পেঁয়াজের রাজধানী খেত ফরিদপুরে পেঁয়াজের দামের ধস নেমেছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে প্রতি মন পেঁয়াজের দাম কমেছে প্রকার ভেদে প্রায় ২০০ থেকে ৪০০ টাকা। উৎপাদন ও সংরক্ষণের খরচের তুলনায় বাজারে পেঁয়াজের দাম কম হওয়ায় লোকশান গুনতে হবে এবছর পেঁয়াজ চাষীদের।
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় পেঁয়াজের হাটের জন্য বিখ্যাত, ভাঙ্গা বাজারের পেঁয়াজ হাটে সারোজমিনে দেখা যায়, সপ্তাহে দুই দিন শুক্র ও সোমবার হাট বসে। মধ্য রাত থেকে শুরু করে পরদিন বিকাল পর্যন্ত পেঁয়াজ বেচাকেনা চলে। এ হাটে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি দূরদূরান্ত থেকে আসে শত শত পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ কিনতে। প্রতি সপ্তাহে শত শত গাড়ি পেঁয়াজ কিনে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলায় নিয়ে যায় ব্যবসায়ীরা।
ভাঙ্গা পেঁয়াজ হাটের ইজারাদার আইয়ুব শেখ (৫৭) বলেন, দীর্ঘদিন যাবত আমি এই পেঁয়াজ হাতের সাথে সম্পৃক্ত। এই সময় পেঁয়াজের কম দাম আগে তেমন দেখিনি। ঈদের আগে পেঁয়াজের দাম মোটামুটি ভালো ছিল কিন্তু ঈদের পর থেকে পেঁয়াজের দাম কমতে কমতে প্রকারভেদে ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকায় নেমেছে। শুধু ভাঙ্গা বাজার হাটেই নয় পার্শ্ববর্তী নগরকান্দা, সালতা সহ ফরিদপুর জেলায় প্রায় সব জায়গায়ই পেঁয়াজের দাম কম। এরকম দাম কমলে কৃষকদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
চাষিরা জানান, এ বছর পেঁয়াজ উৎপাদনে ব্যয় বাড়লেও সেই তুলনায় দাম বাড়েনি। শুরু থেকে লোকসান গুনতে হচ্ছে আমাদের।ভাঙ্গা বাজার হাটে পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা কৃষক তৈয়াব মুন্সি (৪৫) জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবছর পেঁয়াজের আবাদ ভালো হয়েছে। পেঁয়াজ উৎপাদন খরচ ও পেঁয়াজ সংরক্ষণের ঘাটতি মিলিয়ে প্রতিমণ পেঁয়াজের যে খরচ চাষিদের হয়, সেই তুলনায় বর্তমান বাজারে দাম অনেক কম। আজকে ভাঙ্গা বাজার হাটে প্রতিমণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রকারভেদে ১৪০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা দরে। এতে প্রতিটি চাষির লোকসান গুনতে হচ্ছে এবং হতাশ হয়ে পেঁয়াজ চাষাবাদের আগ্রহ কমতেছে। পেঁয়াজ যদি ২৫০০ টাকার আশেপাশে দাম হয় তাহলে চাষিরা লাভবান হতো।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছরে এ জেলায় ৩৬১৪০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছিল। লক্ষ্যমাত্র বিপরীতে অর্জিত হয়েছে প্রায় ৪১০০০ হেক্টর অর্থাৎ প্রায় ৫০০০ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে বেশি পেঁয়াজের চাষাবাদ হয়েছে।
ভাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল-মামুন দৈনিক 'সংবাদ সারাবেলা'কে বলেন, চলতি বছরে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২৯১৫ হেক্টর জমিতে তার বিপরীতে ৩১৩৩ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। অর্থাৎ পেঁয়াজের আবাদ এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। কৃষি পণ্যের দাম অস্থিতিশীল। কয়েকদিন বৃষ্টি ছিল এরপর বাজারে পেঁয়াজের আমদানি বেশি হওয়ার কারণ এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা পেঁয়াজের ভালো ফলন পেয়েছে তাই মজুদকৃত পেঁয়াজ কমলে আশাকরি পেঁয়াজের দাম আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পাবে।