রাজশাহীর চারঘাটে শ্রেণিকক্ষে সিগারেট খাওয়াকে কেন্দ্র করে দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে শুরু হওয়া বিরোধ শেষ পর্যন্ত রূপ নেয় দুই গ্রামের সংঘর্ষে। এতে অন্তত আটজন আহত হন এবং বেশ কয়েকটি বাড়িঘরে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় নাওদাড়া দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় তিন দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার (১৮ মে) সকাল ১১টার দিকে বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে বসে ধূমপান করছিল। বিষয়টি নিয়ে নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর নেতৃত্বে কয়েকজন ওই ছাত্রকে গালিগালাজ করে শ্রেণিকক্ষ থেকে বের করে দেয়। পরে অপমানিত বোধ করে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রটি তার কয়েকজন বন্ধুকে বিদ্যালয়ে ডেকে আনে এবং দুপুর ১২টার দিকে ওই নবম শ্রেণির ছাত্রকে মারধর করে। পরে তাকে উদ্ধার করে চারঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার মীমাংসার লক্ষ্যে সোমবার (১৯ মে) দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের ডেকে সালিস ডাকা হলেও এক পক্ষ না আসায় তা সম্ভব হয়নি। ওই রাতেই পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়।
অভিযোগ রয়েছে, ১৯ মে রাত ৮টার দিকে নবম শ্রেণির আহত ছাত্রের স্বজনেরা শ্রীখন্ডী গ্রামের লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে চারা বটতলা গ্রামের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ও তার বন্ধুর বাড়িতে হামলা চালান। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় চারা বটতলা গ্রাম থেকেও মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে শ্রীখন্ডী গ্রামে হামলা চালানো হয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত আটজন আহত হন এবং বেশ কিছু বাড়িঘর ভাঙচুরের শিকার হয়।
চারা বটতলা গ্রামের বাসিন্দা মিঠু আলী অভিযোগ করে বলেন, “আমি ঘটনার কিছুই জানি না। অথচ শ্রীখন্ডী গ্রামের লোকজন এসে আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে প্রায় ১১ লাখ টাকার ক্ষতি করেছে।”
অন্যদিকে, শ্রীখন্ডী গ্রামের রাকিবুল ইসলাম বলেন, “নবম শ্রেণির ছাত্রকে মারধরের ঘটনার প্রতিবাদে আমরা অষ্টম শ্রেণির ছাত্রের বাড়িতে গিয়েছিলাম। কিন্তু চারা বটতলা গ্রামের লোকজন আমাদের ওপর পাল্টা হামলা চালায়।”
পরিস্থিতি বিবেচনায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওয়াজ নবী জানান, এলাকায় এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে মঙ্গলবার থেকে বিদ্যালয়ে তিন দিনের সংরক্ষিত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় বিদ্যালয় খোলা হবে।
বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর বাবা শহিদুল ইসলাম বলেন, “স্কুলে শৃঙ্খলা নেই, কর্তৃপক্ষ উদাসীন। এখন আবার ছুটি, এতে পড়ালেখায় বড় ক্ষতি হচ্ছে।”
এ ঘটনায় চারঘাট মডেল থানায় একটি মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন থানার ওসি মিজানুর রহমান। তিনি জানান, নাওদাড়া গ্রামের মিঠু সরকার বাদী হয়ে শ্রীখন্ডী গ্রামের ২২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৫০-৬০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন।