ছবিঃ সংগৃহীত।
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ছড়াখালে বালুখেকোদের আগ্রাসন যেন থামছে না। জেলা প্রশাসকের ইজারার শর্ত লঙ্ঘন করে শ্যালুমেশিন বসিয়েই রাত-দিন সমানতালে দেদারসে চলছে বালু উত্তোলন।
ইতোমধ্যে চকরিয়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েকদফায় অভিযান চালানো হলেও তার কোন ধরনের তোয়াক্কা করছে না বালুখেকোরা। ফলে ছড়াখালের দুই পাড় ভেঙে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে পড়েছে। নদীতে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি। ভাঙনের কারণে উজান থেকে বালি নেমে ভরাট হচ্ছে ভাটি অঞ্চল।
সরেজমিন গেলে জানা যায়, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বালু খেকোদের বিরামহীন ধ্বংসযজ্ঞ চলেছে এ ছড়াখালটিকে ঘিরে। জেলা প্রশাসক কর্তৃক বালু মহাল ইজারার শর্ত অনুযায়ী ছড়াখাল থেকে বেলচা দিয়ে বালি উত্তোলনের জন্য ইজারা দেয়া হলেও শ্যালোমেশিন বসিয়ে নদীর পাড় বা ফসলি জমিতে পানি মারার পর পাড় ভেঙে শরবত বানিয়ে সেখান থেকে বালি উত্তোলন করে যাচ্ছে এসব বালুখেকোরা।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন- প্রতিদিন হারবাং ছড়াখাল থেকে ইজারা শর্ত লঙ্ঘন করে শতশত ট্রাক বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। সারাবছরই হারবাং ছড়াখালের পাড়ে এ ধ্বংসযজ্ঞ চলে আসলেও প্রতিকারে এগিয়ে আসছে না কেউ। ফলে পাড় ভেঙে বর্ষা মৌসুমে ছড়াখালে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি। ভারী ট্রাক চলাচলের কারণে অনেকটা বিধ্বস্ত গ্রামীণ সড়কগুলো। বালি উত্তোলনের উন্মুক্তের সুযোগ নিয়ে উন্মত্ততায় মেঠে ওঠেছে বালিখেকোরা। সংঘবদ্ধ বালিখেকোরা প্রতিদিন কয়েকশ ট্রাক বালি বিক্রি করছে। এ বালি চকরিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চল ছাড়াও যাচ্ছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা ও শহরে। আর এসব বালু খেকোদের নেতৃত্বে রয়েছে হারবাং অর্ধডজন বিএনপি নেতাকর্মী। এবিষয়ে প্রতিবেদকের সাথে কয়েকজন বিএনপি নেতার কথা হলে তারা জানান, হারবাং ছড়াখালটি জেলা প্রশাসক থেকে ইজারা নিয়ে বালি উত্তোলন করছে।
ইজারায় বিনিয়োগকৃত টাকা তুলতে শ্যালোমেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন ছাড়া আর কোন বিকল্প উপায় নেই। এদিকে, বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায়- কয়েকদিন আগেও শ্যালুমেশিন বসিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে উত্তর হারবাং এলাকার প্রয়াত বিএনপি নেতা ও হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আলমের পুত্র মোরশেদুল আলম মানিক ও একই এলাকার মাহাবুবুর রহমানের বালু মহালে অভিযান পরিচালনা করে উপজেলা প্রশাসন। এসময়, কয়েকটি শ্যালোমেশিন ও উত্তোলনকৃত বালু জব্দ করে প্রশাসন। এ অভিযানের পরেও থেমে নেই বেপরোয়া বালু উত্তোলনকারী মানিক ও মাহাবুব সিন্ডিকেট।
ফের শ্যালোমেশিন বসিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে বালু উত্তোলন। সেই সাথে জব্দকৃত বালু মহাল থেকে আইনের তোয়াক্কা না করে বিক্রি করছে তারা। অন্যদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলা প্রশাসকের ইজারার নাম ভাঙিয়ে উত্তর হারবাং থেকে যেসব জায়গায় বালু উত্তোলন করা হচ্ছে তার অধিকাংশই বনবিভাগের খতিয়ানভুক্ত জায়গা। এব্যাপারে হারবাং বনবিট কর্মকর্তা আবু সাঈদের সাথে কথা হলে তিনি জানান- জেলা প্রশাসক তাদের জায়গায় ইজারা দিলে আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু, সম্প্রতি মোরশেদুল আলম মানিক নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে আমাদের বনবিভাগের জায়গা থেকে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। এবিষয়ে তাকে কয়েকদফায় সতর্ক করা হলেও তিনি তাতে কোন ধরনের কর্ণপাত করছে না। শীঘ্রই এসব বালুর মহালে বনবিভাগের অভিযান পরিচালনা করা হবে।
বালু উত্তোলনের ব্যাপারে স্থানীয় পরিবেশবাদীরা বলেন, ‘হারবাং ছড়াখাল থেকে ব্যাপকভাবে বালি উত্তোলনের কারণে নদীর আকার ও ভৌত গঠন ব্যাপকভাবে পরিবর্তন হচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে ছড়াখালের পানির ঘোলাটেভাব। পাহাড়ের মাটি ধসে ভরাট হচ্ছে ছড়াখালটি। একই সাথে ছড়াখালের দুই পাড়ের জমি ভেঙে যাচ্ছে। সেই সাথে কমছে গভীরতাও। অপরদিকে মাছের প্রজনন ক্ষেত্রের কুম ভরাট এবং ছড়াখালের পানির ঘোলাটেভাব বেড়ে যাওয়ায় দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। তাতে মাছের প্রজনন আবাসস্থলের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। জেলা প্রশাসক কর্তৃক হারবাং ছড়াখালটি নির্দিষ্ট শর্তে ইজারা দেওয়া হলেও তার কোন কিছুই মানেনা বালু উত্তোলনকারীরা। তবে শ্রমিকদের মাধ্যমে ম্যানুয়ালি বালু তুলে পরিবহন করলে বালুর চাহিদা যেমন পূরণ হবে, তেমনি ছড়াখালটির ইকোসিস্টেমের তেমন ক্ষতি হবে না। কিন্তু, তা না মানার কারণে মরে যাচ্ছে হারবাংয়ের ছড়াখালটি।
সরেজমিন পরিদর্শনের পর প্রতিবেদক বালু উত্তোলনের বিষয়ে চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুপায়ন দেব এর কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, শ্যালোমেশিন বসিয়ে জেলা প্রশাসকের ইজারার শর্ত লঙ্ঘন করে বালু উত্তোলনের দায়ে কয়েকদিন আগেও উত্তর হারবাংয়ে অভিযান পরিচালনা করে বালু উত্তোলনের সরঞ্জাম, শ্যালুমেশিন ও বালু মহাল জব্দ করা হয়েছে। তবে, শ্যালোমেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের ব্যাপারে পূর্ব অনুমতি থাকলে তা করা যেতে পারে। কিন্তু এ বিষয়ে আমার সঠিক জানা নেই।
এবিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বললেই সঠিক উত্তর পাওয়া যাবে। এরপরও আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh