দীর্ঘ দেড়যুগ ক্ষমতার বাইরে থেকেও ঝিনাইদহ-২ আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপিকে সুসংগঠিত ও সক্রিয় রাখার মূল কান্ডারী হিসেবে যে নামটি সর্বাধিক উচ্চারিত হচ্ছে, তিনি হলেন ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাডভোকেট এম. এ. মজিদ। আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে সাহসী ভূমিকা, অসংখ্য মিথ্যা মামলা ও জেল-জুলুম পেরিয়ে একদম তৃণমূলের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করা এই নেতার বিরুদ্ধে হঠাৎ করে একটি চিঠিকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।
বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, সম্প্রতি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত একটি চিঠির অপব্যাখ্যা দিয়ে গণঅধিকার পরিষদের এই নেতা ঝিনাইদহ-২ আসনে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন, যা একদিকে যেমন বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, তেমনি দীর্ঘদিন দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ কর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
চিঠিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলের নেতারা যেন তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারেন, তার জন্য জেলা বিএনপিকে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে। অথচ গণঅধিকার পরিষদের নেতা রাশেদ খান ও তার অনুসারীরা সেই চিঠিকে মনোনয়নপত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন এমন অভিযোগ তৃণমূল নেতাদের।
ঝিনাইদহ-২ আসনের স্থানীয় একাধিক বিএনপি নেতাকর্মী বলেন, “এই আসনে রাশেদ খানের তো ভোট ব্যাংকই নেই। এলাকায় তাদের কোনও সাংগঠনিক কাঠামো নেই। অথচ তারা এখন মনোনয়ন পাওয়ার মতো করে প্রচার করছে। এটা স্পষ্টতই চক্রান্ত।”
তারা আরও বলেন, “দলীয় সিদ্ধান্তে যদি সহায়তা করতে হয়—আমরা করি। কিন্তু ত্যাগী নেতাকে বাদ দিয়ে বাইরে থেকে কাউকে চাপিয়ে দিলে তা মানা হবে না।”
অদম্য সাহস, মেধা ও আদর্শিক রাজনীতির ধারক এ্যাড. এম. এ. মজিদ বিএনপির ছাত্ররাজনীতি দিয়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন ১৯৮১ সালে। একে একে জেলা ছাত্রদল, যুবদল, উপজেলা বিএনপি ও পরে জেলা বিএনপির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ওয়ান-ইলেভেন, শেখ হাসিনার দুঃশাসনের সময় এবং সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানে সাহসিকতার সঙ্গে রাজপথে থেকেছেন। হামলা-মামলা ও জেলজুলুমের ভয় উপেক্ষা করে কর্মীদের পাশে থাকাই তাকে তৃণমূলের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
তিনি বলেন, “চিঠির বিষয়টি আমি দলীয় সূত্রে জানতে পেরেছি। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটা নির্বাচনসংক্রান্ত নয়, বরং একটি সাংগঠনিক সহায়তার কথা বলা হয়েছে যাতে জোট শরিকদের সঙ্গে মনোমালিন্য না হয়। আমি সে অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি।”
তিনি আরও বলেন, “কিন্তু যদি কেউ এই চিঠিকে মনোনয়নের ইঙ্গিত হিসেবে ব্যবহার করে বিভ্রান্তি ছড়ায়, তাহলে তা দলের ক্ষতি করবে। যারা বছরের পর বছর দুঃসময় উপেক্ষা করে রাজপথে থেকেছে, তাদের বাদ দিয়ে মনোনয়ন দিলে তৃণমূলে ভাঙন দেখা দিতে পারে।”
স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের মতে, গণঅধিকার পরিষদের যেকোনো নেতা ঝিনাইদহ-২ আসনে জনভিত্তিহীন। একাধিক ইউনিয়নের দলীয় কর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, “এখানে রাশেদ খানের নামে পোস্টার লাগানোর লোক নেই। যারা আছে, তারা বিএনপির নাম ভাঙিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।”
ঝিনাইদহ শহরের এক বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “দলের দুঃসময়ে যে নেতা কর্মীদের পাশে থাকে, তাকেই প্রার্থী করতে হবে। জনবিচ্ছিন্ন কাউকে মনোনয়ন দিলে তা বিএনপির জন্য আত্মঘাতী হবে।”
বিভ্রান্তিমূলক চিঠি নিয়ে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী স্পষ্ট গণমাধ্যমে বলেছেন, “এটি মনোনয়ন নয়। সাংগঠনিক সহায়তার জন্য দেওয়া হয়েছে। কেউ যদি এ চিঠিকে মনোনয়নের দলিল হিসেবে ব্যবহার করে, সেটা ভুল।”
জনসাধারণ ও বিএনপি'র নেতাকর্মীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ঝিনাইদহ-২ আসনে আমাদের নেতা একজনই এ্যাড. এম. এ. মজিদ। তাকে বাদ দিয়ে কাউকে চাপিয়ে দেওয়া হলে শুধু আমরা নয়, সাধারণ জনগণও তা মেনে নেবে না।”
তারা আরও বলেন, “১৬ বছর জেল-জুলুম সহ্য করার পর আজ যখন আন্দোলনের ফসল ঘরে তোলার সময় এসেছে, তখন হঠাৎ উড়ে এসে বসন্তের কোকিলদের জায়গা দেওয়া হলে তা হবে তৃণমূলের সঙ্গে প্রতারণা।”
এই প্রেক্ষাপটে জনবিচ্ছিন্ন এবং রাজনৈতিকভাবে অপরিচিত কাউকে দিয়ে এলাকাভিত্তিক সংগঠনকে বিভ্রান্তিতে ফেলাটা শুধু অপ্রয়োজনীয় নয়, দলীয় ঐক্যের জন্যও হুমকি। তাই তৃণমূল নেতাকর্মীরা স্পষ্টভাবে বলছেন—তাদের নেতা এ্যাড. এম. এ. মজিদ, অন্য কেউ নয়। তবে বিএনপির ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত কী হবে তা নিয়ে অপেক্ষায় এলাকাবাসী ও তৃণমূল।