× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

হাওর খনন দাবী মৎসজীবীদের

ঘাটের বাজারে দেখা নেই রাণী‘র,নানা সংকটে কমছে দেশীয় মাছ

মো: আব্দুল কাইয়ুম,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি।

৩০ জুন ২০২৫, ১৬:৪৮ পিএম

ছবিঃ সংবাদ সারাবেলা।

আশির দশকে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নের হাজীপুর বাজার থেকে কিছুটা দূরে মৎসজীবীদের উদ্যেগে বৃহত্তর হাইল হাওরের মৎস ভান্ডার ঘিরে গড়ে উঠে ঘাটের বাজার। সম্ভবত হাইল হাওরের তীর ঘেঁসে গড়ে উঠার কারণেই বাজারটির এমন নামকরণ।

হাওরের জেলেদের সংগ্রহ করা দেশীয় নানা প্রজাতির মাছ নিয়ে এই হাটে আসেন জেলেরা। এটি ভোরবেলার পাইকারি মাছ বেচা-কেনার একটি সমৃদ্ধ হাট হিসেবেও এই অঞ্চলের মানুষের কাছে পরিচিত। চারিদিকে ডানামেলা বিশাল বটবৃক্ষ ঘিরে বাজারটির অবস্থান।  

প্রতিদিন ভোর হতেই শুরু হয় ঘাটের হাটের কর্মব্যস্ততা। সকাল সাতটা থেকে হাইল হাওরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাতভর জেলেরা মাছ শিকার করে বিক্রির জন্য টমটম,অটোরিকশা সহ নানা ধরণের যানবাহনে করে হাটে আসতে শুরু করেন। তবে তার আগেই হাটে আসেন হাটের আড়ৎদার সহ ক্রেতারাও। সকাল ৮টা বাজতেই জেলে, আড়ৎদার ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভীড় শুরু হয় আর চলে ধুম বেচাকেনার জমজমাট আসর।

সাধারণত এই হাটে আড়ৎদারদের মাধ্যমে নিলামে বিক্রি হয় মাছ। আড়ৎদার নির্দিষ্ট দাম হাঁকেন। তারপর একেক জন ক্রেতা একেক রকম দাম বলতে থাকেন। সবশেষে সর্বো”চ দাম যিনি বলেন মূলত ডাকের মাছটি তাঁর ভাগ্যেই জুটে। এভাবে ক্রেতারা নিলামের মাধ্যমে মাছ সংগ্রহ করে সেই মাছ নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন গ্রাম,পাড়া, মহল্লা ছাড়াও হাইল হাওরের মাছগুলো পৌঁছে যায় বহু দূরের হাটে। এভাবে প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘন্টাব্যাপী চলে হাটের জমজমাট বেচাকেনা। এর পর ধিরে ধিরে ক্ষণিকের বেচাকেনার এই পাইকারী হাটটিতে কমতে থাকে মানুষের পদচারণা। নিস্তব্ধ হয়ে উঠে ঘাটের বাজার। তবে মানুষ শুণ্য হলেও ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে ডানামেলা বট গাছটি। তবে সময়ের পালাবদলে ঐতিহ্যবাহী হাটটি দেশীয় মাছের সংকটের কারণে জৌলুস হারাতে বসেছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শুষ্ক মৌসুমে এই হাটে বোয়াল, শোল, কাতলা সহ বড় বড় মাছ বেশি উঠলেও এখন বর্ষা মৌসুম হওায়ায় হাটে বেশিরভাগই দেখা গেছে ছোট পুটি, দেশী ছোট চিঙড়ি, কৈ, শিং, চ্যাং, মাগুর, টেংরা, ছোট বাইম ও ভেড়া মাছ। তবে এই হাওরে ছোট চান্দু মাছ পাওয়া গেলেও হাটের নিলামে দেখা মেলেনি চান্দু মাছের। কেন এভাবে বিলুপ্ত হ”েছ দেশী মাছ তার কারণ হিসেবে জানা গেছে, হাওর জুড়ে ফিসারীর রাজত্ব,অবৈধ কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ শিকার,নাব্যতা সংকট আর রাতের বেলা বৈদ্যুতিক সর্ট দিয়ে চোরাকারবারীদের মাছ শিকার, অবাধে পোনা মাছ নিধন, খাল বিল ভরাট হওয়া এবং শুষ্ক মৌসুমে হাওরের বিলগুলো সেচ দিয়ে মাছ শিকার করার কারণেই দিনদিন কমছে হাওরের দেশীয় মাছ। এভাবেই প্রায় ১০ হাজার হেক্টর আয়তনের বিশাল হ্ওারের সমৃদ্ধ মৎস ভাণ্ডার থেকে হারিয়ে যা”েছ একে একে অনেক দেশীয় মাছ। আর সেই ¯’ান দখলে নি”েছ ফিসারীর মাছ।

এক সময় হাওর আর পাহাড়-প্রকৃতি কেন্দ্রিক এই জনপদের মানুষের কাছে ঘাটের বাজারের কদর ছিলো অনেক। কারণ এই হাটে দেখা মিলতো সোনালী আর কালো ডোরার সংমিশ্রনে শখের রাণী মাছ। এক সময় হাইল হাওরে প্রচুর দেখা মিলতো রাণী মাছের। শুধু রাণী না,বিলুপ্ত তালিকায় যুক্ত হয়েছে। আরো অনেক দেশীয় মাছ। এখন এই অঞ্চলের মানুষের কাছে রাণী এক রূপ কথার গল্প,যা গল্পেই আছে বাস্তবে নেই।

ঘাটের বাজারে মাছ কিনতে এসেছেন কালাপুর ইউনিয়নের রহিমনগর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল জলিল। তিনি বলেন, সকালবেলা এসেছি হাওরের মাছ কেনার জন্য। আগে মাছে বেশি উঠত। মাছও ছিল বেশি। এখন ওষধ, কারেন্ট জাল সহ নানা যন্ত্রপাতি দিয়ে মাছ ধরার কারণে মাছ পাওয়া যায়না।

হাজীপুর গ্রামের বাসিন্দা খালেদ আহমদ বলেন, আগে এ বাজারে হাওরের অনেক মাছ পাওয়া যেত। এখন দিনদিন মাছ কমছে। তার কারণ চর্থুরদিকে ফিসারি হ”েছ,এতে কমছে হাওরের আয়তন। বিস্তার হ”েছনা মাছের বংশ।

বাজারের আড়ৎদার নজব আলী বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ আসে এই বাজারে প্রাকৃতিকভাবে হাওরের মাছ কেনার জন্য। এই বাজারটি ঐতিহ্যবাহী বাজার। এখন মাছ কম। হাইল হাওর খনন করতে হবে। কারন চারিদিকে বর্জের কারণে হাওর ভরাট হয়েগেছে। হাওর খনন হলে মাছ ডিম ছাড়বে,বংশ বিস্তার হবে। মাছের চাষ হবে।

উল্লেখ্য: হাইল হাওর মৌলভীবাজার জেলা সদও, শ্রীমঙ্গল ও হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলা জুড়ে বিস্তৃত। এই হাওরে রয়েছে ১৪ টি বিল এবং পানি নিস্কাশনের ১৩ টি নালা। হাওরটির মোট আয়তন ১০ হাজার হেক্টর। যার ৪ হাজার হেক্টর প্লাবন ভূমি, ৪ হাজার ৫১৭ হেক্টর হাওর, ১ হাজার ৪০০ হেক্টর বিল, ৪০ হেক্টর খাল এবং ৫০ হেক্টর নদী।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.