× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা জামায়াত বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

পদ্মানদীর পাড় ও ফসলী জমি থেকে মাটি চুরি,প্রশাসন নিরব ভূমিকায়

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি।

২০ মে ২০২৫, ২০:০১ পিএম

ছবিঃ সংগৃহীত।

বিএনপি ও সদ্য নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামীলীগ নেতারা মিলেমিশে পদ্মানদীর পাড় ও ফসলী জমি থেকে কাটছে মাটি। সেই মাটি ব্যবহার হচ্ছে ইটভাটায় ও ভরাটের কাজে। গড়ে উঠেছে মাটি চোর সিন্ডিকেট। মাঝেমধ্যে উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা আদায় করলেও বন্ধ হচ্ছে না মাটি কাটা। পদ্মানদীর পাড় ও ফসলের জমি থেকে চুরি করে মাটি কাটার জন্য গড়ে উঠেছে শক্তিশালি মাটি চোর সিন্ডিকেট।

সেই সিন্ডিকেটের সঙ্গে উপজেলা প্রশাসনের চলছে চোর-পুলিশ খেলা। উপজেলা প্রশাসন অভিযানে গেলে মাটি কাটা বন্ধ থাকে। চলে আসলেই মাটি কাটার মহাযজ্ঞ চলে। এতে প্রতিমাসে অন্তত অর্ধকোটি টাকার মাটি বিক্রয় হচ্ছে।

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের পদ্মানদীর তীরবর্তি অন্তত ২৬ টি পয়েন্টের এই চিত্র প্রতিদিনের।

সরেজমিনে উপজেলার লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের নবীনগর, কৈকুন্ডা, বিলকেদা, লক্ষ্মীকুন্ডা, কামালপুর গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, পদ্মানদীর তীরে অন্তত ৫২ টি ইটভাটা রয়েছে। এই ভাটাগুলোতে ইট তৈরীর জন্য পদ্মানদীর ২৬ টি পয়েন্ট থেকে স্কেভেটর দিয়ে দিন রাত (২৪ ঘন্টা) মাটি কাটা হচ্ছে। মাটিগুলো ড্রাম ট্রাক, ট্রাক্টর ও স্ট্যায়ারিং গাড়িতে করে ভাটায় নেওয়া হচ্ছে। শুধু ইটভাটাতে নয় ভরাটের কাজের জন্যও বিক্রয় করা হচ্ছে এই মাটি।

এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবী, পদ্মানদীর পাড় ও ফসলের জমি থেকে মাটি চুরি করে ইটভাটা ও ভরাটের কাজে বিক্রয় করার ঘটনা লক্ষ্মীকুন্ডায় দীর্ঘদিনের। তবে বিগত আওয়ামীলীগের সাড়ে ১৫ বছরে যে পরিমান মাটি কাটা হয়েছে বর্তমান সরকারের এই সময়ের মধ্যে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা আওয়ামীলীগের নেতাকমর্ীদের সঙ্গে মিলেমিশে তার চেয়েও বেশি মাটি কেটেছে। কারণ আগে আওয়ামীলীগের মাটি চোরের চক্রটি চুরি করে মাটি কাটতো রাত ৮ টার থেকে ভোর পর্যন্ত। সারাদিন মাটি কাটা বন্ধ থাকতো। কিন্তু বর্তমানে বিএনপির নেতাকমর্ীরা আইনের প্রতি কোনরুপ তোয়াক্কা না করে দিন রাত মাটি কেটে যাচ্ছে।

