এক সময় নৌকা কিংবা বোট দিয়ে যাতায়াত করতে হত বলিবাজার, থানচি বাজার, স্কুল কলেজ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য হাসপাতাল।
অথবা নদীর পথ দিয়ে ঘুরে মুল শহরে আসতে কমপক্ষে ঘন্টার খানিক লাগত। বর্তমানে নবনির্মিত সংযোগ সেতুর মাধ্যমে মাত্র ৮-১০ মিনিটেই মুল শহরে মানুষ যাতায়াত করতে পারছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড অর্থায়নে নির্মিত নতুন এই সেতুর মাধ্যমে যোগাযোগ, চিকিৎসা সেবা, শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সেতুটির কাজ প্রায় শেষ হয়েছে, বর্তমানে নির্মাণ কাজের নিয়ম অনুযায়ী ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলেও শুরু হয়েছে সাধারন মানুষের যাতায়াত ও চলছে ছোট খাট যানবাহন। এই সেতু নির্মিত হওয়ায় খুশি এলাকাবাসী। আর এই সেতু পাল্টে দিয়েছে কয়েকহাজার মানুষের জীবন ব্যবস্থা।
থানচি উপজেলার বলিপাড়া ইউনিয়নের বাজার এলাকায় শঙ্খ নদীর খালের উপর নবনির্মিত সংযোগ সেতু পাল্টে দিচ্ছে ১২টি গ্রামের দূর্গম এলাকায় বসবাসরত সাধারন মানুষের জীবন ব্যবস্থা। পাচউবি অর্থায়নে ২০১৯ সালে শুরু হওয়া এই সংযোগ সেতুটির চলতি বছরে কাজ শেষ হয়েছে। খুব সহসাই এই সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর উন্মুক্ত করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা।
বলিবাজার নদীর ওপারে ১২টি গ্রামের প্রায় ৭ হাজার মানুষের বসববাস। সেখানে অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল। ব্রিজ হওয়ার আগে ওই এলাকার মানুষ নৌকায় নদীর পারাপার হয়ে কৃষিপণ্য বাজারজাত করত। ভারী বৃষ্টি হলে খালের পানি বেড়ে যাওয়াই পারাপারের নানা অসুবিধার বেগ পোহাতে হত। বঞ্চিত হত নায্যমূল্যে কৃষিপন্য,পঁচে যেত নিজ জমিতে উৎপাদিত ফসল ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে পিছিয়ে থাকত হাজারখানেক মানুষ। কিন্তু এখন নির্মাণ শেষে সংযোগ সেতুটি চালু হলে হাজারো মানুষের যোগযোগ ব্যবস্থা অনেক সহজ হবে। পাশাপাশি প্রত্যন্ত এলাকায় থাকা মানুষ তাদের চিকিৎসা সেবাও পাবে খুব সহজে এবং প্রসারিত হবে এলাকার ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নয়ন। এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড তথ্য মতে, ২০১৯- ২০ অর্থ বছরে বলিপাড়া ইউনিয়নের বাজার এলাকার সাঙ্গু নদীর উপর সাড়ে ১৮০ মিটারের পিসি গার্ডার ও ৭০ মিটার আর সিসি রাস্তাসহ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। মেজবাহ এন্টারপ্রাইজ স্বত্বাধিকারী ঠিকাদার পলাতক সাবেক আ.লীগ নেতা অমল কান্তি দাশ এই সেতুটি বাস্তবায়ন করেছেন। যার প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ কোটি টাকা। চলতি বছরে সেতুটি নির্মাণ শেষ হয়েছে শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষায়। আর দীর্ঘতম এই সেতুর মুল নক্সাকার পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আব্দুল আজিজ।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, এই ব্রিজটি হওয়ার আগে শঙ্খ নদীতে নৌকা দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ পারাপার করত। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় নানা আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে পিছিয়ে থাকত ওই এলাকাবাসিন্দারা। দূর্গম পথ হওয়াতে নিজ বাগানে চাষকৃত কৃষিপণ্যের বাজারজাত করতে না পেরে সেখানে পড়ে নষ্ট হয়ে যেত। কিন্তু এখন ব্রিজের কাজ শেষ হওয়াতে নিমিষে ওপার থেকে ব্রিজের হয়ে সহজেই কৃষিপণ্যে বাজারজাত করতে পারছে। আর তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে সবচেয়ে দৃশ্যমান বলিবাজার সাঙ্গু নদীর উপর নবনির্মিত গার্ডার ব্রিজ।
বলিপাড়া বাসিন্দা শৈহ্লা, মংথোয়াই শৈসহ অনেকে জানান, ব্রিজটি এলাকাবাসীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই ব্রিজ পাওয়াতেই প্রায় ১২টি গ্রামের মানুষের আমুল পরিবর্তন ঘটবে। কৃষি থেকে শুরু করে প্রতিটি জিনিসের নায্যমূল্যে পাবে। ব্রিজের না থাকার আগে নৌকা দিয়ে পারাপার করতাম। কষ্ট যেমন ছিল তেমনি দুর্ভোগ শেষ ছিলনা। এখন ব্রিজটি পেয়ে এলাকাবাসীরা খুবই আনন্দিত।
বলিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান জিয়া অং মারমা বলেন, ব্রীজ না হওয়ার আগে হাজার মানুষ নৌকা দিয়ে পারাপার হত। বর্ষায় নদীতে পানি বেশি হলে যেতেও পারতাম না। আর এখন ব্রীজ হওয়ার এক পাড়া থেকে অন্য পাড়ায় দ্রুত যেতে পারছি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বান্দরবান ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী ইয়াছির বীন আরাফাত বলেন, থানচি উপজেলা বলিপাড়া সাঙ্গু নদীর উপরে গার্ডার ব্রীজের কাজ শেষ হয়েছে। যেকোন সময় এ ব্রীজটি উদ্ধোধন করা হবে। এ ব্রিজের কারণে এলাকার সবধরনের পন্য আনা নেওয়া ও যোগাযোগ ব্যবস্থা আমুল পরিবর্তন ঘটবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।