রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নন্দনগাছি রেলস্টেশনে আন্তনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবিতে তিন ঘণ্টা রেলপথ অবরোধ করেছিল স্থানীয়রা।
বুধবার (১১ জুন) ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত নন্দনগাছিতে রেলপথ অবরোধ করে রাখা হয়। এতে রাজশাহী থেকে ছেড়ে যাওয়া বিভিন্ন গন্তব্যের কয়েকটি ট্রেন আটকা পড়ে।
এদিন সকালে রাজশাহী থেকে খুলনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস ট্রেন সবার প্রথমে আটকা পড়ে। এরপর ঢাকাগামী মধুমতি এক্সপ্রেস ও চিলাহাটিগামী তিতুমীর এক্সপ্রেস আরেকটি স্টেশনে রাখা হয়। আর ঢাকাগামী বনলতা ও সিল্কসিটি এক্সপ্রেস রাজশাহী স্টেশনে থেকে যায়। আন্দোলন প্রত্যাহার করা হলে ট্রেনগুলো ছেড়ে যায়।
অবরোধের ফলে কার্যত রাজশাহী থেকে সারাদেশের সঙ্গে তিন ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঈদের ছুটি শেষে ঢাকাসহ বিভিন্ন গন্তব্যে ফেরা মানুষ এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ভোরে নন্দনগাছি স্টেশনের দুই পাশে লাল নিশান দিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেন স্থানীয়রা। এরপর তারা সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। আন্দোলনকারীরা স্টেশন সংস্কার ও আন্তনগর ট্রেন থামানোর দাবি-সম্পর্কিত বিভিন্ন ব্যানার ও ফেস্টুন তুলে ধরেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও তিন ঘণ্টা পর তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
তাদের দাবি, নন্দনগাছি স্টেশনে সিল্কসিটি এক্সপ্রেস, সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস, বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ও ঢালারচর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রাবিরতি দিতে হবে এবং স্টেশন সংস্কার করতে হবে। এই দাবি না মানা হলে আবারও ২০ তারিখ রেলপথ অবরোধের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ১৯২৯ সালে উপজেলার নন্দনগাছী স্টেশনটি স্থাপিত হয়। শতবর্ষী স্টেশনটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় ২০১৫ সালের শেষের দিকে। বন্ধের আগে ১২ জন জনবল থাকলেও বর্তমানে শুধু পোর্টারম্যান পদে একজন কর্মরত আছেন। এখানে দুটি লোকাল ট্রেন থামে। প্রায় ২০ বছর ধরে বন্ধ এই স্টেশনের কোনো কার্যক্রম নেই। পুরো স্টেশনের প্লাটফর্মে ছাউনি আছে। স্টপেজ না থাকলেও অনেক সময় ক্রসিং এর জন্য দাঁড়ায় ট্রেন। এখানে আন্তনগর ট্রেনগুলো থামানোর দাবি জানাচ্ছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ।
এর আগে একই দাবিতে গেল ১ মে আন্তঃনগর ট্রেন থামিয়ে বিক্ষোভ করেন মানুষ। সেদিন রাজশাহী ও চিলাহাটির মধ্যে চলাচল করা বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ও লোকাল মেইল ট্রেন থামিয়ে বিক্ষোভ করা হয়। এতে অংশ নেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ।
বুধবার প্রায় তিনঘণ্টা অবরোধ থাকার পর রেলওয়ের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা সেখানে যান। তারা অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানান। পরে সেখানে যান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ। তিনি সবাইকে রেলপথ থেকে উঠে যাওয়ার অনুরোধ জানান। তখন অবরোধকারীরা রেলপথ ছাড়তে না চাইলে চাঁদ অনেকের হাত ধরে টানাটানি করেন।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা বলতে থাকেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ থাকবে। এখানে কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত চলবে না। কিছুক্ষণ পর অবশ্য তারা রেলপথ ছেড়ে দেন।
এর আগে আবু সাঈদ চাঁদ আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এখানে রেল কর্মকর্তারা এসেছেন। আমাদের সাথে যদি বসে, তাহলে ভাল। যদি আলোচনায় না বসে সেটাও ভাল। আমি কথা দিচ্ছি, ১৯ বা ২০ তারিখের মধ্যে যদি কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না করে, তাহলে আবার আপনারা বসবেন। ট্রেন না থামলে আমি কথা দিচ্ছি, এখান দিয়ে আর ট্রেন যাবে না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক আহম্মদ হোসেন মাসুম বলেন, ‘নন্দনগাছি রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেন থামানোর জন্য স্থানীয়রা দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করছে। এর আগেও তারা অবরোধ করেছিলেন। তখন বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছিল। তারা ঈদের এই সময় অবরোধ করে যাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলে দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘তাদের কাছে গিয়ে দাবি-দাওয়া শোনা হয়েছে। তারা তিন ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নিয়েছেন। এরপর ট্রেনগুলো চলতে শুরু করে। তারপরও অবরোধের কারণে ঢাকাগামী তিনটি ট্রেনই সিডিউল বিপর্যয় হওয়ার আশঙ্কা আছে।