ইটভাটার মালিক ও এলাকাবাসীদের সুত্রে জানা যায়, আওয়ামীলীগের সময় প্রয়াত ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু ও নুরুজ্জামান বিশ্বাস এমপির সময় লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান শরীফের নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ নেতা জামিরুল, জয় ও কামাল হোসেন ওরফে মাটি কামাল। লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের ইটভাটাগুলোর অধিকাংশ মালিকই আওয়ামীলীগ সমর্থিত। শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীসহ লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান শরীফ আত্মগোপনে চলে যান। সেই কারণে মাটি চুরির সিন্ডিকেটটি বর্তমানের বিএনপির নেতাকর্মীদের হাতে চলে গেছে। চুরির মহাযজ্ঞ একই। শুধু হাত বদল হয়েছে। আর লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়নের মাটি চোর সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা সদস্য পাবনা জেলা বিএনপির আহবায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব। আর হাবিবের পক্ষে মাটি চোর চক্রের সিন্ডিকেট প্রধান কামাল হোসেন ওরফে মাটি কামালের নিকট থেকে প্রতিদিন রাতে টাকা বুঝে নেন উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম রকি।

সুত্রগুলো দাবী, প্রতিদিন ২৬ টি পয়েন্ট থেকে প্রতিটি স্কেভেটর থেকে তোলা হচ্ছে ১০ হাজার টাকা করে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আর এসব পয়েন্ট মাটি টানার জন্য ড্রাম ট্রাক, ট্রাক্টরসহ অন্তত দেড় থেকে দুইশত যানবাহন। সেখান থেকে আদায় হচ্ছে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা। প্রতিদিন পয়েন্টেগুলো টাকা সংগ্রহ করছেন আওয়ামীলীগ নেতা কামালা হোসেন ওরফে মাটি কামাল। তিনি সমস্ত টাকা রাতে হাবিবুর রহমান হাবিবের প্রতিনিধি যুবদল নেতা রফিকুল ইসলাম রকির ব্যক্তিগত কার্যালয় সাহাপুর মন্ত্রীমোড়ে পৌছে দিচ্ছেন মাটি কামাল। সেই টাকার একটি অংশ মাটি কামালের মাধ্যমে থানা পুলিশ, লক্ষ্মীকুন্ডা নৌ পুলিশ ফঁাড়ি, উপজেলা প্রশাসন ও কতিপয় সংবাদকর্মীকে দেওয়া হয়। আর বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম রকি নিজেই জেলা প্রশাসনকে টাকা দিয়ে আসেন।

এই ব্যাপারে মাটি চোর সিন্ডিকেটের প্রধান কামাল হোসেন ওরফে মাটি কামাল দাবী করে বলেন, আমি অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছি। আমি মাটি কাটছি না। খেঁাজ নিয়ে দেখেন কারা মাটি কাটছে।

মাটি চুরি সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণকারী বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিবের নিয়োগকৃত উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম রকি এব্যাপারে মোবাইল ফোনে বলেন, লক্ষ্মীকুন্ডায় ৫২ টি ইটভাটা রয়েছে। ভাটার জন্য ওরা মাটি কাটবেই। মাটি কাটা বন্ধ হবে না। তবে মাটি চোর সিন্ডিকেটের নিকট থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রকি বলেন, এ বিষয়ে কোন কথা বলবো না জানিয়ে মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।

এব্যাপারে পাবনা জেলা বিএনপির আহবায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ইটভাটা থাকলে তো মাটি কাটা চলবেই। মাটি কাটা বন্ধ হবে না। ইটভাটাগুলো যেন বন্ধ না হয় সেই জন্য আমি শুধু একটু ব্যবস্থা করেছি। কোন সিন্ডিকেট আমি নিয়ন্ত্রণ করছি না।

এ ব্যাপারে লক্ষ্মীকুন্ডা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইমরান মাহমুদ তুহিন মাটি চোর সিন্ডিকেটের নিকট থেকে দৈনিক ১৩ হাজার টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, এই তথ্য সঠিক নয়। আমাকে কেউ টাকা দেয় না।

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবীর কুমার দাস বলেন, লক্ষ্মীকুন্ডার ইটভাটাগুলো দূর্গম এলাকায়। উপজেলা প্রশাসন গেলেই তারা পালিয়ে যায়। তারপরও মাঝেমধ্যেই উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিযান চালিয়ে জরিমানা আদা করছেন। আমাদের এই অভিযান চলমান রয়েছে।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.