খুলনার জেলার দক্ষিণ অঞ্চলের সুন্দরবনের কোল ঘেষে লবণাক্ত নদীর পাড়ে শেষ প্রান্তে অবস্থিত এই কয়রা উপজেলা । কয়রার ঐ পাশে দক্ষিণ বেদকাশি এর পরে আর কোন গ্রাম নেই আছে শুধু সুন্দরবন, আছে বঙ্গোপসাগর। এই অফসলী এলাকা জোয়ার ভাটার এলাকা,চব্বিশ ঘণ্টায় দুইবার জোয়ার, দুই বার ভাটা। এভাবেই পালাক্রমে অনাবরত চলতে থাকে জোয়ার ভাটার খেলা।
ঠিক সেই লোকালয়ে গড়ে উঠেছে জনপদ কিন্তু আজও হয়নি টেঁকসই ভেড়িবাঁধ, লবণ পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে সেই আশির দশকের আগপর্যন্ত থেকে আজও যুদ্ধ করে যাচ্ছে কয়রার অসহায় প্রান্তিক।
একটুখানি ঝড়ে একটুখানি জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যায় কত মানুষের কষ্টে গড়া শেষ আশ্রয়তল ও সাধের বাড়ি টুকু, সেই সাথে ফুটান্ত তাজা প্রাণ। যাদের আর কখনো দেখা না মেলে, এভাবেই পানির তলে হারিয়ে যায় অসহায় কত হাজারও পরিবার।হাজতখালি গ্রামের আছিয়া বিবি (৬২)বলেন যখন বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ শুরু হয়, সংকেতের পারত যখন একটার পর একটা উঠতে থাকে তখন এই এলাকার মানুষ সমুদ্রের আঁচড়ে পড়া ঢেউয়ের মাঝে এক নিমিষেই দেখতে পায় তাদের মৃত্যুর দোয়ার। তখন মহিলারা কোলের বাচ্চা টাকে সম্বল করে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায়।তখন তাদের বিধাতার নাম নিয়ে ডাকা ছাড়া তাদের আর কোন উপায় থাকে না।
কয়রায় ০৬ নং উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের ০১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বলেন কাটমারচর ও হাজতখালী গ্রাম দুটিই কপোতাক্ষ নদীর অববাহিকায় অবস্থিত। আইলা,আমপান বিধ্বস্ত গ্রাম দুটির মানুষ গুলি মে মাস এলেই যেন চোখে মুখে ভেসে উঠে এক আতঙ্কের ছাপ।
আইলা, আমপান বিধ্বস্ত গ্রাম দুটির মানুষ বৃষ্টির দিন শুরু হলেই আতঙ্কে থাকে এলাকাবাসী। আজ পর্যন্ত তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেনি। নির্ঘুম রাত কাটে উপকূল পাড়ের মানুষদের। ঝুঁকিপূর্ণ ভেড়ি বাঁধনিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে একাধিকবার কথা বললেও তেমন কোন ফলপ্রসু প্রতিকার না পেয়ে জীবন জীবিকার তাকিদে বাধ্য হয়ে এলাকাবাসীকে নিয়ে নিজেদেরকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো মেরারামত করছে। যাহাতে ইতিপূর্বে যেভাবে তারা অসহায় হয়ে নদীর পানিতে ভেসে চলেছে এমন দিন যেন, আর তাদের না দেখতে হয় তাই তারা নিজেদের উদ্যোগে নিজেরাই ঝুকিপূর্ণ স্থান গুলি মেরামতের কাজ করে চলেছে।