মইনুল ইসলাম (৫০)। বাড়ি জয়পুরহাটের পাঁচবিবির উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষা বাগজানা ইউনিয়নের ঘোড়াপা গ্রামে। ছোটবেলা থেকেই তালের শাঁস বিক্রি করে আসছেন তিনি। সে উপজেলার বাগজানা বাজারে সবার পরিচিত মুখ ।
বর্তমান সময়টা তালের শাঁস এর মৌসুম হওয়ায়, তাকে দেখা যায় বাগজানা বাজারে তারে কাদি ও একটি দা হাতে বসে আছর। তিনি জানান, বর্তমানে ধান কাটা মৌসুম শুরু হয়েছে, ধান কাটা শ্রমিকরা প্রতিদিন বাসায় ফেরার পূর্বে তার দোকানের তালের শাঁস এর নিয়মিত ক্রেতা। তবে দুর দুরান্ত থেকে বাগজানা বাজারে আগত ব্যবসায়ী, পথচারী ও স্থানীয়দের মাঝেও বিক্রী করছেন তালের শাঁস। সাড়া দিনে তিনি বিক্রি করেন ১৫শ-২হাজার পিস তালেন শাঁস। এছাড়া পার্শ্ববর্তী এলাকার স্কুল-কলেজ গামি শিক্ষার্থীদের মাঝেও তিনি প্রতিদিন প্রচুর পরিমানে তালের শাঁস বিক্রি করেন।
সরেজমিনে বাগজানা বাজার এলাকার রাস্তা, ফুটপাতে ও বাসস্ট্যান্ডে দেখা গেছে, কচি তালের বিক্রি। পাইকারির পাশাপাশি বিক্রি চলছে খুচরাও। এসব স্থানে তালের শাঁস কিনে খাচ্ছেন খুচরা ক্রেতারা। আর এই তালের শাঁস এর জন্য মইনুল ইসলাম কাঁচা তাল সংগ্রহ করেন পাঁবিবি উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে। ৩-৪ টি বাধা বিশিষ্ট প্রতিটি গাছ ১হাজার-১২শ টাকার ক্রয় করেন তিনি এবং প্রতিটি কাঁচা তাল থেকে ৩-৪ টি করে শাঁস পাওয়া যায়। তিনি প্রতি হালি বিক্রি করেন ২০ টাকা করে। এতে সাড়া দিনে ১৫শ-২হাজার পিস তালের শাঁস বিক্রি করে তার সংসার চলে বলে জানায়।
যেহেতু এটি মৌসুমী ফল, তাই তালের মৌসুম শেষ হলে তিনি ডাব বিক্রি শুরু করেন। এভাবেই তার জিবীকা নির্বাহ করেন। তবে প্রতিনিয়ত গ্রাম থেকে তালের গাছ কেটে ফেলায় দেখা দিয়েছে কাোচা তালের সংকট। এর ফলে দাম বেড়ে গেছে কাঁচা তালের। ফলে মইনুল ইসলামের ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া দূরহ হয়ে পড়েছে। আবার অনেক তাল গাছ মালিক কাঁচা অবস্থায় তাল বিক্রি না করে ভাদ্র মাসে পাকা তাল বিক্রির জন্য রেখে দেন। এর ফলেও কাঁচা তালের সংকট দেখা দিয়েছে।
তবে এতো প্রতিকূলতার মাঝেও অতি কষ্টে চালিয়ে যাচ্ছেন তার তালের শাঁস বিক্রি। এবং জীবনের বাকিটা সময় তিনি এই পেশার সাথেই থাকতে চান।
উপজেলার বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে কথা বললে তারা জানায়, বাণিজ্যিকভাবে পাঁচবিবি অঞ্চলে তাল গাছের তেমন বাগান নেই। তবে পাঁচবিবি উপজেলার আশপাশে সড়কের পাশে বেশ তালগাছ আছে। সাধারণত বাসাবাড়ির পাশে মানুষ তালগাছ রোপন করে থাকে। তালগাছ বজ্রপাত রোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কিন্তু ইদানিং নির্বিচারে তালের গাছ কেটে ফেলায় বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু অনেক বেড়ে গেছে। এরই মাঝে বজ্রপাত হতে রক্ষা পেতে, পাঁচবিবি উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় বেশকিছু তালের চাড়া রোপন করা হয়েছে। কিন্তু এগুলো চাড়াগাছগুলো থেকে ফল পেতে ৮-১০ বছর সময় প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রচণ্ড গরমে তালের কচি শাঁস এবং এর ভেতরের মিষ্টি পানি তৃষ্ণা মিটিয়ে শরীরে এনে দেয় আরামদায়ক অনুভূতি। তালের শাঁসে প্রতি ১০০ গ্রামে ০.৮ গ্রাম খাদ্যপযোগী খনিজ পদার্থ, ২০.৭ গ্রাম শর্করা, ০.৮ গ্রাম আমিষ, ০.৫ গ্রাম আঁশ রয়েছে। গরমে শরীরের পানির অভাব পূরণ করতে এর মধ্যে আছে ৭৭.৫ ভাগ জলীয় অংশ। ০.৫ গ্রাম খাদ্য আঁশ থাকায় এটি হজমে সহায়ক। তালের শাঁসে খাদ্যশক্তি রয়েছে প্রায় ৮৭ কিলো ক্যালোরি। ৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকায় তালের শাঁস হাড় গঠনেও দারুণ ভূমিকা রাখে। কচি তালের শাঁস রক্তশূন্যতা দুর করে। চোখের দৃষ্টি শক্তি ও মুখের রুচি বাড়ায়।