গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলা ও পৌর বিএনপির সদ্যঘোষিত নতুন আহ্বায়ক কমিটিকে ঘিরে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার সন্ধ্যা থেকে রোববার পর্যন্ত দফায় দফায় বিক্ষোভ, পাল্টাপাল্টি মিছিল এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
রোববার রাতে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ ও কালিয়াকৈর থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হেলাল উদ্দিনকে সাহেববাজার এলাকা থেকে এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক পারভেজ আহমেদকে হিজলতলী এলাকা থেকে আটক করা হয়। তবে সোমবার সকালে যাচাই-বাছাই শেষে হেলাল উদ্দিনকে মুক্তি দেওয়া হলেও পারভেজ আহমেদ এখনও ডিবি হেফাজতে রয়েছেন।
এ বিষয়ে গাজীপুর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই ফারুক বলেন, "উল্লেখিত দুজনের বিরুদ্ধেই থানায় অভিযোগ থাকায় তাদের আটক করা হয়েছিল। যাচাই-বাছাই শেষে হেলাল উদ্দিনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।"
ঘটনার সূত্রপাত হয় শনিবার সন্ধ্যায়, যখন কালিয়াকৈর উপজেলা ও পৌর বিএনপির পৃথক দুটি নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। নতুন কমিটিতে পদবঞ্চিত নেতাদের সমর্থকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। এ অবস্থায় শনিবার রাতেই সাবেক সাধারণ সম্পাদক পারভেজ আহমেদের সমর্থকরা বিক্ষোভ করেন। রোববার দুপুরে নতুন কমিটির সমর্থকরা আনন্দ মিছিল বের করলে পদবঞ্চিতদের পক্ষ থেকেও পাল্টা মিছিল হয়। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উপস্থিত হয় এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে।
এদিকে সাবেক সভাপতি হেলাল উদ্দিন ডিভি পুলিশ হতে ছাড়া পাওয়ায় সোমবার দুপুরের পর সাহেববাজার এলাকায় সাবেক সভাপতির বাসভবনে বিভিন্ন এলাকা থেকে তার সমর্থক নেতাকর্মীরা জড়ো হন। তারা সেখানে মতবিনিময় করেন এবং নতুন কমিটির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তাদের অভিযোগ, কমিটিতে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের উপেক্ষা করা হয়েছে এবং ‘হাইব্রিড’ ও ‘অনুপ্রবেশকারী’ নেতাদের জায়গা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মান্নান বলেন, “গতকাল আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে হেলাল-পারভেজ গ্রুপের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কমিটি সমর্থিত নুরুল ইসলাম শিকদার ও আনোয়ার হোসেনপন্থীদের সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ১৬ জন আহত হয়। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সাবেক সভাপতি ও সম্পাদককে আটক করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে হেলাল উদ্দিনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, তবে পারভেজ আহমেদ এখনো ডিবি হেফাজতে রয়েছে।”
ওসি আরও জানান, রিপন মিয়া নামে এক ভুক্তভোগী পারভেজ আহমেদসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।
অন্যদিকে ডিবি কার্যালয় থেকে মুক্তি পাওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে হেলাল উদ্দিন বলেন, "রাত তিনটার দিকে ডিবি ও থানা পুলিশের সদস্যরা আমাকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। জেলা পুলিশ সুপার বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের বিষয়ে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরে যাচাই-বাছাই শেষে আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।"
তিনি আরও জানান, “বিএনপির ভেতর কিছু দুষ্টচক্র আছে যারা আগের সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলত। এরা নতুন কমিটিতেও প্রবেশ করেছে, এজন্য বিভক্তি তৈরি হয়েছে।”