রংপুর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে নিখোঁজের ৯ দিনেও উদ্ধার হয়নি দুই কিশোরী। এনিয়ে সচেতন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পুলিশ বলছে, উদ্ধারে মাঠে কাজ করছেন তারা।
এদিকে দুই কিশোরীকে উদ্ধার, সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালকসহ ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে সচেতন নাগরিক সমাজ।
শনিবার (২১ জুন) দুপুরে রংপুর প্রেসক্লাব চত্বরে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন বক্তব্য রাখেন, রংপুর প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট জোবাইদুল ইসলাম, মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট মোকছেদ বাহলুল, অ্যাডভোকেট মাহে আলম, সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন জেলা কমিটির কোষাধ্যক্ষ শমসে আরা বিলকিস, আমার বাংলাদেশ-এবি পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক রেজওয়ানুল বারী রিজু প্রমুখ
বক্তারা বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের পুনবার্সন কেন্দ্রে নিবাসী শিশুদের শারীরিক-মানসিক ও যৌন নির্যাতন করা হচ্ছে। তারা রক্ষক হয়ে ভক্ষকের কাজ করেছে। পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে নিখোঁজ দুই মেয়ে উদ্ধার হওয়ার পর তারা সাংবাদিকদের কাছে পুনর্বাসন কেন্দ্রের ভয়াবহ নির্যাতনের তথ্য তুলে ধরেছিল। তারা জীবন বাঁচাতে পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে চলে গিয়েছিল। পরবর্তীতে সমাজসেবা কর্মকর্তা পুলিশের সহযোগিতায় সেই কিশোরীদের আদালতের মাধ্যমে আবারও পুনবার্সন কেন্দ্রে নিয়ে গেছে। এতে করে উদ্ধার হওয়া সেই কিশোরীদের উপর সমাজসেবা কর্মকর্তারা নির্যাতনসহ গুম করতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে।
বক্তারা আরও বলেন, সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক অনিল চন্দ্র বর্ম্মন নানা ধরনের অনিয়ম-দর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। তিনি দম্ভ করে বলে মিডিয়া, রংপুরবাসী কেউ নাকি তাকে তার চেয়ার থেকে সরাতে পারবে না। তাহলে তার খুঁটির জোর কোথায়, এটি রংপুরবাসীর প্রশ্ন। বিগত সময়ে সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের অনিয়ম-দুর্নীতি প্রমাণিত হলে তাদের বদলি করা হয়। কিন্তু শিশুদের ধর্ষণের সুযোগ করে দেয়া কর্মকর্তাদের বদলি নয়, আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এ সময় সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক অনিল চন্দ্র বর্ম্মনসহ ঘটনার সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং নিখোঁজ দুই কিশোরীকে উদ্ধারে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেয়া হয়।
এদিকে নিখোঁজের ব্যাপারে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতয়ালী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, রংপুর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে নিখোঁজ হওয়া চার কিশোরীর মধ্যে দুজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি দুজনকে উদ্ধারে মাঠে কাজ করছে পুলিশ।
অভিযোগের বিষয়ে রংপুর সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক অনিল চন্দ্র বর্ম্মনকে একাধিকার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, রংপুর নগরীর দেওডোবা ডাংগীরপাড় এলাকার রংপুর সমন্বিত শিশু পুনবার্সন কেন্দ্রে গত ১২ জুন রাত থেকে নিখোঁজ হন নিবাসী নিতু, স্মৃতি, কৃতি ও আশা নামে চার কিশোরী। ১৫ জুন পরিবারের সদস্যরা স্মৃতি ও কৃতিকে নগরীর চিড়িয়াখানা এলাকা থেকে উদ্ধার করে পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশ তাদের আদালতের মাধ্যমে পুনরায় পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠায়।
এ ঘটনায় পরিবারের সদস্যরা উদ্ধার হওয়া কিশোরীদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠাতে অস্বীকৃতি জানায়। আপত্তির কারণ হিসেবে পুনর্বাসন কেন্দ্রে শিশুদের উপর নির্যাতন ও জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে তারা শঙ্কিত বলে গণমাধ্যমকে জানান। এ ঘটনায় এখনও নিতু ও আশা দুজন নিখোঁজ রয়েছে।