× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা জামায়াত বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

মুজিব বর্ষ ঘর প্রকল্পে সাগর চুরি

অন্তর দে বিশাল, স্টাফ রিপোর্টার (কক্সবাজার) প্রতিনিধি।

১৪ মে ২০২৫, ১৮:১৬ পিএম । আপডেটঃ ১৪ মে ২০২৫, ২০:৪৮ পিএম

ছবিঃ সংগৃহীত।

“মুজিব বর্ষে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না”— সাবেক পলাতক প্রধানমন্ত্রী তাঁর পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে এই প্রতিশ্রুতি দিলেও, বাস্তবে তা পরিণত হয়েছে দুর্নীতির মহোৎসবে। তারই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজার সদরে মুজিব বর্ষের ঘর প্রকল্পে চলছে সরকারি অর্থ, পাহাড় ও খাস জমি লুটের উৎসব। ঘর নির্মাণ প্রকল্পে নেই কোনো টেন্ডার, নেই স্বচ্ছতা। গরিব ভূমিহীনদের প্রাপ্যতা লুটের অভিযোগ উঠেছে প্রশাসনের একাংশের বিরুদ্ধে।

সূত্র জানায়, ২০২১ সালে কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের পূর্ব হামজার ডেইল, কদমতলী এলাকায় গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ শুরু হয়। পাঁচ ধাপে মোট ৩২২ টি ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রশাসন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, খুরুশকুল তেতৈয়া এলাকার বাসিন্দা মিস্ত্রি জকরিয়া মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা অফিসের অফিস সহকারী ও কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মোহাম্মদ আবছার মিয়াকে ম্যানেজ করে ঘর নির্মাণের দায়িত্ব নেন।

অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিম্নমানের ইট, রড, টিনসহ অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করে এবং নির্মাণ কাজে রোহিঙ্গা শ্রমিক নিয়োগ করে সরকারি অর্থের অপব্যবহার করেন। পাশাপাশি বরাদ্দ পাওয়া সরকারি জমির পাহাড়ি বালু  বিক্রি করেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ইউএনও অফিসের অফিস সহকারী মোহাম্মদ আবছার মিয়া টেন্ডার ছাড়াই পুরো প্রকল্পের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। মিস্ত্রি নিয়োগ, মালপত্র সরবরাহ, এমনকি জায়গা নির্ধারণ পর্যন্ত তাঁর নির্দেশেই হয়। তাকে সহযোগিতা করেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাজ কুমার।

অন্যদিকে, সাবেক ইউএনও সম্রাট খ্রীসা নিজের নামে ও বেনামে ঘর প্রকল্পের টাকা তোলেন। বদলি হয়ে যাওয়ার পর সেই টাকার হদিস নেই। মিস্ত্রি বেতন ও আনুষঙ্গিক খরচ মিটাতে হিমসিম খাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। 

তথ্যসূত্রে জানা যায়, মিস্ত্রি জকরিয়া ও তাঁর আত্মীয়রা দখল করেছেন একাধিক ভূমিহীনদের জন্য বরাদ্দ ঘর। শুধু তাই নয়, রোহিঙ্গা দিয়ে নির্মাণ করিয়ে সেসব ঘর বিক্রিও করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রকৃত ভূমিহীনরা ঘর পাননি, বরং ঘর পেতে দিতে হয়েছে মোটা অঙ্কের ঘুষ—যার একটি বড় অংশ পৌঁছে গেছে ইউএনও অফিসের কর্মকর্তা আবছারের হাতে।

প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৪১ হাজার থেকে ৩ লক্ষ টাকা। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে খরচ হয়েছে তার অর্ধেক এরও কম। টাকাগুলো ভাগাভাগি করে নিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

স্থানীয় কিছু নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতা , সাংবাদিক ও সরকারি কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার অভিযোগও রয়েছে। গোটা প্রকল্পটি যেন প্রভাবশালীদের জন্য এক ‘লুটের সাম্রাজ্যে’ পরিণত হয়েছে।

মিস্ত্রি জকরিয়ার সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, “মুজিব বর্ষের সব ঘর ইউএনও অফিসের আবছার সাহেবের নির্দেশেই নির্মাণ করেছি। ইউএনও অফিস থেকে যা মালামাল পাঠানো হয়েছে, তা দিয়েই কাজ করেছি।” তবে ঘর বিক্রি ও পাহাড় দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। যদিও ঘর বিক্রি ও পাহাড় দখলের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সহকারী ও অঘোষিত ঠিকাদার মোহাম্মদ আবছার মিয়া জানান, “সব কিছু সত্য। তবে মিস্ত্রি জকরিয়া নিজেই মালামাল কেনে। বিল দিলে টাকা দেওয়া হয়।” টেন্ডার ছাড়াই কিভাবে এমন বড় দায়িত্ব দেওয়া হলো—এই প্রশ্নে তিনি দায় চাপান সাবেক ইউএনও সম্রাট খ্রীসার ওপর। 

“সাবেক কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সম্রাট খ্রীসার সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। পাশাপাশি তাকে এসএমএসও পাঠানো হয়েছে। তবে এসব চেষ্টার পরও তার কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।”

এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী বলেন, “মুজিব বর্ষের ঘরের সম্পর্কে আমি তেমন অবগত ছিলাম না। আপনার মাধ্যমে প্রথম জানতে পারলাম। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দীন বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি প্রকল্পে নয়ছয় হয় তবে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.