পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের বিগত ৮ বছরে দেশে সরকারীভাবে বিভিন্ন মৌসুমে ধান, চাউল, গম সংগ্রহের অভিযানের লক্ষমাত্রা পূরণ হয়নি। তবে বর্তর্মান সরকার ধান, চাউল ও গম ক্রয়ের জন্য মোটামোটি লাভজনক দাম নির্ধারণ করায় এবং শতকরা ২ ভাগ ইনসেপ্টা বোনাস প্রদানের ঘোষণা দেওয়ায় এবার ধান, চাউল ও গম সংগ্রহের লক্ষমাত্রা নির্ধারিত সময়ের দুই মাসের মধ্যেই অর্জিত হবে বলে আশাবাদী ঈশ্বরদী এলএসডি-১, সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তা মো. তারেক-উজ-জামান ও মুলাডুলি সিএসডি গোডাউনের ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) মামুন এ কাইয়ুম।
একই সঙ্গে লক্ষমাত্রা অর্জনে ঈশ্বরদী উপজেলার মিল মালিকরা আন্তরিকতার সঙ্গে সহযোগিতা করছেন বলে দাবী করেন উপজেলা হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি মো. দুলাল মন্ডল ও বাংলাদেশ অটো রাইস মিলস অনার্স এসোসিয়েশন পাবনা শাখার সভাপতি ও সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির দুলাল। ইতোমধ্যেই মুলাডুলি গো-ডাউনে সংগ্রহের ৯০ শতাংশ ও ঈশ্বরদী গো-ডাউন ৭০ শতাংশ অর্জন করেছে বলে দুই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।
গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুরে দুই গোডাউন কর্মকর্তা ও মিল মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
পাবনা জেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে সুত্রে জানা যায়, গত ২৪ এপ্রিল/২৫ থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে বোরো সংগ্রহ-২৫ মৌসুম শুরু হয়েছে। এ মৌসুমে ঈশ্বরদীতে চাউল প্রদানে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে মোট ৯৮ টি মিল মালিক। এর মধ্যে ৮২ টি হাসকিং মিলস ও ১৬ টি অটো মিলস। এসব মিলারের অধিনে ধান সংগ্রহের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ১৯৮ মেট্রিক টন, গম সংগ্রহের লক্ষমাত্রা অনির্ধারিত ও চাউল সংগ্রহের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ২০ হাজার ১০০ মেট্রিক টন। সরকারীভাবে প্রতি কেজি ধানের মুল্য ৩৬ টাকা, প্রতি কেজি গমের মুল্য ৩৬ টাকা ও প্রতি কেজি চাউলের মুল্য ৪৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি মো. দুলাল মন্ডল বলেন, গত বছর আমার নামে ১১ মেট্রিক টন চাউল প্রদানের বরাদ্দ ছিল। কিন্তু দাম ভাল না থাকায় সরকারী গোডাউনে চাউল দিয়ে ৩৩ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। শুধুমাত্র মিলের লাইসেন্স রক্ষা করতে লোকসান দিয়েই বিগত ৮ বছর ধরে গোডাউনে চাউল সরবরাহ করে আসছিলাম। অনেক মিল মালিক লোকসান হওয়ায় চাউল সরবরাহ করা থেকে বিরত থেকেছে। এই কারণে তাদের মিলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
দুলাল মন্ডল আরও বলেন, এবার বাজার দরের চেয়ে কিছুটা দাম বেশি নির্ধারণ করায় মিলারদের বিগত বছরগুলোর মতো লোকসান গুনতে হবে না। বেশি লাভ না হলেও মিলারদের লোকসান হবে না। তাই সবাই স্বতঃফূর্তভাবে গোডাউনে চাউল সরবরাহ করছেন।
বাংলাদেশ অটো রাইস মিলস অনার্স এসোসিয়েশন পাবনা শাখার সভাপতি ও সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির দুলাল বলেন, বিগত শেখ হাসিনা সরকারের সময় মিলের লাইসেন্স রক্ষার্থে সরকারী দরে গোডাউনে চাউল সরবরাহ করেছি। এতে আমার ১২ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। বিডি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এবার চাউলের দাম কিছুুটা ভাল দেওয়ায় আমরা দেশ ব্যাপী সরকারী চাউল সংগ্রহ সফল করতে কাজ করছি। আশা করছি চলতি সংগ্রহ মৌসুমে লক্ষমাত্রা অর্জিত হবে।
দুলাল সরদার আরও বলেন, আমাদের খুবই একটা লাভ হবে না। যদি কিছুটা লোকসান হয় তাহলে সরকার ঘোষিত ২ শতাংশ ইনসেপ্টা বোনাস মিলারদের প্রদান করা হলে সেই লোকসান পুষিয়ে নেওয়া যাবে। এই কারণে ২ শতাংশ ইনসেপ্টা বোনাস প্রদানের জন্য মিল মালিকদের পক্ষ থেকে সরকারের নিকট আকুল আবেদন জানানো হয়েছে।
ঈশ্বরদী এলএসডি-১, সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তা মো. তারেক-উজ-জামান বলেন, সরকারী গোডাউনে চাউল সংগ্রহে চলতি বোরো মৌসুমে ঈশ্বরদীর মিলাররা খুবই আন্তরিকতার পরিচয় দিচ্ছেন। ঈশ্বরদী গোডাউনে সংগ্রহের জন্য লক্ষমাত্রা রয়েছে ১০ হাজার ৫০ মেট্রিক টন। সংগ্রহের মেয়াদ ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত। কিন্তু ২৪ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে মাত্র জুন মাসেই সংগ্রহ হয়েছে সাড়ে ৭ হাজার মেট্রিক টন। যা সংগ্রহের লক্ষমাত্রার প্রায় ৭০ শতাংশ।
তিনি আরও বলেন, বৈরি আবহাওয়ার আগেই ভালমানের চাউল সংগ্রহের জন্য প্রতিনিয়ত চুক্তিবদ্ধ মিলার ও মিল মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের আগেই এবার চাউল সংগ্রহের লক্ষমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।
মুলাডুলি সিএসডি গোডাউনের ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) মামুন এ কাইয়ুম বলেন, চুক্তিবদ্ধ মিলাররা যেন কোনরুপ হয়রানি বা ভোগান্তি ছাড়াই গোডাউনে চাউল সরবরাহ করতে পারেন সেই দিকে জোড়ালোভাবে দৃষ্টি রাখা হয়েছে। এজন্য তাদের সকল ধরণের বৈধ সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। এইজন্য মিলাররা কোনরুপ হয়রানি ছাড়াই স্বতঃফুর্তভাবে গোডাউনে চাউল সরবরাহ করছেন। এই গোডাউনে চাউল সংগ্রহের লক্ষমাত্রা রয়েছে ১০ হাজার ৫০ মেট্রিক টন। ইতোমধ্যেই সংগ্রহের লক্ষমাত্রার প্রায় ৮৫ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই সংগ্রহের লক্ষমাত্রা অর্জিত হবে বলেও আশাবাদী এই কর্মকর্তা।