আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গরু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কিশোরগঞ্জের খামারিরা। ভারতীয় গরু আমদানি না হলে লাভবান হওয়ার আশা তাদের। এবার জেলায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে প্রায় ২ লাখ ১৩ হাজার গবাদিপশু, যা গত বছরের চেয়ে দিগুন বেশি।এদিকে গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় এবার গরুর দামও বেশি হবে বলে জানিয়েছেন খামারিরা।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্যমতে, গত বছর কিশোরগঞ্জে কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৬ হাজার। এবারে এই পশুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৩ হাজারে।
কিশোরগঞ্জ জেলার প্রায় ২৩ হাজার খামারে পশু মোটাতাজা করা হয়েছে।এর মধ্যে ষাড় ৭০ হাজার ৭১ টি,বলদ ৪ হাজার ৬ টি,গাভী ১৮ হাজার ৫৫৯ টি,মহিষ ১ হাজার ২৮৮ টি,ছাগল ১ লাখ ১৩ হাজার ৮৯৬ টি,ভেড়া ৫ হাজার ৫১৬ টি,
দুম্বা ৩৩ টি প্রস্তুত রয়েছে।এবছর মোট চাহিদা ১ লাখ ৮০ হাজার ৯১১ টি পশুর।অবশিষ্ট থাকবে ৩২ হাজার ৪৫৮ টি।
জানা গেছে, জেলার খামারিরা এখন দুধ উৎপাদনের পাশাপাশি বছরজুড়ে উন্নত জাতের গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া মোটাতাজা করছেন। এতে তাদের ভালো আয়ও হচ্ছে। প্রান্তিক খামারিদের দেখাদেখি জেলায় অনেকগুলো বাণিজ্যিক পশু মোটাতাজাকরণ খামারও গড়ে উঠেছে।
স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব পশু দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হবে, যা এখানকার গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে। কাঁচা ঘাস, লতা-পাতা, খৈল ও ভুসি খাইয়ে প্রাকৃতিকভাবে মোটাতাজা করার ফলে দেশজুড়ে এখানকার পশুর চাহিদা বেশি। ইতোমধ্যে গরু কিনতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ভিড় করছেন জেলার বিভিন্ন খামারে।
করিমগঞ্জ উপজেলার সিদলার পাড় গ্রামে অবস্থিত ইয়াসিন এগ্রো ফার্মের মালিক সুমন মিয়া বলেন, এ বছরে আমার খামারে কোরবানির জন্য অনেক গরু দেশীয় পদ্ধতিতে মোটাতাজা করেছি। উৎপাদন খরচ প্রচুর বেড়ে যাওয়ায় এবার কোরবানি পশুর দাম অনেক বেশি চাওয়া হচ্ছে। আমাদের এখানে এক লাখ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা মূল্যের গরু রয়েছে।
সদর উপজেলার খামারি খোকন মিয়া জানান, তাঁর খামারে ২২টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে ১২টি এবার কোরবানির হাটে তুলবেন। করোনাসহ নানা কারণে গত বছর চাহিদা অনুযায়ী অনুযায়ী শারে ৯ হাজার ২৩১ জন পশু বিক্রি করতে পারেননি। এ বছর করোনা নেই। ফলে এবার ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন তিনি।
আবুল হোসেন নামের আরেক ক্রেতা বলেন, “পশুর হাটগুলোতে এক লাখ টাকায় পাঁচ হাজার টাকা হাসিল দিতে হয় ক্রেতাকে। খামার থেকে গরু কিনলে সেই টাকা দিতে হচ্ছে না। তা ছাড়া সুস্থ ও সবল নিশ্চিত হয়েই গরু কিনছেন তারা।
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা:সুভাষ চন্দ্র পন্ডিত বলেন, জেলায় প্রতি বছর কোরবানির চাহিদার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি পশু মোটাতাজা করা হয়। এ বছর ২ লাখ ১৩ হাজার ৩৬৯ টি গবাদিপশু মজুত আছে। এ বছর বাজার ভালো থাকলে প্রায় হাজার কোটি টাকার পশু বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। এখানকার পশু প্রাকৃতিকভাবে মোটাতাজা করা হয় বলে দেশজুড়ে এর ব্যাপক চাহিদা। আমরা খামারিদের সব ধরণের পরামর্শ এবং সহযোগিতা দিচ্ছি।