× প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিশ্ব রাজনীতি খেলা বিনোদন বাণিজ্য লাইফ স্টাইল ভিডিও সকল বিভাগ
ছবি ভিডিও লাইভ লেখক আর্কাইভ

মনুষ্যত্বের শিক্ষাটাই চরম শিক্ষা,এই চেতনায় নজরুল কলেজ বাংলা বিভাগের শিক্ষাসফর

বিপ্লব শেখ, কবি নজরুল কলেজ প্রতিনিধি

৩০ জুন ২০২৫, ১৬:৫২ পিএম

ছবিঃ সংগৃহীত।

পাঠ্যবইয়ের নির্দিষ্ট জ্ঞানের গণ্ডি পেরিয়ে বাংলার প্রকৃতি ও বাইরের জগৎকে আরও গভীরভাবে জানার সুযোগ করে দেয় শিক্ষাসফর। এই সৃজনশীল জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীরা খুব উৎসবমুখর পরিবেশে পেয়ে থাকে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অমর বাণী “মনুষ্যত্বের শিক্ষাটাই চরম শিক্ষা আর সমস্তই তার অধীন”এই ভাবনাকে কেন্দ্র করে এবারের আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। 

শিক্ষাসফর শিক্ষার্থীদের দলগতভাবে কাজ করার মানসিকতা গড়ে তুলতে সহায়তা করে। যা শুধুমাত্র একটি আনন্দময় ভ্রমণ নয়, বরং এটি একটি কার্যকর শিক্ষণপ্রক্রিয়াও বটে।

রবিবার (২৯ জুন) কবি নজরুল সরকারি কলেজ বাংলা বিভাগের উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অবস্থিত জলসিঁড়ি সেন্ট্রাল পার্কে একদিনের শিক্ষাসফর অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে ৭টায় কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে সাভার পরিবহনের একটি বাসে যাত্রা শুরু হয়। যাত্রা শুরু হলে মুহুর্তেই সকলের নাচ-গানে আনন্দে ভরে ওঠে পুরো বাস। 

এই উৎসবমুখর সফরে পথিমধ্যে আমাদের সফর সঙ্গী হন বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মাহমুদা আখতার। কিছুদূর যেতেই সফরে আরও নতুন মাত্রা যোগ করেন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবুল কালাম মোহাম্মদ নাজমুল হুদা, সহযোগী অধ্যাপক তাহমিনা হক এবং প্রভাষক সাকিয়া তানজিল।

মগবাজার অতিক্রমের পর সকালের নাস্তা পরিবেশন করা হয়। চলন্ত গাড়িতেই সবাই বেশ আনন্দের সঙ্গে নাস্তা সেরে ফেলে। নগরীর যানজট পেরিয়ে দেড়-দুই ঘণ্টা বাসযাত্রা করে জলসিঁড়ি সেন্ট্রাল পার্কের কাছাকাছি পৌঁছাতেই তুরাগ নদীর কালচে দূষিত জলরাশি চোখে পড়তেই মনটা বিষণ্ন হয়ে ওঠে। 

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আমাদের গন্তব্য, জলসিঁড়ি সেন্ট্রাল পার্কে পৌঁছাই। গাড়ি থেকে নেমে জনপ্রতি নির্ধারিত ২৩০ টাকা টিকিট কেটে আমরা পার্কের অভ্যন্তরে প্রবেশ করি।

পার্কে প্রবেশ করতেই সবুজ শ্যামলে ঘেরা প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য মুগ্ধ করে সকলকে। এটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অধীনে নির্মিত ঢাকার নিকটে একটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক প্রকল্প।প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ এই পার্কের অভ্যন্তরে রয়েছে বিশাল উন্মুক্ত মাঠ, শিশুদের জন্য কিডস জোন এবং নৌকা ভ্রমণের ব্যবস্থা। পার্কের চারপাশ জুড়ে রয়েছে পাঁকা রাস্তা, যার দুপাশে রয়েছে বাহারি সব ফুলের গাছ। প্রায় প্রতিটি গাছেই ফোটে রঙিন ফুল, যা পার্কের সৌন্দর্য আরও বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেছে।

