জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য অরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (২২ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সেমিনার কক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রায় ৮০ জন নবীন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফরহাদ আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. সিত্তুল মুনা হাসান, সহযোগী অধ্যাপক আব্দুস সালাম, সহকারী অধ্যাপক জসিম খান, সহকারী অধ্যাপক সাজিয়া আফরিনসহ বিভাগের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীবৃন্দ।

দর্শন বিভাগের শিক্ষিকা কাজিয়া ইয়াসমিন বলেন, "আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টা খুবই ছোট। আমি এখানে দীর্ঘদিন যাবৎ শিক্ষকতা করছি। দর্শন বিভাগের মতন শিক্ষার্থী বান্ধব ডিপার্টমেন্ট এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যেকোনো প্রয়োজনে আপনাদের পাশে শিক্ষক ও সিনিয়রদের পাবেন।"

সহকারী অধ্যাপক জসিম খান শিক্ষার্থীদের মাদকের আসক্তি থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, "১ম বর্ষে এসেই শিক্ষার্থীরা মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে। কৌতূহলবশত এসব কাজ করা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সময় আপনারা যেভাবে কাজে লাগাবেন সেভাবেই জীবন চলবে। সুতরাং সর্বদা সতর্ক থাকবেন।" তিনি আরও বলেন, "সাবজেক্ট নিয়ে কখনোই মন খারাপ করা যাবে না। আমার মতন হয়তো অনেকেই নিজ ইচ্ছায় দর্শন সাবজেক্ট নেওনি। কিন্তু মনে রাখতে হবে তুমি দেশের অন্যতম একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। সাবজেক্ট মুখ্য পরিচয় নয়।"

সহকারী অধ্যাপক সাজিয়া আফরিন দর্শনের তাৎক্ষণিক ফল পাওয়া যায় না উল্লেখ করে বলেন, "ফিলোসোফি পড়ে তোমরা তাৎক্ষণিক কিছু ফল পাবে না। দর্শন হলো একটি থিওরিটিক্যাল সাবজেক্ট। এখানে ৫ বছর পড়লে উত্তরের চেয়ে প্রশ্ন বেশি করতে পারবে।" তিনি দর্শনের ভুল ধারণা ভাঙিয়ে বলেন, "ফিলোসোফি নিয়ে একটি মিসকনসেপ্ট হলো এটি আমাদের বাস্তব জীবনে কোনো কাজে লাগে না। ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। দর্শন আমাদের জীবন থেকে শুরু করে জগতের সকল কিছু নিয়ে আলোচনা করে। সুতরাং দর্শন না পড়লে বিষয়গুলো বুঝতে পারবে না।"

অধ্যাপক ড. জি এম তারিকুল ইসলাম দর্শনকে সবচেয়ে জীবনঘনিষ্ঠ সাবজেক্ট হিসেবে অভিহিত করে বলেন, "দার্শনিকদের সভ্যতা নির্মাণের কারিগর বলা হয়। তাদের জীবন তোমরা এখানে পড়বে।" তিনি দর্শনের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, "দর্শন একমাত্র সাবজেক্ট যেটি জ্ঞান কী, জ্ঞান কোথা থেকে এসেছে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। শুধু তা-ই নয়, বর্তমান সময়ে ফেসবুক, ইন্টারনেট ইত্যাদি সকল প্রযুক্তি বিষয়ের এথিক্স নিয়ে আলোচনা করে দর্শন।"

তিনি আরো বলেন,"বাংলাদেশের একমাত্র বাস্তববাদী বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।"

দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজুল ইসলাম দর্শনের গভীরতা ব্যাখ্যা করে বলেন, "দর্শন—শব্দটির অর্থই হচ্ছে 'জ্ঞানচর্চা', 'জগতকে দেখা ও বোঝার একটি প্রণালী'। এটি কেবল একটি শিক্ষাবিষয় নয়, বরং এটি একটি জীবনদর্শন, চিন্তার ধারা এবং আত্মসন্ধানের পথ। মানুষ যখন প্রথম আকাশের তারা দেখে বিস্ময়ে ভরে উঠেছিল, কিংবা জীবনের অর্থ খুঁজতে চেষ্টা করেছিল—সেই মুহূর্তেই দর্শনের জন্ম।"

তিনি আরও বলেন, "প্রথমত, দর্শন আমাদের চিন্তাশক্তিকে শাণিত করে। এটি প্রশ্ন করতে শেখায়—কেন আমি আছি? আমি কে? সত্য কী? ন্যায়বিচার, সৌন্দর্য বা জ্ঞান আসলে কী? এ ধরনের মৌলিক প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমরা লজিক, নৈতিকতা ও বিশ্লেষণী ক্ষমতা অর্জন করি। সমাজে যুক্তিনিষ্ঠ, মানবিক এবং গভীর মননের মানুষ তৈরি করতে হলে দর্শনের শিক্ষাই সবচেয়ে কার্যকর।" তিনি জোর দিয়ে বলেন, "দর্শন শুধু পরীক্ষায় পাস করার একটি বিষয় নয়; এটি একটি জীবনব্যবস্থা, একটি মানসিক অভ্যাস। দর্শন আমাদের যুক্তি দিতে শেখায়, সহানুভূতিশীল হতে শেখায়, এবং সবচেয়ে বড় কথা, মানুষ হিসেবে মানুষের দায়িত্ব কী—তা উপলব্ধি করতে শেখায়।"

অনুষ্ঠান শেষে নবীন শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। এছাড়াও পূর্ববর্তী ব্যাচের শিক্ষার্থীরা নতুনদের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা ও পরামর্শমূলক বক্তব্য প্রদান করেন।