তিনি শুধু এক গ্লাস পানি দিয়েই থামেননি, জুলফিকারের ক্লান্ত চোখে দ্বিতীয়বার পানির তৃষ্ণা দেখে ফের পানি পান করালেন। ঘটনাস্থল ছিল কয়রা সদর ইউনিয়নের মধুর মোড় এলাকার সানা ইলেকট্রনিক্সের সামনে। পেছনে চোখ রাখতেই দেখা গেল “সার্বজনীন মানবতার বন্ধু, কয়রা, খুলনা” নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ব্যানার।
স্বেচ্ছাসেবায় মানবতার ছোঁয়া, খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কয়রার জামায়াত অফিস থেকে অল্প দূরত্বে রয়েছে এই সংগঠনের কার্যালয়। তাদেরই উদ্যোগে কয়রা উপজেলায় বসানো হয়েছে নিরাপদ সুপেয় পানির ফ্রি বুথ। উপজেলায় রোদের দাবদাহে পথচারী, রিকশাচালক, শ্রমিক ও নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য বিনামূল্যে ঠান্ডা ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আ, ব, ম, আব্দুল মালেক (সভাপতি) ও তৈয়েবুর রহমান (সাধারণ সম্পাদক)-এর নেতৃত্বে সংগঠনটির সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম আসিকুজ্জামান, আকবার আলী, আসলাম হোসেন রাজসহ আরও অনেকেই রয়েছেন।
ছয়টি পয়েন্টে ফ্রি পানির ব্যবস্থা, কয়রা উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি পয়েন্টে স্থাপিত হয়েছে এই পানির বুথ: কয়রা সদর মধুর মোড়,কালনা বাজার মোড়,দেয়াড়া অন্তাবুনিয়া বাজার,বাগালি ইউনিয়ন পরিষদের সামনে, চাঁদ আলী ব্রিজ,আমাদি বাজার।
বুধবার সকাল থেকে একযোগে চালু হয়েছে এসব বুথ। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত যে কেউ এখানে এসে বিনামূল্যে পানি পান করতে পারবেন।
এক মাসের মহতী উদ্যোগ, তিন হাজার মানুষের জন্য পানি প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার মানুষের মাঝে পানি সরবরাহের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন সংগঠনটির শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক। সংগঠনের সভাপতি আব্দুল মালেক বলেন,
“আমাদের উপজেলায় সর্বত্র সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই।গরমে বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের কষ্টের কথা ভেবে আমরা এ উদ্যোগ নিয়েছি। মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে মানুষকে তৃপ্ত করা আমাদের বড় দায়িত্ব।"
শুধু পানি নয়, আরও মানবিক কর্মকাণ্ড ‘সার্বজনীন মানবতার বন্ধু’ সংগঠনটি শুধু পানির ব্যবস্থাই করছে না, বরং তারা নানা রকম সামাজিক ও মানবিক কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—
দুঃস্থদের সেবা,রোগীর পাশে দাঁড়ানো,বাঘ বিধবাদের আর্থিক সহায়তা,বেকারদের কর্মসংস্থান,
বৃক্ষরোপণ,গরিব মেধাবীদের মাঝে বই বিতরণ,সুস্থের কাছ থেকে অসুস্থের জন্য সাহায্য সংগ্রহ,মানবতার বন্ধুরা সত্যিকারের 'বন্ধু' হয়ে পাশে আছে । একটি গ্লাস পানি কখনো শুধু তৃষ্ণা মেটানোর বস্তু নয়, কখনো তা হয়ে ওঠে মানবিকতার প্রতীক। কয়রা উপজেলার এই উদ্যোগ সেই কথাই যেন আবারও প্রমাণ করল।