পার্কটির পাঁকা রাস্তার পাশে রয়েছে বড় একটি স্বচ্ছ জলের লেক। লেকের পাড় ঘেঁষে চলা পথ ধরে কিছুটা এগোলেই চোখে পড়ে লেকের পানির ওপর নির্মিত অপূর্ব জলকুঠি, যেখানে রয়েছে বসার সুব্যবস্থা।  অনেকেই এখানে খানিকটা বিশ্রাম করে, আর বিশ্রাম শেষে এ স্থানেই জমে ওঠে গানের আসর।

গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পার্কটির অজস্র বৃক্ষের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছে কিছু মানুষ। কিছুক্ষণ বসে থাকতেই শরীর জুড়িয়ে গেল মৃদু শীতল হাওয়ায়। তবে  হঠাৎ লেকের ওপার থেকে ভেসে এলো টুং টাং এক ধরনের শব্দ। ভালো করে খেয়াল করতেই দেখা গেল, কয়েকশ  শ্রমিক ব্যস্ত বেশ কয়েকটা নতুন ভবন নির্মাণকাজে। কেউ ঢালাইয়ের কাজে ব্যস্ত কেউবা লোহার ওপর হাতুড়ি চালাচ্ছে নিরলসভাবে।

প্রকৃতির সান্নিধ্যে দিনব্যাপী এই সফর সাহিত্য আলোচনা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের মধ্য দিয়ে আমাদের  এক ভিন্নধর্মী অভিজ্ঞতা হয়। গানের আড্ডা শেষে ছেলেদের জন্য আয়োজন করা হয় বিশেষ খেলাধুলার। খেলার শুরুতে প্রত্যেকের হাতে একটি করে বেলুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বেলুন ফুলিয়ে সবাইকে একটি নির্দিষ্ট বৃত্তের মধ্যে প্রবেশ করতে বলা হয়। কে কার বেলুন আগে ফাটাতে পারে, এবং শেষ পর্যন্ত যে তিনজন টিকে থাকে, তাদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। অন্যদিকে, মেয়েদের জন্য ছিল বালিশ খেলার আয়োজন।

দুপুরের খাবারের সময় হলেই সবাই ছুটে যায় ‘ব্রু স্প্ল্যাশ’ লেকের ধারে অবস্থিত সেই রেস্টুরেন্টে। খাবার শেষে ড্রিঙ্কসের অপেক্ষায় আমরা তখন বসে আছি , রেস্টুরেন্টের অভ্যন্তরে বাজছে পিয়ানোর মৃদু সুর, আর কাঁচের জানালার ফাঁক দিয়ে দেখা যায় বাহিরের মোহিত বাংলার প্রকৃতির এক অপার সৌন্দর্য। লেকের পাড়ে ফোটে আছে অসংখ্য রঙিন ফুল, বাতাসে হেলছে দুলছে সবুজ পাতারা। মনে হয়, প্রকৃতি যেন নিজেই নিঃশব্দে আমাদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছে।

গোধূলির লালচে আভা যখন ধীরে ধীরে পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে, ঠিক সেই মুহূর্তেই শুরু হয় আমাদের সফরের সমাপনী পর্ব। বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মুহিন খান একক অভিনয়ের মাধ্যমে তুলে ধরেন তাঁতশিল্পের ঐতিহ্য ও গুরুত্ব। একে একে শুরু হয় জীবনানন্দের কবিতা আবৃত্তি ও তারপরেই পরিবেশিত হয় রবীন্দ্রসঙ্গীত ও নজরুলসঙ্গীত। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে শিক্ষকদের মধ্যে থেকে তাহমিনা হক ম্যাম গেয়ে শোনান গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের কালজয়ী গান "এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকে না তো মন"। 

কবি নজরুল কলেজে ফেরার উদ্দেশ্যে বাস ছাড়ে সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে। ফেরার পথে বাসেই অনুষ্ঠিত হয় র‍্যাফেল ড্র এবং বিভিন্ন খেলাধুলার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ।

Sangbad Sarabela

সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর

যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220

ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।

আমাদের সঙ্গে থাকুন

© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved.