বিদেশফেরতরা জাতির এক সম্ভাবনাময় শক্তি—এ শক্তিকে সঠিক পথে পরিচালিত করলেই গড়ে উঠবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, বলে মন্তব্য করে নরসিংদীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী । তিনি বলেন “বিদেশফেরতরা আমাদের দেশের জন্য কেবলমাত্র রেমিট্যান্সের অর্থনৈতিক উৎস নয়, বরং তারা জাতির সম্ভাবনার বাহক। তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থেকে অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করে দেশে ফিরে আসেন। এই অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়, তাহলে আমাদের দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া আরও বেগবান হবে।
আজ মঙ্গলবার (২৭ মে ২০২৫) ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের উদ্যোগে নরসিংদীর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নরসিংদীর জেলা প্রশাসক এ কথা বলেন। নিজের বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘বিদেশ—ফেরতদের ডাটাবেজ তৈরি করতে হবে যাতে তাদের পুনরেকত্রীকরণের কাজটা সহজ হয়। যারা পুনরায় বিদেশ যাবে তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত করতে হবে যাতে তারা বেশি বেতনে কাজ করতে পারেন।’
আয়োজনের সভাপতিত্ব করেন নরসিংদী জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবু তাহের মো: সামসুজ্জামান বলেন, “আমরা প্রবাসীদের শুধু রেমিট্যান্স পাঠানোর যন্ত্র হিসেবে দেখলে চলবে না। বিদেশ যাওয়ার আগেই যদি সঠিক তথ্য, প্রশিক্ষণ ও মানসিক প্রস্তুতি দেওয়া যায়, তাহলে শুধু তাদের ব্যক্তিজীবন নয়—দেশের সামগ্রিক অভিবাসন ব্যবস্থাপনা আরও শক্তিশালী হবে। ব্র্যাকের উদ্যোগগুলো এই খাতে ইতিবাচক পরিবর্তনের বার্তা দিচ্ছে। রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান আমরা দিতে পারছিনা। ব্র্যাক বিদেশ—ফেরতদের মনোসামাজিক কাউন্সেলিং সেবা দিচ্ছে যা খুবই ভালো একটি উদ্যোগ। এখন আমরা যদি বিদেশে যাওয়ার আগেও সম্ভাব্য কর্মীদের কাউন্সেলিং করাতে পারি তাহলে বিদেশে গিয়ে আমাদের দেশের মানুষ কম ব্যর্থ হবে।
অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সিনিয়র ম্যানেজার সজিব কুমার পান্ডে। তিনি নিজের বক্তব্যে কর্মশালায় উপস্থিত সবাইকে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সামগ্রিক কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা দেন। পাশাপাশি ইম্প্রুভড সাসটেইনেবল রিইন্টিগ্রেশন অব বাংলাদেশি রিটার্নি মাইগ্রেন্টস (প্রত্যাশা ২)‘ প্রকল্পের সেবাসমূহ কীভাবে নরসিংদী ও দেশের অন্য জেলাগুলোতে বিদেশ—ফেরতদের সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করছে সে তথ্য তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নরসিংদীর সিভিল সার্জন ডা. সৈয়দ মো: আমিরুল হক বলেন, ‘বিদেশ—ফেরতদের মধ্যে আমরা সাইকোসোমাটিক ও যৌন রোগের উপসর্গ বেশি দেখছি। তাদেরকে নিজেদের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার বিষয়ে সচেতন করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম এর নরসিংদী জেলার এমআরএসসি কো—অর্ডিনেটর মোঃ শাদমান সাকিব কোরেশী, রিজিওনার কো—অর্ডিনেটর মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মোঃ দাউদুল হক, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক মো: ইউসুফ আলী, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মো. মোখলেছুর রহমান, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ ফয়সাল আযম, সহকারী জেলা তথ্য অফিসার আফসানা আখতার, ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সহকারী পরিচালক মোঃ আমিনুল হক, শীলমান্দী যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রিন্সিপাল জাহাঙ্গীর আলম।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার ও নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট রাফিউর রহমান, এনডিসি শিহাব সারাদ অভি, জেলা প্রশাসককের কার্যালয়ের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহকারী কমিশনার মেহেদী হাসান পাটোয়ারী, ব্র্যাকের জেলা সমন্বয়কারী মোঃ মিজানুর রহমান, মাইগ্রেশন এন্ড রিইন্ট্রিগ্রেশন সাপোর্ট সেন্টারসহ নরসিংদীতে কর্মরত ব্র্যাকের বিভিন্ন প্রোগ্রামের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিগণ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নরসিংদী জেলায় সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিক, শিক্ষক, ধর্মীয় ব্যাক্তিত্ব, প্রবাস বন্ধু ফোরাম সদস্য, স্বেচ্ছাসেবক ও বিদেশ ফেরত অভিবাসী।
নরসিংদী ও দেশের বিভিন্ন জেলায় বিদেশ থেকে ফিরে আসা মানুষ ব্র্যাকের ইম্প্রুভড সাসটেইনেবল রিইন্টিগ্রেশন অব বাংলাদেশি রিটার্নি মাইগ্রেন্টস (প্রত্যাশা ২) ‘ প্রকল্প থেকে মনোসামাজিক কাউন্সেলিং, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পুনরেকত্রীকরণে সহায়তা পাচ্ছেন। নরসিংদী জেলাপ্রশাসনসহ সরকারের নানা দপ্তরও তাদের পাশে রয়েছে।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ উন্নয়ন সংস্থা এবং সারাবিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এনজিও— ব্র্যাক, ১৯৭২ সালের প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে দেশে ও দেশের বাইরে নানাবিধ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষের আর্থ—সামাজিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। ব্র্যাকের বিভিন্ন কর্মসূচিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি কর্মসূচি হল মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম। ব্র্যাকের এই কর্মসূচি ২০০৬ সাল থেকে দেশের অভিবাসনপ্রবণ জেলাসমূহে বিদেশগামী নারী ও পুরুষের মাঝে সঠিক তথ্যের মাধ্যমে নিরাপদ অভিবাসন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম, বিদেশ—ফেরতদের পুনরেকত্রীকরণ, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, অভিবাসন খাতে অ্যাডভোকেসি ও নানাবিধ সহযোগিতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে।