেন লাউ গাছ। প্রতিবছর এই পারিবারিক বাগান থেকে লাউ আবাদ করে অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা লাভবান হলেও; এবার সেই অর্থপ্রাপ্তির বিপরীতে আবু বাক্কারের ঘাড়ে চেঁপে বসেছে লোকসানের পাল্লা। তার উপর আছে এনজিও থেকে নেয়া অর্থের হিসেব নিকেষ।
জমিজমা, সম্পত্তি ও পারিবারিক কিছু বিষয় নিয়ে মামা আব্দুল আজিজ ও তার পরিবারের সাথে সৃষ্ট হওয়া পূর্ব শত্রুতার জেড়ে রাতের আধারে কর্তন গেছে প্রায় শতাধিক লাউ গাছ। এই বাগান থেকে আবু বাক্কারের প্রতি মৌসুমে উপার্জন হতো প্রায় লাখখানেক টাকা। পবা উপজেলাধীন পারিলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে মৌখিকভাবে গাছ কর্তনের বিষয়টি অবগত করেও কোন প্রকার বিচার বা সুফল না পেয়ে অবশেষে গত ২৩-০৪-২০২৫ ইং তারিখে মতিহার থানায় মামা আব্দুল আজিজ ও মামাতো ভাই বাবু কে বিবাদী করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বাক্কার।
ভুক্তভোগী ও ক্ষতিগ্রস্থ আবু বাক্কার কবি কাজী নজরুল ইসলাম কলেজে চতুর্থ শ্রেণীর একজন কর্মচারি। বেতনের টাকা দিয়ে এই উচ্চমূল্যের বাজারে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় বলেই পৈত্রিকভাবে পাওয়া বাড়ির পাশের দশকাঠা জমিতে প্রতিবছর আবাদ করে কোন না কোন সবজি। বিগত কয়েক বছর ধরে নিজের জমিতে তিনি লাগাচ্ছেন লাউ গাছ। বাক্কার জানান, এবছর গেলবারের চাইতে অনেক বেশি লাউ ধরেছিল। মামা আজিজ ও তার ছেলে বাবু পূর্ব শত্রুতার জেড় ধরে প্রতিহিংসাবশত রাতের আধারে গাছের গোড়া কেটে বড় বড় লাউগুলো নিয়ে গেছে। পরেরদিন বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টো হুমকি ধামকি ও গালিগালাজ করে আমাকে বিতারিত করে। বিভিন্ন মহলে অভিযোগ দিয়েও আমি কোন প্রকার প্রতিকার ও ক্ষতিপূরণ পায়নি। তাই অবশেষে মতিহার থানায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। সংসারে কিছুটা স্বচ্ছলতা ফেরাতে চাকরির পাশাপাশি নিজেকে কৃষিকাজ ও আবাদ করে থাকেন বলে জানান আবু বাক্কার। লাউ বিক্রি করে বাক্কারের বেশ ভালই লাভ হতো। চাকরির পাশাপাশি কৃষিতে তার এমন সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন গ্রামের অনেকেই।
জানতে চাইলে পারিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাঈদ আলী মোর্শেদ বলেন, বিষয়টি আমাকেও অবগত করা হয়েছিল। কিন্তু অভিযুক্ত আব্দুল আজিজ ও তার পরিবারের অনেকেই মানবিক না। বিবদমান বিষয়টি নিয়ে আজিজ কোন প্রকার মীমাংসা করতে রাজি না। তাছাড়া তিনি কিছুটা অন্যরকম। তাই ভুক্তভোগী বাক্কারকে সংশ্লিষ্ট থানাতে লিখিত অভিযোগ করার উপদেশ আমি দিয়েছি। গ্রামের গণ্যমান্য ও স্থানীয়রাও আব্দুল আজিজ সম্পর্কে প্রায় একইরকম মন্তব্য করেন।
সরেজমিনে বাক্কারের লাউ ক্ষেতে দেখা যায়, ক্ষেতের গাছগুলি গোড়া থেকে কেটে ফেলা হয়েছে। লাউ গাছগুলো মাচার ওপর নুয়ে পড়ে আছে। অনেকগুলোর পাতা মরে গেছে। ছোট ও মাঝারি আকৃতির কয়েকটা লাউ গাছে ঝুলছে। বাক্কার বলেন, এবার ১৬ শতাংশ জমিতে হাজারি জাতের লাউয়ের চাষ করেছেন তিনি। চাকরির ব্যস্ততার সময় তার স্ত্রী ও সন্তানরা ক্ষেতের দেখাশোনা ও পরিচর্যা করেন। আমি অফিস থেকে আসার পর বাগানে সময় দেই। বাক্কার অভিযোগ করে আরো বলেন, তার মামা আজিজ ও তার ছেলেরা শত্রুতা ও প্রতিহিংসাবশত বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ( বিএমডিএ) বসানো ডিপ থেকে আমাকে পানি নিতে দেয়না। আমি অনেকদূর থেকে পাইপের মাধ্যমে বাগানে পানি দিই। আমি যেনো সরকারি ডিপ থেকে পানি নিতে না পারি সেজন্য মাঝেমধ্যেই আজিজ ও তার ছেলে বাবু সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে আমার বাগানের আশেপাশে দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দেয়।
আবু বাক্কারের দেয়া তথ্য ও থানায় করা অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, “জমি কেনা ও কথা কাটাকাটির জেরে গত ২২-০৪-২০২৫ ইং তারিখে গভীর রাতে বড় বড় ১০০ লাউ চুরিসহ গাছ কেটে ফেলেছে তার মামা আব্দুল আজিজ। এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে আজিজের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার পরিবারের কেউ এবিষয়ে মুখ খুলতেও রাজি হয়নি। অবশেষে মোবাইল নাম্বার সংগ্রহে করে অভিযুক্ত আব্দুল আজিজকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা।
এদিকে লাউ গাছের সাথে এমন শত্রুতা মেনে নিতে পারছেন না গ্রামের সাধারণ মানুষও। তাদের দাবি এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা সহ ক্ষতিগ্রস্থ বাক্কারকে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে দিলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।
জানতে চাইলে মতিহার থানার অফিসার্স ইনচার্জ মতিয়ার রহমান বলেন, আবু বাক্কারের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।