উপজেলার শমশেরনগর চৌমুহনা থেকে কমলগঞ্জ অভিমুখী হাজী মো. উস্তওয়ার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের বিপরীতে রাস্তার সরকারি জমি দখল করে প্রায় ১৫/২০ বছর ধরে গড়ে তোলা হয়েছে বেশ কয়েকটি দোকান। এসব দখলকৃত জমিতে চা-পান, রেস্তোরাঁ, স্টেশনারী, ভলক্যানাইজিং, সাইকেল মেকাররের দোকান, সিএনজি অটোরিকশা চালক সমিতি, মাইক্রোবাস (লাইটেস), ট্রাক লরি পিকআপ ভ্যান চালক সমিতির অফিস।
সরেজমিন ঘুরে আলাপকালে না প্রকাশ না করে কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, কালিবাড়ি মার্কেটের বিপরীতে চা বাগান ঝিলের সীমানা প্রাচীরের বাহিরে গত ১০/১৫ বছর আগে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি রাস্তার সরকারি জমি দখল করে সেখানে দোকান স্থাপন করে, পরে এসব দোকান সিকিউরিটির টাকা নিয়ে ভাড়া দিয়েছেন। এভাবে পর্যায়ক্রমে রাস্তার সরকারি জমিতে একটি ভলকেনাইজিং, ২ টি রেস্তোরাঁ, ২টি স্ট্যাশনারী দোকান, সাইকেল মেকারের দোকান, সিএনজি অটোরিকশা চালক সমিতি, মাইক্রোবাস (লাইটেস) চালক সমিতি ও ট্রাক, পিকআপ চালক সমিতির অফিস স্থাপন করা হয়। এ পথে সরকারী অনেক কর্মকর্তা ও সড়ক জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা যাতায়াত করলেও এসব স্থাপনা উচ্ছেদে কোন পদক্ষেপ নেন না।
অপরদিকে দখলকৃত জমির পিছনে শমশেরনগর কাঁচা বাজারের ময়লা আবর্জনা ফেলে চা বাগানের ঝিলের পানি প্রবাহের নালার মুখ বন্ধ হয়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা হয়। ময়লা আবর্জনায় নালার মুখ বন্ধ হওয়ায় মাছ বাজারসহ বাসা বাড়ির ময়লা কালো পানি রাস্তার উপরে চলে আসছে। ফলে এসব ময়লা পানি মাড়িয়ে চলাচলে এ এলাকায় জনদুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।
শমশেরনগর-কমলগঞ্জ সড়কের আইডিয়াল কিন্ডার গার্টেন স্কুল ও হাজী মো. উস্তওয়ার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মধ্যবর্তী চা বাগানের ঝিল। প্রতিদিন ময়লা আবর্জনা ফেলে এ ঝিলের পানি প্রবাহের দেয়ালের বাহিরের ও ভিতরের নালার মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। গত টানা কয়েক মাস খরা ও অনাবৃষ্টি থাকায় ঝিল শুকিয়ে যায়। তবে দেয়ালের বাহিরের অংশ দিয়ে মাছ বাজারসহ আবাসিক এলাকার বাসা বাড়ির ময়লা পানি প্রবাহিত হয়। নালার মুখ বন্ধ থাকায় বাজারের নালার কালো ময়লা পানি এখন রাস্তা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে থাকে। এ অবস্থায় এ পথে চলাচলকারী স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, মসজিদের মুসল্লী ও সাধারণ মানুষজন ময়লা পানি মাড়িয়ে চলাচল করছেন। অনেক সময় এ পথে চলাচলকারী দ্রুতগামী যানবাহনের চাকায় ময়লা পানি মানুষজনের গায়ে ছিটকে পড়ে।
হাজী মো. উস্তওয়ার বারিখা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরে আলম সিদ্দিক বলেন, ‘তার স্কুল এখন এসএসসি পরীক্ষা চলছে। নালার মুখ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা রাস্তার ময়লা পানি মাড়িয়ে কেন্দ্রে আসছে।’
আইডিয়াল কিন্ডার গার্টেন স্কুলের শিক্ষক আইনুন নিশাত বলেন, ‘গত বছরও ভরা বর্ষায় এ নালার মুখ বন্ধ থাকায় স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে হয়ে ঝিলের পানি তাদের স্কুলের ও আশাপাশের বাসা বড়িয়ে উঠেছিল। পরে এলাকাবাসী মিলে নালার মুখ পরিষ্কার করলে আবারও নালায় স্বাভাবিক পানি প্রবাহ হলে পানি নেমে যায়।’
শমশেরনগর চা বাগান ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইয়াকুব আলী বলেন, ‘প্রতি বছরও বাজার ময়লা আবর্জনা ফেলে ঝিলের পানি প্রবাহের নালার মুখ বন্ধ করা হয়। চা বাগানের বিভিন্ন টিলার বৃষ্টির পানি নেমে এ নালা দিয়ে প্রবাহিত হয়। এখন নালার মুখ না খুলে দিলে ঝিলের জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে চা প্লান্টেশন এলাকায় পানি প্রবেশ করবে।
তিনি আরও বলেন, গত এক সপ্তাহে দুই বার চা বাগান থেকে এ নালার মুখ পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে দেয়ালের বাইরের অংশের নালার মুখ জুড়ে রাস্তার জমি দখল করে কিছু অবৈধ দোকার স্থাপন করায় তারা আরও আবর্জনা পরিষ্কার করতে পারেননি।’
বাজার ইজারাদার আসাইদ মিয়া বলেন, ‘তিনি ১৪৩২ বাংলার জন্য ৭২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকায় বাজার ইজারা নিয়েছেন। মাত্র ১০/১৫ দিন হলো তিনি বাজারের দায়িত্ব নিয়েছেন। আগের ইজারাদার নালা নিয়মিত পরিষ্কার করে রাখেনি বলে এ ময়লা আবর্জনার স্তুপ হয়েছে। তারপরও তিনি দ্রুত নালার মুখের ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করিয়ে নালার মুখ পানি প্রবাহের জন্য মুক্ত করে দিবেন।’
তবে এ বিষয়ে দখলদাররা বক্তব্য নিতে গেলে তারা কোনো কিছু বলতে চায়নি।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাখন চন্দ্র সূত্রধর এ সমস্যার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘দুই-একদিনের দিনের ভিতরে এসব বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’