× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা জামায়াত বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

নীলফামারীতে বাণিজ্যিকভাবে পালন হচ্ছে মরুর প্রাণী দুম্বা

মো. সাইফুল ইসলাম, নীলফামারী প্রতিনিধি।

০১ মে ২০২৫, ২২:১৬ পিএম

ছবিঃ সংবাদ সারাবেলা।

মরু অঞ্চলের প্রাণী হলেও বেশ কয়েক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে দুম্বা পালন শুরু হয়েছে। এরই ধারবাহিকতায় দুই বছর আগে দুটি দুম্বা দিয়ে খামার শুরু করেন সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের কাথারিপাড়ার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম কাজল। সৌদি প্রবাসী রেজাউল ইসলাম নয়নের সহযোগিতায় খামারটি গড়ে তুলেছেন তিনি।

দুটি দুম্বা নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও তার খামারে এখন ২৬টি দুম্বা। নতুন ও ভিন্নধর্মী পশুর এই খামার দেখতে প্রতিদিনই বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছুটে আসছেন মানুষ। খামারে দেশি ছাগলের সঙ্গে লালন-পালন করছেন দুম্বাগুলোকে। এসব দুম্বা মূলত কোরবানি ঈদে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।

দুম্বা পালন করে সফল হয়েছেন রবিউল ইসলাম কাজল। এবছর কোরবানিতে এই খামারের ৫টি দুম্বা বিক্রির উপযোগী করে প্রস্তুত করা হয়েছে। রোগবালাই কম হওয়ায় এবং খাবার খরচ সাশ্রয়ী হওয়ার কারণে অনেকেই তার মতো দুম্বা পালনে আগ্রহী হচ্ছেন। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রাণী সম্পদ বিভাগও ছোট পরিসরে এ ধরনের খামার করার পরামর্শ দিচ্ছেন।

সরেজমিন গেলে খোলা মাঠের ঘাস খেতে দেখা যায় দুম্বাগুলোকে। এছাড়াও খামারে দুম্বাদের কাঁচা ঘাস, ভূসি ও খৈল খেতে দেওয়া হচ্ছে। খামারে ছাগল এবং দুম্বাগুলো দেখাশোনার জন্য মাসিক বেতনে দুইজন কর্মচারী কাজ করছেন। মরুর দুম্বাগুলো এক নজর দেখার জন্য দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন সাধারণ মানুষ।

স্থানীয়রা জানান, সচরাচর কেউ দুম্বা পালন করেন না। শখ মেটাতে খরচের পরিমাণ বেশি হলেও ভিন্নধর্মী পশু পালন করছেন রবিউল ইসলাম। তার দুম্বা পালন দেখে এলাকাবাসী ও আগত দর্শনার্থীরা উৎসাহিত হচ্ছেন।

খামারের মালিক মো. রবিউল ইসলাম কাজল বলেন, মোবাইলের মাধ্যমে ফেসবুক ও ইউটিউব দেখে দুম্বা খামার করার উৎসাহ জাগে আমার। একপর্যায়ে আমার বড় ভাইয়ের পরামর্শে তুর্কি জাতের ৮টি দুম্বা ১২ লাখ টাকা দিয়ে ক্রয় করি। ৬ মাস যেতে না যেতেই বাচ্চা দেওয়া শুরু করে দুম্বাগুলো। ২ বছর পর খামারে এখন ২৬টি দুম্বা হয়েছে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা। দুম্বার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি তাই এর ব্যবসা বেশ লাভজনক।ধীরে ধীরে তার খামার সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছেন বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও জানান, মরুর প্রাণী যে আমাদের দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে তা

কখনো ভাবিনি। দুম্বার পাশাপাশি খামারে রয়েছে দেশীয় ও উন্নত জাতের ছাগল। শখের খামার এখন বাণিজ্যিকভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে। খামারটি করে আমি স্বাবলম্বী হয়েছি।  

তিনি মনে করেন, খামারটিতে বাণিজ্যিকভাবে দুম্বা পালন করতে পারলে স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। কোরবানির জন্য প্রস্তুতকৃত প্রতিটি দুম্বার দাম দেড় লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত। এর ওজন ৫০ কেজি থেকে ১০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। কোরবানির জন্য নিতে চাইলে খামার মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, লালন পালন ও খাবারের পদ্বতি সহজ হওয়ায় পরিবারের সদস্যরাই পালন করতে পারেন ফলে বাড়তি কর্মচারী নিয়োগের প্রয়োজন হয়না। একটি পূর্ণবয়স্ক দুম্বা তিন থেকে চার বছরে প্রায় ২০০ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়। প্রতিটি দুম্বার জন্য দৈনিক ৩৫-৪০ টাকার খাবার প্রয়োজন হয়। 

নীলফামারী জেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের ভেটেরিনারি কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ  বলেন, দুম্বা নিয়মিতভাবে ছয় মাস পর পর বাচ্চা দেয়। তিন মাসের একটি বাচ্চার ওজন ৩৫-৪০ কেজি পর্যন্ত হয়, যার বর্তমান বাজারমূল্য ১ লাখ টাকা। একটি দুম্বার গোশত হয়ে থাকে ১০০ থেকে ১৫০ কেজি। এ ছাড়াও দুম্বা পালনে খরচ খুব কম। দুম্বার জন্য প্রতিদিন ৪০-৪৫ টাকার খাবারই যথেষ্ট। সময় মতো ভ্যাকসিন দিলে ঠিক মতো বেড়ে ওঠে। দুম্বাকে দিনে চারবার খাবার দিলেও দুই বেলা ভারী দানাদার খাবার দিতে হয়। সেইসঙ্গে দুই বেলা দিতে হয় কাঁচা ঘাস। গমের ভুসি, ভুট্টা ভাঙা, সয়াবিন, খৈল, জিসিপি লবণ ইত্যাদি দুম্বার প্রিয় খাবার।

সৈয়দপুর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ড. হেমন্ত কুমার রায়ের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, খামারের বিষয়টি শুনেছি তবে খামারটি এখনো দেখা হয়নি। খোঁজখবর নিয়ে পরামর্শ প্রদান করা হবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, দুম্বা ও ভেড়া কাছাকাছি প্রজাতির প্রাণী। দুম্বা মরু অঞ্চলের প্রাণী হলেও এটি সহনশীল। তারপরও শুরুর দিকে ছোট পরিসরে উদ্যোগ নেওয়া সুবিধাজনক। তিনি আরও বলেন, দুম্বা ভেড়ার মতোই দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ছাগল ভেড়ার চেয়ে দুম্বা পালন লাভজনক।কোরবানির সময় এর বাণিজ্যিক চাহিদা বেশ সম্ভাবনাময় বলে জানান তিনি। 

তিনি আরও বলেন, বাণিজ্যিকভাবে কেউ পালন করতে চাইলে সকল ধরনের সহযোগীতা আশ্বাস দেন তিনি।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.