বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত শহর কক্সবাজারে পরিবেশগত ভারসাম্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। সৈকতের লাবণী বীচের প্রবেশমুখে বালিয়াড়িতে জেলা প্রশাসকের মালিকানাধীন জমিতে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ পাবলিক ওয়াশরুম নির্মাণ করে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এতে একদিকে সরকারি জমি দখলের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে সৈকতের প্রাকৃতিক পরিবেশ পড়েছে চরম বিপদের মুখে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসনের নামমাত্র অনুমোদন থাকলেও সেটির মেয়াদ দীর্ঘ ১ বছর আগে শেষ হয়ে গেছে। তাছাড়া ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কোনো ধরনের নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। ফলে সৈকতের পাশে জমে উঠছে আবর্জনা ও অপচনশীল বর্জ্য, যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধ্বংসের পাশাপাশি সাগরের বাস্তুতন্ত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশকর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, বালিয়াড়ির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট করে এ ধরনের অবৈধ স্থাপনা কেবল পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করছে না, বরং পুরো কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পকেও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তারা দ্রুত এসব অবৈধ স্থাপনা অপসারণ ও দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, জেলা প্রশাসকের জমিতে আওয়ামী লীগের কয়েকজন স্থানীয় নেতা প্রশাসনের প্রভাব খাটিয়ে এই প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন আদায় করেছিলেন। মো. শফিক উল্লাহ ও মো. কালু নামের দুই ব্যক্তি জেলা প্রশাসনের বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি থেকে পাবলিক টয়লেট পরিচালনার কার্ড সংগ্রহ করে পরে সোহেল নামের এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেন। অথচ কার্ডে স্পষ্ট উল্লেখ ছিল, এটি বিক্রয়যোগ্য নয়।
কার্ডের মেয়াদ ৩০ জুন ২০২৪ পর্যন্ত হলেও, সোহেল এখনো সেই কার্ড ব্যবহার করে অবৈধভাবে টয়লেট পরিচালনা করে যাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রভাবশালী মহল ও জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহযোগিতায় তিনি লাবণী বীচের জেলা প্রশাসকের পার্কের জায়গা দখল করে বালিয়াড়িতে এই অবৈধ টয়লেট নির্মাণ করেছেন এবং দেদারসে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে সোহেল জানান, তিনি নিজস্ব অর্থায়নে টয়লেটটি নির্মাণ করেছেন এবং কার্ড নবায়নের জন্য আবেদন করেছেন।
এ বিষয়ে কক্সবাজার পর্যটন সেলের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নাফিস ইনতেসার নাফি বলেন, “সৈকতের অধিকাংশ এলাকায় অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। পুরনো কার্ডগুলোর নবায়ন প্রক্রিয়া চলছে। প্রক্রিয়া শেষে সব অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে প্রশাসনের নিরব ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সচেতন নাগরিকরা। তাদের প্রশ্ন—“বারবার অভিযোগের পরও যদি কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনের দায় কোথায়?”
বিশ্লেষকরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, সৈকতের আশপাশে এ ধরনের অবৈধ স্থাপনা পরিবেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদী বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে কক্সবাজার তার ঐতিহ্য হারাতে পারে বলে তারা সতর্ক করেছেন।