গত ২৮ এপ্রিল “দৈনিক সংবাদ সারাবেলা”-তে প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্ট সংলগ্ন বালিয়াড়ির বালুচরে অবস্থিত একটি অবৈধ ভ্রাম্যমাণ পাবলিক টয়লেট উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন। রবিবার (৪ মে) রাত সাড়ে ৯টার দিকে সৈকতের প্রবেশমুখে অবস্থিত টয়লেটটি উচ্ছেদ করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা পর্যটন সেলের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নাফিস ইনতেসার নাফি।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে টয়লেটটি কোনো ধরনের সরকারি অনুমোদন ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছিল, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ছিল। পর্যটন এলাকার সৌন্দর্য ও পরিবেশ রক্ষায় ধাপে ধাপে সব অবৈধ ভ্রাম্যমাণ পাবলিক ওয়াশরুম উচ্ছেদ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হলে পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। এ ধরনের অবৈধ স্থাপনা শুধু পরিবেশ দূষণ নয়, পর্যটকদের নিরাপত্তা ও অভিজ্ঞতার জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। আমরা নিয়মিত মনিটরিং করছি, কোনো অননুমোদিত কার্যক্রম মেনে নেওয়া হবে না।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, টয়লেটটি থেকে নির্গত অপচনশীল বর্জ্য, দুর্গন্ধ এবং অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার কারণে সৈকতের পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছিল। এতে পর্যটকদের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ব্যাহত হচ্ছিল এবং সৈকতের প্রাকৃতিক ভারসাম্য হুমকির মুখে পড়ছিল।
জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের নামমাত্র অনুমোদন থাকলেও সেটির মেয়াদ দীর্ঘ এক বছর আগে, ২০২৪ সালের ৩০ জুন, শেষ হয়ে গেছে। তদুপরি, ব্যবহার ও পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সরকারি নীতিমালা মানা হচ্ছিল না। ফলে সৈকতের পাশে জমে উঠেছিল আবর্জনার স্তূপ ও অপচনশীল বর্জ্য, যা শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকেই বিনষ্ট করেনি, বরং সাগরের বাস্তুতন্ত্রেও মারাত্মক প্রভাব ফেলেছিল।
তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা যায়, সৈকতের বালিয়াড়িতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা প্রশাসনের উপর প্রভাব খাটিয়ে অনুমোদন আদায় করেন। মো. শফিক উল্লাহ ও মো. কালু নামের দুই ব্যক্তি জেলা প্রশাসনের বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি থেকে ভ্রাম্যমাণ পাবলিক টয়লেট পরিচালনার কার্ড সংগ্রহ করে তা পরে সোহেল নামের এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেন। অথচ কার্ডে স্পষ্টভাবে লেখা ছিল, “বিক্রয়যোগ্য নয়”।
সচেতন মহলের মতে, কক্সবাজারের মতো আন্তর্জাতিক পর্যটননির্ভর অঞ্চলে এ ধরনের অবৈধ স্থাপনা পরিবেশ ও সুনামের জন্যই হুমকি ছিল। যথাসময়ে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া না হলে এসব অব্যবস্থাপনা শহরের পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট করে দেবে এবং পর্যটকদের কাছে কক্সবাজারের গ্রহণযোগ্যতা ও আকর্ষণ মারাত্মকভাবে হ্রাস পাবে।