ভালুকাকে একটি পরিচ্ছন্ন, পরিকল্পিত ও মাদকমুক্ত উপজেলা হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছেন উপজেলা প্রশাসন। তবে কিছু অসহযোগিতা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে-এমনই খোলা বার্তা দিয়েছেন ভালুকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসান আবদুল্লাহ আল মাহমুদ
সম্প্রতি একটি ফেসবুক পোস্টে ইউএনও বলেন, “আমার স্বপ্ন-ভালুকাকে পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত একটি আধুনিক জনপদে রূপান্তর করা। কিন্তু সে পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে আমাদের মধ্যেই থাকা কিছু স্বার্থান্বেষী মহল।”
ভালুকার বাসস্ট্যান্ড, ভরাডোবা, মাস্টারবাড়ি ও ধলিয়া বাজার এলাকায় শৃঙ্খলা ফেরানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়ে ইউএনও বলেন, “বাসস্ট্যান্ড এলাকাটি ঠিক করতেই বারবার উচ্ছেদ করতে হচ্ছে। কারণ যাদেরকে আমরা মার্কেট দিয়েছি, তারা মার্কেট ব্যবহার না করে বাইরে দোকান বসাচ্ছে। কেউ কেউ মার্কেটকে গুদাম বানিয়ে ব্যক্তিগত প্রভাব খাটাচ্ছে। এতে শুধু উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে না, জনগণের স্বার্থও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”
ইউএনও জানান, বাজার এলাকায় ২৭টি চায়ের দোকান একই পণ্যে সীমাবদ্ধ, পরিবেশ নোংরা এবং সব শ্রেণির মানুষের আকর্ষণ করতে অক্ষম। অথচ তিনি নিজ উদ্যোগে একাধিক জায়গায় দৃষ্টিনন্দন টি-স্টল (ফুড পার্কের আদলে) গড়ার পরিকল্পনা করেছিলেন।
কিন্তু কিছু ব্যবসায়ী আপত্তি তোলেন-তাদের দাবি, এতে ব্যবসায় ক্ষতি হবে। অথচ বাস্তবতা হলো, সেই স্থানগুলোয় এখন গোপনে আবার দোকান বসানো হচ্ছে, টাকার বিনিময়ে জায়গা দেওয়া হচ্ছে, যা প্রতিদিনের চাঁদাবাজির নতুন উৎস।
ইউএনও জানান “যারা আপত্তি করেছিল, আজ তারাই নিজেদের সামনে আবার দোকান বসিয়েছে। এতে প্রমাণ হয়, তারা উন্নয়ন নয়, বরং ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছে। আমার পরিকল্পনায় কাউকে কর্মহীন করা হয়নি, বরং বিনামূল্যে ভালো ব্যবস্থা করে দেওয়ার চেষ্টা করেছি।”
ইউএনও’র বার্তা স্পষ্ট "আর কাউকে নমনীয়ভাবে বোঝানো হবে না। আইন প্রয়োগ করা হবে। কেউ কর্মহীন হচ্ছেন না, সুতরাং আপোষ নয়। যারা দিনশেষে টাকা তুলে নিচ্ছে, তাদের সময় শেষ হবে। জনগণের স্বার্থে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবেই।"
তিনি আরও বলেন, “বাসস্ট্যান্ড-রাস্তাঘাট-বাজার, শিক্ষা, চিকিৎসা, মাদক নির্মূল, পরিবেশ রক্ষা-এত কাজ একসঙ্গে করতে হলে সবাইকে সহযোগী হতে হবে। শুধু প্রশাসনের পক্ষে একা সব কিছু সামলানো সম্ভব নয়।”
এই পোস্টের মাধ্যমে ইউএনও হাসান আবদুল্লাহ আল মাহমুদ মূলত ভালুকার সর্বস্তরের নাগরিকদের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়েছেন “আমি আপনাদের সঙ্গে থেকে কাজ করতে চাই। চায় না কেউ দমন করে কাজ করুক। কিন্তু শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে কখনো কখনো কঠোর হতেই হয়। আমি বিশ্বাস করি, সচেতন নাগরিকরা সত্যিকার উন্নয়নের সঙ্গেই থাকবে।”
ভালুকা যেন একদিকে উন্নয়নের রোল মডেল, অন্যদিকে শৃঙ্খলা, পরিবেশ ও নাগরিক দায়িত্ববোধের প্রতীক হয়ে ওঠে-সেই লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের যাত্রা অব্যাহত রয়েছে। তবে এই পথে সহযোগিতা না পেলে, প্রশাসনের একার চেষ্টায় বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়।