কিশোরগঞ্জের ভৈরবে কলেজ কর্তৃপক্ষে গাফিলতিতে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি মারজিয়া। তবে পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারায় এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানালেন স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ।
জানা যায়, ভৈরব উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের বাঁশগাড়ি গ্রামে অবস্থিত জেড. রহমান প্রিমিয়ার ব্যাংক স্কুল এন্ড কলেজের ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন মারজিয়া বেগম।
নিয়ম অনুযায়ী এইচএসসি পরীক্ষার পূর্বে ফরম পূরনের জন্য অফিসে ২৫০০ টাকা জমা দেয় মারজিয়া। পরবর্তীতে কলেজের বিদায় অনুষ্ঠান শেষে পরীক্ষার আগে প্রবেশপত্র আনতে গিয়ে জানতে পারেন তার এডমিট কার্ড আসেনি । পরে কলেজ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করা হলে তারা বোর্ড থেকে এডমিট কার্ড এনে দেয়ার ব্যবস্থা করবেন । পরবর্তীতে কলেজের অফিস সহকারি মো. শফিকের সাথে বারবার যোগাযোগ করলেও তিনি পরীক্ষার আগে প্রবেশপত্র দিবেন বলে মারজিয়াকে আশ্বস্থ করেন। কিন্তু সর্বশেষ তাকে প্রবেশপত্র না দিয়ে পরীক্ষার আগের দিন জানানো হয়, কলেজের ফরম পূরণে ভুলের কারণে তার প্রবেশ পত্র হয়নি।
এবিষয়ে ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থী মারজিয়া জানান, এইচএসসির ফরম পূরণের জন্য নির্ধারিত সময়ে ফি প্রদান করার পরেও আমি প্রবেশপত্র না পেয়ে আজকের বাংলা ১ম পত্র পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে পারিনি। জীবন থেকে আমার একটি বছর ঝরে গেল। অথচ আমি টেস্ট পরীক্ষায় ৪.০৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলাম। ফাইনাল পরীক্ষার জন্য আমার প্রস্তুতি আরো ভালো ছিল। সামনে আমার একটি ভালো ফলাফল আসতে পারতো। হয়তো আমি জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হতাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষের চরম গাফিলতির কারণে আমার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। আমাকে ও আমার পরিবারকে সান্তনা দেওয়ার জন্য কলেজ থেকে প্রধান শিক্ষকসহ ৬/৭জন শিক্ষক আমার বাড়ি এসে আমাকে আগামী বছর বিনা ফি-তে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দিবেন বলে আশ্বস্থ করেন।
শিক্ষার্থী মারজিয়ার বাবা স্বপন মিয়া বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষের ভূলের কারণে এইচএসসি পরীক্ষার এডমিট কার্ড না পাওয়ায় আমার মেয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি। আমার মেয়ের ফরম পূরণ বাতিল হওয়ায় কলেজের শিক্ষকরা আমার বাড়িতে এসে ভুল স্বীকার করায় তাদের সম্মানের কথা চিন্তা করে আমি আইনগত ব্যবস্থা নিই নি।
এই ঘটনায় কলেজের অফিস সহকারি মো.শফিক জানান, ফরম পূরনের সময় ভুল বশত ‘ডাবল ক্লিক’ করায় মারজিয়ার ফরমটি বাতিল হয়ে যায়। সেজন্যই তার এডমিট কার্ড আসেনি। এটি আমাদের ভূলের কারণেই সে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি।
এ বিষয়ে জেড. রহমান প্রিমিয়ার ব্যাংক স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ শরীফ আহমেদ জানান, এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে গিয়ে অফিস সহকারি কম্পিউটারে ডাবল ক্লিক করায় ফরমটি বাতিল বাতিল হয়ে যায়। যার কারণে আমরা শিক্ষা বোর্ডে একাধিককবার যোগাযোগ করেও বিষয়টির সমাধান করতে পারেনি। যার ফলে মারজিয়া এবারের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। এই ঘটনার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ দায়ী।
ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শবনম শারমিন জানান, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী যদি লিখিত অভিযোগ করেন তাহলে কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস.এম কামাল উদ্দিন হায়দার মুঠোফোনে জানান, এডমিট কার্ড যখন বোর্ড থেকে প্রদান করা হয় সে সময় সাথে সাথে পরীক্ষার্থীদের মাঝে এডমিটকার্ড বিতরণ করা হলে এরমধ্যে যদি কারো এডমিটকার্ড না আসে বা ভুল থাকে তাহলে সাথে সংশোধনের সুযোগ থাকে। এছাড়াও তিনি আরো জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এডমিটকার্ড নিয়ে সাথে সাথে বিতরণ না করে পরীক্ষার একদিন আগে শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করে থাকে। যার ফলে এডমিট কার্ড সংক্রান্ত কোনো ভুল হলে সংশোধনের সুযোগ থাকে না। তবে মারজিয়ার এডমিটকার্ড না হওয়ার বিষয়টি নিয়ে অফিস সহকারি আমার সাথে কোনো যোগাযোগ করেননি বলে তিনি জানান।