ছোট ফেনী নদীর ভয়াবহ ভাঙনে ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার জগতপুর গ্রাম বিলীন হওয়ার পথে। নোয়াখালীর মুছাপুর স্লুইসগেট (রেগুলেটর) না থাকায় নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, ফলে ভাঙনের মাত্রা প্রতিদিনই বাড়ছে। এর ফলে উপজেলার সদর ইউনিয়নের জগতপুর গ্রামে একের পর এক বাড়িঘর ও আবাদি জমি চলে যাচ্ছে নদীতে।
অনেকেই ইতোমধ্যে গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে গেছেন। ভাঙনের শিকার হয়ে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে একসময়ের গুরুত্বপূর্ণ ফাজিলেরঘাট-তালতলী সড়ক। জগতপুর, পূর্ব জগতপুরসহ আশপাশের এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা।
গত কিছুদিন আগে ভাঙনকবলিত ছোট ফেনী নদীর ফাজিলেরঘাট এলাকা পরিদর্শন করেন দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স ম আজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, নদীভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৫ বছর আগেও সড়কটি ছিল কার্পেটিং সড়ক। এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতো বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্ন যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ছিল এই রাস্তাটি। ২০০৬ সাল থেকেই নদীভাঙন শুরু হয়। ধীরে ধীরে রাস্তা ও ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হতে থাকে। বর্তমানে ফাজিলেরঘাট-তালতলী সড়কের কোনো অস্তিত্ব নেই। নদীতে হারিয়ে গেছে গ্রামের শত শত বিঘা আবাদি জমিও।
পূর্ব জগতপুর গ্রামের কৃষক রমজান আলী বলেন, বাবার দেওয়া ১২ শতক জমি নদীতে চলে গেছে। সেই জমিতেই চাষ করে সংসার চলত। এখন শুধু একটা ভিটে আছে, সেটাও টিকবে কি না জানি না। জিও ব্যাগ ফেলে ঘরটি রক্ষা করার চেষ্টা করছি। এখনও কোনো সরকারি সহায়তা পাইনি।
গ্রামের গৃহবধূ সালেহা বেগম বলেন, নদীর পাড়ে সন্তানদের নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। সব সময় ভিটে হারানোর ভয় মাথায় থাকে। জোয়ার-বৃষ্টি হলে আতঙ্কে থাকি। বন্যার পানিতে জমিও চলে গেছে, এখন আর চাষাবাদ করার কিছু নেই। এখন ঘরটি ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট নেই।
স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত কার্যকর ভাঙনরোধ ব্যবস্থা না নিলে জগতপুর গ্রাম পুরোপুরি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। একই সঙ্গে ফাজিলেরঘাট-তালতলী সড়ক পুনর্নির্মাণ করে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করার জোর দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে ফেনীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, মুছাপুর রেগুলেটর পুনর্নির্মাণ হতে আরও কয়েক বছর সময় লাগবে। তবে নদী ভাঙনরোধে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই দরপত্র আহ্বান করা হবে।