পাবনায় মোবাইল ফোন চুরিকে কেন্দ্র করে রাসেল হোসেন (২৭) নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দুটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও ব্যাপক লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে।
(১৫ জুন) রাত ৮ টার দিকে জাফরাবাদ এলাকার আব্দুল বারেক মোল্লা ও হোসেন মোল্লার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়াও ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়৷ বাড়ির মহিলাদেরও লাঞ্চিত করা হয়। এর আগে শনিবার দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে পাবনা সদর উপজেলার জাফরাবাদ এলাকায় হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে।
নিহত রাসেল (৩১) জাফরাবাদ এলাকার নজিরুদ্দিনের ছেলে।
যাদের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তারা হলেন- জাফরাবাদ গ্রামের আহমেদ মোল্লার ছেলে হোসেন মোল্লা, মৃত আজহার মোল্লার ছেলে আব্দুল বারেক মোল্লা। তারা কৃষি কাজ ও মাছ চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, গত শনিবার রাতে নিহত রাসেলের প্রতিবেশী মকবুল হোসেনের বাড়ি থেকে একটি মোবাইল ফোন চুরি হয়। এর পর ওই এলাকার জনৈক যুবক তানজিল হোসেন (৩২) মোবাইল ফোন চুরির জন্য রাসেলকে দায়ী করেন এবং সেটি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য রাসেলকে চাপ দেন। এতে রাসেল ক্ষিপ্ত হয়ে তানজিলকে মারধর করেন।
এরই জের ধরে তানজিল ও মকবুলের সহযোগীরা রাসেলদের বাড়িতে হামলা চালায় এবং রাসেলকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি কোপায়। এতে ঘটনাস্থলেই রাসেলের মৃত্যু হয়।
রোববার দুপুরে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে পুলিশ ২ নারীসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলেন- জাফরাবাদ গ্রামের জালাল উদ্দিনের ছেলে তানজিল হোসেন (২৭), আব্দুল্লাহর মেয়ে আফরোজা খাতুন (২৪) এবং খাদিজা খাতুন (২৮)। বাকিদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, রোববার রাত ৮ টার দিকে নিহত রাসেলের বাবা নজিরুদ্দিনের নেতৃত্বে পাবনা শহর থেকে যাওয়া একদল দুর্বৃত্ত প্রথমে জাফরাবাদ গ্রামের আহমেদ মোল্লার ছেলে হোসেন মোল্লার বসত বাড়িতে ভাঙচুর, পেট্রোল ঢেলে অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক লুটপাট করা হয়। বাড়ির আলমারিতে থাকা স্বর্ণের গহনাপত্র, নগদ টাকা সহ সব কিছু লুটপাট করে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আগুন ধরিয়ে দিয়ে সন্ত্রাসীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পুরো বাড়ি আগুনে ছাই হয়ে গেছে। এতে প্রায় ৫/৭ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।
অপরদিকে একই গ্রামের মৃত আজহার মোল্লার ছেলে আব্দুল বারেক মোল্লার বাড়িতে দুর্বৃত্তরা প্রবেশ করে ঘরের আলমারি ও সুকেশে থাকা যাবতীয় স্বর্ণের গহনা, নগদ টাকা ও জিনিসপত্র লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয়। বাড়ির গাছে থাকা কলা ও ব্যবসার জন্য বয়লার মুরগী পালন করাগুলো তারা লুটপাট করে নিয়ে যায়। এছাড়াও কবুতরও লুটপাট করা হয়। এসময় বাড়িতে থাকা মহিলাদের বেধড়ক মারপিট, অশ্লিল ভাষায় গালিগালাজ ও লাঞ্চিত করা হয়। অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে প্রায় ৪/৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। লুটপাট করা বয়লার মুরগী ও কবুতর নজির হোসেনের বাড়িতে নিয়ে রান্না করে উল্লাস করে খাওয়া দাওয়া হয়।
অগ্নিসংযোগ করা আব্দুল বারেকের বাড়ির একজন নারী সদস্য ফরিদা খাতুন বলেন, সেদিন রাত ৮ টার দিকে হঠাৎ ১৫/২০ টি মোটরসাইকেল নিয়ে একদল মানুষ আমাদের বাড়িতে আক্রমণ করে। আলমারিতে থাকা গহনাগাঁটি, নগদ টাকাসহ যাবতীয় জিনিসপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায়। এমনকি আমাদের বাড়িতে পালন করা বয়লার মুরগীও তারা লুটপাট করে নিয়ে যায়। এরপর আগুন ধরিয়ে দিয়ে চলে যায়। আসলে একটা মার্ডার হয়েছে আমাদের বাড়ি থেকে অনেক দূরে। আমাদের বাড়িতে আগুন দিয়ে পুরো পরিবারকে নি:শ করা হয়েছে। এ ঘটনার বিচার দাবি করেন তিনি।
পাবনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আব্দুল সালাম জানান, এ ঘটনায় নিহত রাসেলের বাবা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে। ঘটনায় জড়িত ৫ জনতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অগ্নিসংযোগের বিষয়ে অবগত আছি কিন্তু কেউ এখনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। লিখিত অভিযোগ দিলে খতিয়ে দেখা হবে।