কক্সবাজার শহরের সুগন্ধা পয়েন্টে প্রায় ৩'শো কোটি টাকা মূল্যের সরকারি খাস জমি জবরদখলের চেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে জেলা প্রশাসন। আলোচিত এ জমি পূর্ণদখলের অভিযোগে ইতিমধ্যে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের প্রস্তুতি চলছে।
জেলা প্রশাসক মো. সালাহউদ্দিন জানিয়েছেন, এটি সম্পূর্ণ সরকারের মালিকানাধীন সম্পত্তি এবং ভুয়া দলিল বা জাল খতিয়ান তৈরি করে সরকারি সম্পদ দখলের যেকোনো অপচেষ্টা কঠোরভাবে দমন করা হবে। এই ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করবে।
তিনি বলেন, 'সুগন্ধা পয়েন্টের ওই এলাকায় স্থাপনা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে বেশ আগেই। সম্প্রতি সরকারি ১ নম্বর খাস খতিয়ানের জমিতে দোকানসহ বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের খবর পাওয়ার পরপরই কক্সবাজার সদরের এসিল্যান্ডের নেতৃত্বে সেখানে অভিযান চালানো হয় এবং নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
জানা যায়, ২০০০৩ দাগের ৩৯ দশমিক ৭৮ একর জায়গা ২০১৮ সালে সরকারিভাবে খাস হয়ে যায়। এ দাগের জায়গা কলাতলী থকে শুরু করে লাবনী পর্যন্ত এসে শেষ হয়। উক্ত জায়গায় ব্যক্তি মালিকানাধীন আর কোন জায়গা নেই। দাগের ২ দশমিক ৩ একর জায়গা ১ নং সরকারি খাস খতিয়ানের জায়গা। রীটকারী সাচ্চিদানন্দ সেন গুপ্তের করা মামলায় ( নং ১০৬৫৭) বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে ভুমি অফিস। যার নং ৩৭২৯/২০২৪। পরবর্তীতে ২৪ সালের ১০ নভেম্বর তিন মাসের জন্য সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশ দেন। সময় শেষ হওয়ার পর বর্ধিত সময়ের জন্য ২০২৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারী আবারো সুপ্রিম কোর্টে পটিশন দাখিল করেন ভূমি অফিস।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বর ওই জায়গায় মাটি ভরাট ও বেইজ ঢালাইয়ের খবর পেয়ে পরিদর্শনে গিয়েছিলো কউক। অভিযুক্ত হিসেবে নাম আসে সাচ্চিদানন্দ সেন গুপ্ত ও ওবাইদুল হকের নাম। সেখানে তাঁদেরকে ইমারত নির্মাণ ১৯৫২ এর ১০ (২) ধারা মোতাবেক নকশা নোটিশ প্রদর্শের নোটিশ দেন এবং সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলেন। কিন্তু বেঁধে দেওয়া সময়ে তারা জবাব দিতে পারেননি।
কউকের অথরাইজড অফিসার রিসাদ-উন-নবী জানান, সাইট পরিদর্শন করে মৌখিক ভাবে বর্ণিত ইমারতের অনুমোদিত নক্শা দেখানোর জন্য অনুরোধ করা হলে তারা নকশা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং তাদেরকে সকল প্রকার নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন সুলতানা জানান, দখলকারীরা মহামান্য হাইকোর্টের আদেশের কথা বললেও কোনো বৈধ কাগজপত্র জেলা প্রশাসনের কাছে উপস্থাপন করতে পারেনি। অতএব, নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং ভবিষ্যতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উচ্চপর্যায়ের অনুমতির অপেক্ষা করা হচ্ছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( রাজস্ব) নিজাম উদ্দিন বলেন, সুগন্ধায় সেই জায়গার কাজ বন্ধ করে দিয়ে তাঁদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। হাইকোর্টে তাঁদের করা মামলার বিরুদ্ধে সরকার পক্ষের সুপ্রিম কোর্টের রায় আছে। ওই জায়গায় সরকারের। সেখানে কোনো কাজ করতে পারবে না।
জানা যায়, বেশকিছু দিন আগে সচ্চিদানন্দ সেন গুপ্ত আরও কয়েকজন উকিল নিয়ে কউকের একটি শাখায় যায়। সেখানে তার পক্ষে রিপোর্ট দিতে চাপ সৃষ্টি করে। দীর্ঘ সময় কথা-কাটাকাটির পর তারা ও-ই কর্মকর্তাকে অশালীন ভাষায় কথা বলে বেরিয়ে পড়েন। তারা আচরণের সন্দেহ হলে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে সরকারের নথি জালিয়াতিসহ নানা অসংগতি পায়। এরপর পর কউক সচ্চিদানন্দ'র বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবরে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বলে।
জেলা প্রশাসক আর-ও বলেন, একটি দুষ্টচক্র বিভিন্ন ভুয়া তথ্য তৈরি করে সরকারি সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা করছে। এমনকি রাতের আঁধারেও সেখানে নির্মাণ কাজ চালানোর অপচেষ্টা চলছে বলেও খবর পেয়েছি। খুব শীঘ্রই এর বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসন তার নিজস্ব সম্পত্তি ভূমিদস্যু বা দুষ্টচক্রের হাত থেকে রক্ষার্থে যা যা করা প্রয়োজন, আইন অনুযায়ী সবই করবে। এখানে কোনো অবৈধ দখলদার ছাড় পাবে না বলেও তিনি সাফ জানিয়ে দেন।
উল্লেখ্য, সুগন্ধা পয়েন্টের এই মূল্যবান সরকারি জমি দীর্ঘদিন ধরে একটি প্রভাবশালী মহলের কুদৃষ্টিতে রয়েছে। জাল দলিল তৈরির মাধ্যমে এটি দখলের চেষ্টা নতুন কিছু নয়। তবে, জেলা প্রশাসকের এই সুস্পষ্ট বার্তা এবং কঠোর অবস্থানের ঘোষণা স্থানীয় সচেতন মহলকে আশান্বিত করেছে। তারা আশা করছেন, প্রশাসনের দৃঢ় পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকারি এই সম্পত্তি রক্ষা করা সম্ভব হবে এবং ভূমিদস্যুদের অপচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।