কক্সবাজার বিমানবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরের অংশ হিসেবে কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম কুতুবদিয়া পাড়ায় অবস্থিত ১০৭টি পরিবারকে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে অপসারণ করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে ভূমি হস্তান্তর করেছে জেলা প্রশাসন।
বুধবার (২১ মে) বিকালে আনুষ্ঠানিকভাবে এই হস্তান্তর সম্পন্ন হয়।
জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় মোট ৬৮১.৭২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রানওয়ের কেন্দ্ররেখা থেকে মাত্র ৬০০ ফুট দূরত্বে থাকা প্রায় ২৫ একর (কম/বেশি) জমিতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছিল এই ১০৭টি পরিবার। আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা মানদণ্ড অনুযায়ী এই এলাকা জনশূন্য করাই ছিল সময়ের দাবি।
জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে গত ১৭ মে থেকে শুরু হয়ে ২১ মে পর্যন্ত পাঁচ দিনব্যাপী স্থানান্তর কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কক্সবাজার সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরীর নেতৃত্বে, সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন সুলতানা এবং ৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিদিন অভিযানে অংশ নেন। বেবিচক কক্সবাজারের কর্মকর্তাগণ, ৭০ জন আনসার সদস্য, ১৫ জন র্যাব সদস্য এবং ১৫ জন পুলিশ সদস্যও অভিযানটি সফল করতে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (PD) সার্বিক সহযোগিতা ও পর্যবেক্ষণ করেন।
প্রায় ১০৭টি পরিবারের মতো বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে শান্তিপূর্ণভাবে অপসারণের এই নজির কক্সবাজারে আগে কখনও দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে, সহানুভূতির সঙ্গে, মানবিক আচরণ বজায় রেখে অপসারণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্থানান্তরিত পরিবারগুলোর জন্য বিশেষ সহায়তা প্রদান করা হয়। প্রত্যেক পরিবারকে মালামাল বহনের জন্য ট্রাক ও শ্রমিক সরবরাহ ছাড়াও দেওয়া হয় ২৫ কেজি চাল, ৫ লিটার সয়াবিন তেল, একটি করে ত্রিপল এবং তাবু।
জেলা প্রশাসনের এই মানবিক ও দায়িত্বশীল ব্যবস্থাপনার ফলে কোনো ধরনের অপ্রতিকর ঘটনা ছাড়াই এই জটিল উচ্ছেদ কার্যক্রম সফলভাবে শেষ করা সম্ভব হয়েছে। এর ফলে অধিগ্রহণকৃত জমির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বুঝে পেয়েছে বেবিচক।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জানান, এই ভূমি হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে একটি বড় মাইলফলক অর্জিত হলো। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম আধুনিক বিমানবন্দরে পরিণত হবে এবং কক্সবাজারকে একটি পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলবে।