শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে নিয়মনীতি যেন শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। নির্ধারিত সময়ের বহু পরে অফিসে যোগদান, সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি ও অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাব-রেজিস্ট্রার শারমীন আক্তার এবং বহিষ্কৃত নকল নবীশ জাহাঙ্গীর আলম জনির বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, অফিস শুরুর নির্ধারিত সময় পার হলেও কর্মকর্তা অনুপস্থিত থাকেন প্রায়শই। গত রোববার বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্তও সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে উপস্থিত হননি। অফিসের দরজা বন্ধ, কাজ বন্ধ, আর সেবাগ্রহীতারা হতাশ হয়ে অপেক্ষায়। ঠিক সেই সময়ে দেখা যায়, বহিষ্কৃত নকল নবীশ জনি অফিসের এজলাসে বসে ধূমপান করছেন। অথচ তাকে ২০২৩ সালের ২৩ মার্চ স্থায়ীভাবে বরখাস্ত এবং অফিস চত্বরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল।
ভুক্তভোগীদের দাবি, সাব-কবলা দলিলের জন্য নির্ধারিত রেজিস্ট্রেশন ফি যেখানে মাত্র ৩৬০ টাকা, সেখানে জনি আদায় করছেন ২৩০০ টাকা। হেবা দলিলে এই অঙ্ক ২৯০০ টাকা পর্যন্ত। এমনকি সরকারের অবমুক্ত করা “খ” তফসিলভুক্ত জমির দলিল করতে নেওয়া হচ্ছে ২৫ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত।
এসব অনিয়মের বিষয়ে ভুক্তভোগীদের একজন বাংলাদেশ নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে লিখিত অভিযোগও জমা দিয়েছেন।
নালিতাবাড়ী সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “স্যার (সাব-রেজিস্ট্রার) সাধারণত বেলা ১১টার আগে আসেন না। জনি সাহেব অফিসে বসেই যা খুশি তাই করেন। এমনকি এজলাসে বসেই ধূমপান করেন।”
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম জনি বলেন, “আমি সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়েছিলাম। পরে ব্যাখ্যা দেওয়ার পর আমাকে পুনরায় কাজে ফেরানো হয়েছে।” তবে সরকারি রেকর্ড অনুযায়ী তিনি স্থায়ীভাবে বহিষ্কৃত।
অন্যদিকে, দুপুরে অফিসে এলে সাব-রেজিস্ট্রার শারমীন আক্তারের কাছে অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান এবং পরে একাধিকবার ফোন করা হলেও রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে জেলা রেজিস্ট্রার আনিছুর রহমান জানান, “লিখিত অভিযোগ হাতে পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, একটি গুরুত্বপূর্ণ অফিসে এ ধরনের দুর্নীতি ও শৃঙ্খলাভঙ্গ প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার জ্বলন্ত উদাহরণ। দ্রুত তদন্ত ও কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে সাধারণ মানুষ আরও বেশি হয়রানির শিকার হবে।