ছবি: সংগৃহীত
ঝিনাইদহ শহরের কেপি বসু সড়কে ঘটেছে এমন এক মৃত্যুর ঘটনা, যা স্থানীয়দের কাছে রীতিমতো রহস্যে মোড়া। রেখা বস্ত্র বিতানের মালিক সুনীল কুমার জোয়ার্দ্দারের একমাত্র ছেলে সুদীপ কুমার জোয়ার্দ্দার (৩৪) গতকাল রাতে নিজ বাড়ির একটি কক্ষে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় উদ্ধার হন।
প্রথমে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে—এটি আত্মহত্যা। কিন্তু যত সময় গড়িয়েছে, তত বেশি অস্বাভাবিক প্রশ্ন উঠে এসেছে।
সরেজমিন পরিদর্শন, প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান ও স্থানীয় সূত্রে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করলে এই মৃত্যুকে নিছক আত্মহত্যা বলে মানতে চায় না বেশিরভাগ মানুষ। রহস্যের শুরু দুটি মোবাইল ফোন। যখন সুদীপের মরদেহ হাসপাতালে আনা হয়, তখন তার পকেটে পাওয়া যায় দুটি মোবাইল ফোন।
এ প্রসঙ্গে এক দোকানদার বলেন," আত্মহত্যা করতে কেউ পকেটে মোবাইল রেখে ফাঁস লাগায়, এমন কথা কখনও শুনিনি। এটা স্পষ্টতই সাজানো ঘটনা হতে পারে।”
ময়নাতদন্তের আগে প্রাথমিক সুরতহালেই দেখা যায়, পায়ের নিচে ও পিঠে একাধিক আঘাতের দাগ। স্থানীয়রা বলছেন, আত্মহত্যার আগে কারো শরীরে এমন আঘাত থাকার কথা নয়।
এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা গৌর বাবু বলেন, "যদি আত্মহত্যাই হতো, তবে শরীরে এভাবে চিহ্ন কেন? এবং পরিবার এই প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে না।”
এই মৃত্যু যেমন আকস্মিক, তেমনি অস্বাভাবিক। তদন্তে উঠে এসেছে পারিবারিক অশান্তির দীর্ঘ ইতিহাস। সুদীপের মা প্রায় ২০ বছর পূর্বে মারা যান। বাবা সুনীল পুনরায় বিয়ে করেন। সৎ মায়ের সাথে সম্পর্ক কখনো স্বাভাবিক হয়নি। মেঝো চাচা স্বপন কুমার জোয়ার্দ্দারের সাথেও প্রায়ই ঝগড়া লেগে থাকত।
একাধিক বন্ধুবান্ধবদের দাবি—সুদীপ মানসিকভাবে চাপে ছিলেন। তবে কোনোদিন হতাশার এমন লক্ষণ প্রকাশ করেননি যাতে আত্মহত্যা করবে বলে মনে হয়।
স্থানীয় এক দোকানদার বলেন, “ও খুব ভদ্র ছেলে ছিল। সৎ মা আর চাচার সাথে ঝামেলা নতুন কিছু নয়। কিন্তু তাই বলে গলায় ফাঁস নেবে, এটা মানা যায় না।”
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, মৃত্যুর রাত সাড়ে ১১টার দিকে চাচা স্বপনের স্ত্রী প্রথম সুদীপকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান বলে দাবি। চাচা স্বপন সাংবাদিকদের জানান, “আমার স্ত্রী চিৎকার করলে সবাই ছুটে আসে। পরে ফুপা লাশ নামিয়ে আনে।” তবে পায়ে ও পিঠের আঘাতের বিষয়ে তিনি কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।
আরেকটি প্রশ্নবিদ্ধ দিক হলো—ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের মর্গে আনা হলেও বাবা সুনীল বা সৎ মাকে সেখানে দেখা যায়নি। উপস্থিত ছিলেন শুধুমাত্র দোকানের কর্মচারী, ফুপা ও আপন মায়ের পরিবারের কিছু সদস্য।
স্থানীয়দের বক্তব্য, “ছেলে মারা গেলে বাবা থাকেন না, এমন নজির সচরাচর দেখা যায় না। কিছু একটা গোপন করার চেষ্টা হচ্ছে।”
এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, পকেটে মোবাইল ফোন রেখে আত্মহত্যা—এটি কি কোনো প্রমাণ গোপন করতে সাজানো দৃশ্য? শরীরের আঘাতগুলো মৃত্যুর আগে নির্যাতনের ফল কি না? পারিবারিক কলহের জেরে হত্যা হয়েছে কি না? মৃত্যুর সময় কে কোথায় ছিলেন, তার বিস্তারিত যাচাই হচ্ছে কি?
ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল-মামুন জানান, ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিয়ে মন্তব্য করব না। তবে আমরা সব দিক থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।”
তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, “যদি প্রশাসন সঠিকভাবে তদন্ত না করে, প্রমাণ মুছে ফেলা হবে। প্রভাবশালী স্বজনরা হয়তো প্রভাব খাটাবে।”
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী আবু জাফর
যোগাযোগ: । [email protected] । বিজ্ঞাপন ও বার্তা সম্পাদক: 01894944220
ঠিকানা: বার্তা ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ : বাড়ি নম্বর-২৩৪, খাইরুন্নেসা ম্যানশন, কাঁটাবন, নিউ এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫।
© 2025 Sangbad Sarabela All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh